সাংবাদিক শিমুল হত্যায় অভিযুক্ত মেয়র আত্মগোপনে
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুলের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে আত্মগোপনে চলে যান পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হালিমুল হক মীরু।
মেয়র আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর থেকেই মেয়রের অধিকাংশ সমর্থক ও আত্মীয়-স্বজনেরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। পৌর এলাকার কোথাও তাদের দেখা যাচ্ছে ন। মেয়রের মোবাইল ফোনটিও বন্ধ। আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় মেয়রের বাড়িতে পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে শুক্রবার বিকেলে নিহত সাংবাদিক শিমুলের বাড়িতে যান সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহমেদ। এ সময় তিনি পরিবারের সদস্যদের খোঁজ খবর নেন এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন।
মেয়র হালিমুল হক মীরুর নির্যাতনের শিকার শাহজাদপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহবুব ওয়াহিদ কাজল জানান, শাহজাদপুর পৌরসভা নির্বাচনে তিনজন প্রার্থী ছিলেন। ওই সময় মিরু ও তার ভাই পিন্টু ও মিন্টু বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে পৌর এলাকার মধ্যে ভোট সন্ত্রাস চালিয়েছিলেন। তার সন্ত্রাসী বাহিনী সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুর রহিমের নির্বাচনি ক্যাম্প ভাংচুর ও সমর্থকদের মারধর করেছিল। ওই সময়ে আমিও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে হামলার শিকার হয়েছিলাম। আমি সাংবাদিক শিমুল হত্যা ও আমার সহকর্মী বিজয় মাহমুদকে মারপিটের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
নিহত শিমুলের ভাই আজাদ হোসেন এ ঘটনার জন্য দায়ী করেছেন শাহজাদপুর পৌর মেয়র হালিমুল হক মীরুকে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, সংঘর্ষের ছবি তুলতে গেলে মেয়র পরিকল্পিতভাবে শিমুলকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। আমরা মেয়র মীরু ও তার দুই ভাই পিন্টু ও মিন্টুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল হক জানান, শিমুলের মৃত্যুর সংবাদের পর থেকেই অভিযুক্ত মেয়রকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে অভিযুক্ত মেয়রকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শাহজাদপুর সার্কেল) আবুল হাসনাত জানান, অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এ বিষয়ে পৌর মেয়র হালিমুল হক মীরুর মোবাইল ফোনে বার বার ফোন করা হলেও তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
সাংবাদিক শিমুল হত্যার ঘটনায় শুক্রবার রাতে নিহত সাংবাদিক শিমুলের স্ত্রী নুরুন নাহার (৩৮) বাদী হয়ে শাহজাদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হালিমুল হক মীরু, তার ভাই মিন্টু, সাবেক কাউন্সিলর পিজুস, আওয়ামী লীগ নেতা নাসিরসহ ১৮ জনের নাম উলেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ২৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পৌর মেয়রের দুই ভাই পিন্টু ও মিন্টু আটক করেছে পুলিশ।
এর আগে শুক্রবার সকালে শাহজাদপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বিজয় মাহমুদকে মারপিটের ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা বিজয় মাহমুদের চাচা এরশাদ আলী বাদী হয়ে পৌর মেয়র ও তার ভাইদের আসামি করে আরো একটি মামলা দায়ের করেন।
উলেখ্য, শাহজাদপুরের দিলরুবা বাস টার্মিনাল থেকে উপজেলা সদর পর্যন্ত রাস্তার কাজ নিয়ে কালীবাড়ি এলাকায় শাহজাদপুর পৌর মেয়র মিরুর ছোট ভাই হাসিবুল ইসলাম পিন্টু পৌর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ভিপি রহিমের শ্যালক ছাত্রনেতা বিজয়কে বেধড়ক মারধর করে। এতে তার হাত-পা ভেঙে যায়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে দলের কর্মী-সমর্থক ও বিজয়ের মহলা কান্দাপাড়ার লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে দিলরুবা বাস টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে। এক পর্যায়ে অবরোধকারীদের একটি অংশ একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মনিরামপুর এলাকায় পৌর মেয়রের বাড়ির সামনে পৌছলে কতিপয় কয়েজন মেয়রের বাসা লক্ষ্য করে ঢিল মারে। এ সময় মেয়রের সহোদর পিন্টু ও তার সমর্থকদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গ সংঘর্ষ বাঁধে। এক পর্যায়ে মেয়র তার ব্যক্তিগত শর্টগান থেকে গুলি করলে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে দৈনিক সমকালে শাহজাদপুর উপজেলা প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম শিমুলের মাথায় ও মুখে গুলি লাগে। শুক্রবার বগুড়া থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়ার পথে দুপুরে মারা যান সাংবাদিক শিমুল। এই খবর শাহজাদপুর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তের মধ্যে মেয়র হালিমুল হক মীরু আত্মগোপনে চলে যান।
ইউসুফ দেওয়ান রাজু/এআরএস