ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

আমেজহীন লতিফ সিদ্দিকীর আসনের উপ-নির্বাচন

প্রকাশিত: ০১:০১ পিএম, ৩০ জানুয়ারি ২০১৭

টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে ৩১ জানুয়ারি। কিন্তু নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিপরীতে শক্তিশালী কোনো প্রার্থী না থাকায় আমেজহীন হয়ে পড়েছে এই উপ-নির্বাচন। এর ফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারীই বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন বলেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তবে এ নির্বাচনে যদি কাদের সিদ্দিকী থাকতেন তা হলে নির্বাচনে অন্যরকম আমেজ থাকতো। ভোটের লড়াইটাও হতো হাড্ডাহাড্ডি বলে ধারণা উপজেলাবাসীর।

এছাড়া এ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী যে দুই প্রার্থী আছেন তাদের বাড়ি কালিহাতীতে নয়। বলা চলে তারা এখানে উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও এই দুই প্রার্থীর কাউকেই ভালো মতো চিনেন না ভোটাররা। তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারীর বাড়ি কালিহাতীতে। আগে থেকেই তিনি ছিলেন রাজনীতিতে অগ্রসর। ছিলেন এ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। এর ফলে স্থানীয়রা তাকে চিনেন ভালো মতোই। এ কারণ আর দলীয় প্রতীকের কারণে ভোটের পাল্লাটাই ভারী বলেই অভিমত উপজেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাধারণ ভোটারের।
 
কালিহাতী সদরের দক্ষিণ বেতডোবার দলিল লেখক রফিকুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ করেই আমি শুনলাম আগামী ৩১ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে এই নির্বাচনে কোনো আমেজ নেই। নির্বাচনে সোহেল হাজারীর প্রতিদ্বন্দ্বী যে দুই প্রার্থী আছেন আমরা তাকে কখনো দেখিও নাই, চিনিও না। তাদের সর্ম্পকে আমাদের কোনো ধারণা নেই। আর আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে আমরা চিনি। তিনি আগে থেকেই রাজনীতি করে আসছেন। ধরতে গেলে এই উপনির্বাচন একতরফা হবে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীই নির্বাচনে জয়লাভ করবেন।   

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ ১৪ মাস নির্বাচন না হওয়ায় উন্নয়ন কাজে পিছিয়ে পরেছে কালিহাতী। এছাড়াও আটকে রয়েছে এমপি কোটার অনেক উন্নয়ন কাজের বরাদ্দ। নির্বাচনে যেই জয়লাভ করুক না কেন ওই বিজয়ী প্রার্থী যেন উপজেলার উন্নয়ন কাজ করেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এসময় তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে কারচুপি হওয়ার কোনো শঙ্কা নেই। কেননা নির্বাচনই হচ্ছে একতরফা, সেহেতু এ নির্বাচনে কেন কারচুপি করবেন ? এই একতরফা নির্বাচনের ফলে ভোটার সংখ্যা কম হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

উপজেলার মগড়া গ্রামের বাসিন্দা বিষ্ণু পাল বলেন, নির্বাচনে যদি কাদের সিদ্দিকী বা বিএনপির কোনো প্রার্থী থাকতো তাহলে নির্বাচনের মোড় যেত অন্যদিকে। তখন নির্বাচনের লড়াই জমজমাট হতো এবং কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলতো না। তখন নির্বাচনের মাঠ উত্তাপ থাকতো। সরগরম থাকতো নির্বাচনী এলাকাগুলো।

এ বিষয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মিজানুর রহমান মজনু বলেন, কাদের সিদ্দিকী থাকলে নির্বাচন ‘কনটেস্ট’ হতো। কিন্তু কাদের সিদ্দিকী জয় লাভ করতে পারতো না। আওয়ামী লীগ প্রার্থী যেভাবে প্রচার-প্রচারণা, সভা-সেমিনার ও পোস্টার লাগাচ্ছেন, কিন্তু তার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে আমরা এখন পর্যন্ত এসব কোনো কিছুই করতে দেখিনি। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রয়েছেন এগিয়ে।

তিনি আরও বলেন, এই উপ-নির্বাচনের আসন শূন্য থাকায় অনেক দিন ধরে কালিহাতীর এমপি কোটায় তেমন কোনো উন্নয়নই হয়নি। আমরা খুশি যে আগামী ৩১ জানুয়ারি এ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আবারো কালিহাতী উন্নয়নের ধারা ফিরবে। তবে যিনি নির্বাচিত হবেন তিনি যেন দলমত নির্বিশেষে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়ন কাজ করেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা। সেই সঙ্গে চাই কালিহাতীর সার্বিক উন্নয়ন।    

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনে ৩ জন প্রার্থী লড়ছেন। এরা হলেন, মোহাম্মদ হাসান ইমাম খান (সোহেল হাজারী-আওয়ামী লীগ), আতাউর রহমান খান (বিএনএফ) ও ইমরুল কায়েস (এনপিপি)। এই আসনের মোট ভোটার ৩ লাখ ৭ হাজার ৭০০ জন।

নির্বাচন প্রসঙ্গে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও টাঙ্গাইল-৪ আসনের (কালিহাতী) উপ-নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার তাজুল ইসলাম বলেন, প্রার্থীরা বিধি অনুযায়ী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী ২৯ জানুয়ারির মধ্যে রাতে প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। এসময় তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ করতে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, নিউ ইয়র্কে এক সভায় বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত এবং মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়ার পর ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের সংসদ সদস্য পদ থেকে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী পদত্যাগ করেন। এতে শূন্য হয়ে যায় ওই আসন। এই সংসদীয় আসনটি শূন্য ঘোষণা করে ওই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর গেজেট প্রকাশ করে সংসদ সচিবালয়। এ আসনে উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দেন কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। তবে ঋণ খেলাপির অভিযোগে রিটার্নিং কর্মকর্তা ২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন।

এর বিরুদ্ধে কাদের সিদ্দিকী নির্বাচন কমিশনে আপিল করলে তা ওই বছরের ১৮ অক্টোবর খারিজ হয়। এরপর প্রার্থিতা ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন তিনি। ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট কাদের সিদ্দিকীর রিট আবেদনের ওপর রায় দেন। এতে মনোনয়নপত্র বাতিল করে নির্বাচন কমিশনের দেয়া সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়। ফলে স্থগিতাদেশ উঠে যায়। তখন নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী বলেছিলেন, রায়ের পর টাঙ্গাইল-৪(কালিহাতী) আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠানে আর কোনো আইনগত বাধা থাকছে না। আর ওই উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারছেন না কাদের সিদ্দিকী। এরপর আসনটিতে ২০ মার্চ উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয় নির্বাচন কমিশন।

হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগে আবেদন করেন কাদের সিদ্দিকী। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। এর ফলে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ হারান তিনি।
 
এমএএস/জেআইএম