ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ঠাকুরগাঁওয়ে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে প্রতিবন্ধী স্কুলটি

প্রকাশিত: ০৬:৫০ এএম, ৩০ জানুয়ারি ২০১৭

“আমার ছেলেটা এখানে এসে অনেক কিছু শিখেছে। এখন সে ইশারায় কথা বলতে পারে”। কথাগুলো বলছিলেন বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধী সুমনের (১১) মা মর্জিনা বেগম। তিনি যে স্কুলকে দেখিয়ে কথাগুলো বললেন তার অবস্থান ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা মোলানী চুনিহারি এলাকায়।

ঠাকুরগাঁও উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে একতা প্রতিবন্ধী স্কুল ও পূর্ণবাসন কেন্দ্র। প্রায় ৯ বছর ধরে প্রত্যন্ত জনপদে ‘প্রতিবন্ধীদের বাতিঘর’হয়ে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে বিপদগ্রস্ত পরিবারগুলো ভরসাস্থল হিসেবে দেখে এ স্কুলকে। ব্যতিক্রমী এ স্কুলে বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা সাড়ে ৩শ।

রায়পুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী চুনিহাড়ি এলাকায় এর অবস্থান। সেখানে স্বাভাবিক শিক্ষার প্রসারেই রয়েছে নানা প্রতিকূলতা। তবু থেমে নেই প্রচেষ্টা। প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার জন্য প্রত্যন্ত এ এলাকাতে গড়ে উঠেছে এই স্কুলটি। প্রায় ৩ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের আশপাশের প্রতিবন্ধীরা এখন এ স্কুলের শিক্ষায় আলোকিত।

thakurga

১৫ জন প্রতিবন্ধী শিশু নিয়ে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আমিনুল ইসলাম নিজ উদ্যোগে ২০০৮ সালে একতা প্রতিবন্ধী স্কুল ও পূনর্বাসন কেন্দ্রটি চালু করেন। এখন এই কেন্দ্রে প্রায় ৩৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ১৬ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়ে এসকল শিক্ষার্থীদের পাঠ দান করে আসছে কর্তৃপক্ষ।

তারা বিনা পারিশ্রমিকে প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষাদান করে আসছেন। মাঝে মাঝে স্থানীয় ব্যক্তিদের যে দান সহায়তা পাওয়া যায় তা চক, ডাস্টার, পেন্সিলসহ শিক্ষা উপকরণ কিনতেই শেষ হয়ে যায়।

প্রতিবন্ধী স্কুল সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁওয়ের আশপাশের ৩ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের প্রতিবন্ধী শিশুরা এই পূনর্বাসন কেন্দ্রে লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছে। বিদ্যালয়ের পরিচালক নিজ উদ্যোগে দুটি পিকআপ গাড়ি কিনে প্রতিবন্ধী শিশুদের বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া আসা করে। তবে অনেক সময় গাড়ি বিকল হয়ে পড়লে দূরের অনেক শিক্ষার্থী নিয়মিত ক্লাসে আসতে পারে না।

thkurga

এছাড়া পরিচালক নিজ উদ্যোগে সম্প্রতি প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসার জন্য একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু করেছে। কিন্তু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পর্যাপ্ত ওষুধ না থাকায় চিকিৎসা সেবা দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।

স্কুলের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী সাবিনা ইয়াসমিন জানান, স্কুলে আসতে তার অনেক ভালো লাগে। সে পড়ালখা করে ডাক্তার হতে চায়।

একতা প্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষক গোলাম সারোয়ার বাবু বলেন, আমরা নিজ উদ্যেগে ও নিজ খরচে স্কুলটি পরিচালনা করছি। সমাজের বিত্তবান দানশীল মানুষ এবং সরকারি বেসরকারি দাতা সংস্থার সহযোগিতা পেলে একতা প্রতিবন্ধী স্কুল ও পূণর্বাসন কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হবে। আলো ছড়াবে প্রতিবন্ধী শিশুদের মাঝে, হাসি ফুটবে প্রতিবন্ধী শিশুর বাবা-মার মুখে।

আরেক শিক্ষিকা সৃষ্টি রানী জানান, এই স্কুলে অনেক দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়েছে। কিন্তু এখনো অনেক শিক্ষার্থীর ভর্তি বাকি রয়েছে। আমরা তাদেরকে ভর্তি নিতে পারছি না স্কুলের শ্রেণিকক্ষ সঙ্কটের কারণে।

এখানকার অনেক শিক্ষার্থী চলাফেরা পারে না, কথা বলতে পারে না, কিছু বোঝে না তবু কষ্ট করে হলেও আমরা তাদেরকে শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের কোনো বেতন নেই। নিজ খরচে স্কুলটি পরিচালনা করতে হচ্ছে। তাই সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।

thakurga

একতা প্রতিবন্ধী স্কুলের পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে আমাকে অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আমাদের এইখানে পুণর্বাসন কেন্দ্রে বেশি ছাত্র-ছাত্রী রাখার ব্যবস্থা নেই। আর বর্তমানে আমার নিজ বাসভবনে ৩৫ জন ছাত্র-ছাত্রীকে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমাদের স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী অনুযায়ী শ্রেণিকক্ষ, টেবিল-চেয়ার, স্কুলের সীমানা প্রাচীর অর্থের অভাবে এখনো করতে পারছি না।

তিনি আরো বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুদের পাঠদানের জন্য আমদের প্রতিষ্ঠানে কোনো প্রজেক্টর ও কম্পিউটার নেই। শিশুদের চিকিৎসার জন্য আমাদের স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র থাকলেও ডাক্তার ও ওষুধের অভাবে শিশুদের চিকিৎসা ব্যহত হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ-হাসিনা প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে নীরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। তাই আমি বিশেষভাবে অনুরোধ করছি, একতা প্রতিবন্ধী উন্নয়ন স্কুল ও পুণর্বাসন কেন্দ্রটিকে সরকারি সুযোগ সুবিধা ও শিক্ষকদের বেতন ভাতা প্রদান করলে ঠাকুরগাঁওয়ের প্রতিবন্ধী শিশুদের সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল বলেন, আমিনুল ইসলাম নিজ উদ্যেগে প্রতিবন্ধীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এটি একটি দৃষ্টান্ত। তার মত সমাজের সকল মানুষ যদি এই অসহায় প্রতিবন্ধীদের পাশে এসে দাঁড়ায় তাহলে আলোকিত হয়ে উঠবে আমাদের সমাজ। আমরা একতা প্রতিবন্ধী স্কুল ও পূণর্বাসন কেন্দ্রটিকে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি।  

এফএ/আরআইপি