ভারতের ‘কালো পানিতে’ ক্ষতিগ্রস্ত জীব বৈচিত্র
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা থেকে আসা ময়লা-আবর্জনা ও রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত ‘কালো পানির’ কারণে ধ্বংসের মুখে বাংলাদেশের পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র। পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসরত কয়েক হাজার মানুষ।
জানা যায়, আগরতলা থেকে প্রতিদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর সংলগ্ন কালন্দি খাল দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আসছে ময়লা ‘কালো পানি’। সেখানকার ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতাল, ডাইং কারখানা, চামড়া কারখানা, মেলামাইন কারখানা ও বিভিন্ন বাসা-বাড়ির সোয়ারেজ লাইনসহ বর্জ্য পানি কোন প্রকার পরিশোধন ছাড়াই আখাউড়া স্থলবন্দর সংলগ্ন কালন্দি খালে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
ফলে বছরের পর বছর ধরে আসা এ কালো পানির কারণে ধ্বংস হচ্ছে বাংলাদেশের জীব বৈচিত্র, পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন আখাউড়া উপজেলার সীমন্তববর্তী ১৫টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। কিন্তু এ ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে বহুবার অভিযোগ জানিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজিবি সদস্য জানান, বিজিরি ক্যাম্পটি কালন্দি খাল সংলগ্ন হওয়ায় বিষাক্ত পানির প্রভাবে তাদের অনেক সদস্যদের শ্বাসকষ্ট ও চুলকানির প্রকোপ বাড়ছে প্রতিদিন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাইফ উল্লাহ্ তালুকদার কালো পানির কারণে পরিবেশের বিভিন্ন ক্ষতির দিক উল্লেখ করে জানান, বিষয়টি তিনি ইতোমধ্যেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা একাধিকবার কালন্দি খাল দিয়ে কালো পানি ছাড়া বন্ধের জন্য ভারতের সাথে আলোচনা করেছি, তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের জন্য এটিপি প্লান্ট (এয়ার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট) স্থাপন করা হবে। এটপি প্লান্ট স্থাপন করা হলে বিষাক্ত এই কালো পানি আর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আসবে না।
এদিকে গত ২ ফেব্রুয়ারি সীমান্ত সম্মেলনে যোগ দিতে আগরতলায় যান বাংলাদেশের ৪ জেলার প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের ২৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল। সেই সীমান্ত সম্মেলনে আলোচনার অন্যতম একটি ইস্যু ছিল কালন্দি খাল দিয়ে বিষাক্ত এই কালো পানি ছাড়া বন্ধ করা। পরে সীমান্ত সম্মেলনে যোগদান শেষে ৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টায় আখাউড়া স্থলবন্দরে প্রতিনিধি দলটির প্রধান ও মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, কালন্দি খাল দিয়ে বিষাক্ত কালো পানি ছাড়া বন্ধের ব্যপারে ভারতের সাথে ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। অচিরেই এই সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
কিন্তু বারবার এসব ফলপ্রসু আলোচনার পরও কি কারণে বন্ধ হচ্ছে না কালো পানি আসা, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সমীন্তবর্তী এলাকায় বসবাসরত হাজারো মানুষের মনে।
এমজেড/এমএস