ঝালকাঠিতে নিয়ন্ত্রণহীন কিন্ডারগার্টেন
ঝালকাঠিতে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে গড়ে উঠছে কিন্ডারগার্টেন স্কুল। প্রি-ক্যাডেট, ইংলিশ মিডিয়াম, রেড আর্মি স্কুল ও নুরানী মাদরাসাসহ নানা চটকদার নামে জেলা শহরসহ প্রত্যন্ত এলাকায়ও প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে এসব স্কুল। স্কুলগুলোতে পড়ানো হচ্ছে অননুমোদিত মানহীন পাঠ্যবই। টিউশন ফি নির্ধারিত হচ্ছে স্কুল মালিকের ইচ্ছানুযায়ী। পাড়া-মহল্লায় অতি স্বল্প পরিসরে গড়ে ওঠা এসব স্কুল অনেক ক্ষেত্রেই শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের অন্তরায়।
ঝালকাঠি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে জেলার কিন্ডারগার্টেনের পরিসংখ্যান না থাকলেও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় ৪৮ টি কিন্ডারগার্টেন ও সমমানের বিদ্যালয় রয়েছে।
ঝালকাঠি সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, সদর উপজেলায় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল রয়েছে দুইটি এবং কিন্ডারগার্টেন ও সমমানের স্কুল রয়েছে ১২টি ।
নলছিটি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল জানান, এ উপজেলায় কিন্ডারগার্টেন সমমানের স্কুল রয়েছে ২৩ টি । রাজাপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. এবিএম রফিকুল ইসলাম জানান, উপজেলায় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল রয়েছে ১টি এবং কিন্ডারগার্টেন ও সমমানের স্কুল রয়েছে ৮টি ।
কাঠালিয়া উপজেলা (ভারপ্রাপ্ত) শিক্ষা কর্মকর্তা রিয়াজুল ইসলাম জানান, এ উপজেলায় কিন্ডারগার্টেন ও সমমানের স্কুল রয়েছে ১২টি । তবে প্রত্যেক শিক্ষা কর্মকর্তাই জানান তাদের তালিকায় নুরানি মাদরাসা অথবা নুরানি কিন্ডারগার্টেন অন্তর্ভুক্ত নেই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলায় কিন্ডারগার্টেনের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে। এসব প্রতিষ্ঠান কারা পরিচালনা করছে, প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কী, শিশু শিক্ষার্থীদের কী শেখানো হচ্ছে এবং এমনকি দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, কৃষ্টি-সংস্কৃতি ও স্বাধীনতার চেতনা পরিপন্থী কারিকুলাম পাঠদান করা হচ্ছে কিনা তাও দেখভালের কেউ নেই।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এসব প্রতিষ্ঠানের সরকারি অনুমোদন নেই। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায় এবং সরকারিভাবে তাদের বিনামূল্যের পাঠ্যবইও সরবরাহ করা হয়। নিজেদের টাকা খরচ করে প্রতিষ্ঠাতারা এসব বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকায় বর্তমানে এদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একটি নীতিমালা প্রণয়নে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রস্তাবিত এ নীতিমালায় কিন্ডারগার্টেন প্রতিষ্ঠার জন্য বেশকিছু শর্ত জুড়ে দেয়া হচ্ছে। কিন্ডারগার্টেন স্থাপনের জন্য কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ ভাড়া বা নিজস্ব জমি থাকতে হবে। ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত হতে হবে ৩০ : ১। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া কোনো বই স্কুলে পাঠ্য করা যাবে না। স্বাধীনতাবিরোধী, দেশের স্বার্থ পরিপন্থী, কৃষ্টি-সংস্কৃতির সঙ্গে বিরোধপূর্ণ কোনো বই শিশুদের পড়ানো যাবে না। ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয়ে যেসব বই পড়াবে সেগুলো অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানের এবং দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জ্যপূর্ণ হতে হবে। এসব শর্ত লঙ্ঘন করলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এ বছরের কারাদণ্ড অথবা ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অথবা উভয় দণ্ডের বিধান কার্যকর করা হবে।
ঝালকাঠি সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও সিটি কিন্ডারগার্টেনের বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর রুস্তম আলী জাগো নিউজকে বলেন, ঝালকাঠি জেলা শহরসহ প্রত্যন্ত এলাকায় অনেক কিন্ডারগার্টেন গড়ে উঠেছে। যেখানে সরকারি নিয়মনীতির কোনো তোয়াক্কা নেই। কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার কাঠামোও জানেন না। শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষায় নয় বেশিরভাগ কিন্ডারগার্টেনই গড়ে উঠেছে শুধুমাত্র শিক্ষা ব্যবসার উদ্যেশ্যে। যেখানে শিক্ষকদের শিক্ষার কোনো মান নেই।
অল্প বেতনে মোটামুটি শিক্ষিত যাকে পাচ্ছে তাকে দিয়েই পাঠদান করানো হচ্ছে। প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সঠিক কোনো পরিচালনা কমিটি নেই। কিন্ডারগার্টেন প্রতিষ্ঠা করেই স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী এক ব্যক্তিকে সভাপতি পরিচয় দিয়ে প্রতিষ্ঠাতারা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, কিন্ডারগার্টেন শব্দটির অর্থ হচ্ছে যে প্রতিষ্ঠানে শিশুদের ক্রিড়াচ্ছলে শিক্ষা দেয়া হয়। বেশিরভাগ কিন্ডারগার্টেনেই কোনো বিনোদনের সুযোগ নেই।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নিখিল চন্দ্র হালদার জাগো নিউজকে জানান, মন্ত্রণালয় থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় কিন্ডারগার্টেন ও সমমানের স্কুলগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এসব প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত নীতিমালার আওতায় আনা উচিত।
আরএআর/এমএস