তনু হত্যার বিচার কী হবে না প্রশ্ন মায়ের
দেশে অনেক চাঞ্চল্যকর ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা হয়, তাদের সাজাও হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের ঘটনায় এতো র্যাবের ফাঁসির রায় হলো অথচ তনুর খুনিরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাহলে কী তনু হত্যার বিচার হবে না। তনুর হত্যাকারীরা কী এতোটাই শক্তিশালী যে তাদের শনাক্ত করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে?
বৃহস্পতিবার মেয়ে হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে কুমিল্লার কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর মা আনোয়ারা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার বিপক্ষে না। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যে বা যারা জড়িত থাকুক না কেন, তাদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি। মেয়েটা তো আর পাব না, তবে বিচার চাই।
গত বছরের সবচেয়ে আলোচিত হত্যাকাণ্ড ছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যা ঘটনা। এ হত্যাকাণ্ডের ১০ মাস পূর্ণ হয়েছে শুক্রবার। গত ১০ মাসেও তনু হত্যার ঘাতকরা ধরা পড়েনি।
পুলিশ, ডিবির পর বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে কুমিল্লা সিআইডি। দীর্ঘ এ সময়েও হত্যা রহস্যের কোনো কুলকিনারা বের হয়নি। তবে সচেতন মহলের অভিমত, ‘ঘাতকরা ছিল তনুর পরিচিতই, তবুও অদৃশ্য কারণে সবই এখন অচেনা।’
ধীরে ধীরে এ মামলার বিচার পাওয়ার সব আশাই ক্ষীণ হয়ে আসছে। ঘাতকদের শনাক্ত করা কিংবা মামলার তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। এতে তনুর বাবা-মা ও স্বজনদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা ক্রমেই বাড়ছে।
গত বছরের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরের একটি জঙ্গল থেকে কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন।
থানা পুলিশ ও ডিবির পর গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় কুমিল্লা সিআইডি। গত বছরের মে মাসে সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে ৩ জনের শুক্রানু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। সেই সঙ্গে হত্যার আগে তনুকে ধর্ষণ করা হয়েছিল বলে তারা নিশ্চিত হয়।
কিন্তু দুই দফায় ডাক্তারদের তৈরি করা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তনুর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করতে না পারায় দেশব্যাপী আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের বিচার এখন অনিশ্চয়তার মুখে রয়েছে।
এদিকে দীর্ঘ ১০ মাসেও তনু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত বা গ্রেফতার করতে না পারা, সামরিক-বেসামরিক অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা, দুই দফা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করতে না পারা, ডিএনএ পরীক্ষায় ৩ ধর্ষণকারীর শুক্রানু পেলেও এ পর্যন্ত ডিএনএ ম্যাচ করে ঘাতকদের সনাক্ত করতে না পারায় এ মামলার ভবিষ্যৎ কিংবা বিচার পাওয়া নিয়ে তনুর পরিবার, মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন মহল সংশয় প্রকাশ করেছে।
এ নিয়ে হতাশ ও ক্ষুব্ধ তনুর পরিবার। সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), কুমিল্লার সাবেক সভাপতি ও ক্রীড়া সংগঠক বদরুল হুদা জেনু বলেন, দীর্ঘ ১০ মাসেও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন হয়নি। এটা তদন্ত সংস্থার দীর্ঘসূত্রতা। যা বিচারহীনতার সংস্কৃতি। সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এটা অন্তরায়। তবুও হতাশার মাঝেও আমরা তদন্তকারী সংস্থার নিকট আশাবাদী যেন বিচারটা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি-কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, মামলাটির তদন্ত নিজস্ব গতিতে চলছে। তাই তদন্তাধীন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
তবে নাম প্রকাশে অচ্ছিুক সিআইডির একটি সূত্র জানায়, ঘটনার পর দুই দফায় তনুর ময়নাতদন্ত নিয়ে কুমেকের ফরেনসিক বিভাগে যে নাটকীয়তা হয়েছে। সেখানেই মামলার মেরিট নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। তদন্তের পথে নানাভাবে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই হয়তো রহস্যাবৃত থেকে যাবে বহুল আলোচিত তনু হত্যাকাণ্ড।
মো. কামাল উদ্দিন/এএম/এমএস