নতুন ক্যাম্পাসে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ
দীর্ঘ আট বছরের ত্যাগ-তিতিক্ষার পর স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরু করেছে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ। কলেজের জন্য নির্মিত ছয় তলার প্রশাসনিক ভবন, ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাসের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়ে ভবন বুঝে নেয়ার পক্ষকালের মাথায় নতুন ক্যাম্পাসে রোববার সকাল থেকে প্রথম ক্লাস কার্যক্রম শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।
একই সঙ্গে চালু করা হয়েছে আবাসন ব্যবস্থাও। এ উপলক্ষে শুক্রবার থেকে প্রস্তুতি নিতে থাকে শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা। গত ২৬ ডিসেম্বর কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে সদরের ঝিলংজার জানারঘোনা এলাকায় নির্মিত ভবন হস্তান্তর করে গণপূর্ত বিভাগ।
কক্সবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. রেজাউল করিম বলেন, কলেজ রুটিন অনুসারে রোববার সকাল সাড়ে সাতটায় নতুন ভবনে ক্লাস শুরু করতে পেরে আমরা আনন্দিত। গত সাত বছর ধরে মেডিকেল কলেজটি সদর হাসপাতালের একটি ইউনিটের ভবনকে অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে ব্যবহার করে কার্যক্রম চালু রাখে।
ভবন বুঝে পাওয়ার পর নতুন বছরের শুরুতেই একাডেমিক কার্যক্রম চালু করতে কলেজের পুরোনো সরঞ্জাম স্থানান্তরসহ নতুন অনেক কিছু স্থাপন করেছি। সঙ্গে স্থানান্তর করা হয়েছে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আবাসনও।
তিনি আরো বলেন, নতুন হিসেবে অনেক কিছুই অসম্পূর্ণ রয়েছে। ধীরে ধীরেই সকল প্রয়োজন মেটানো হবে। ইতোমধ্যে শিক্ষক মিলনায়তন, দুটি আলাদা শিক্ষার্থী নিবাস, প্রসস্থ শ্রেণিকক্ষ, ল্যাবরেটরি, লাইব্রেরি, ডরমেটরি, খেলার মাঠ, শহীদ মিনার ও মসজিদসহ প্রয়োজনীয় সবকিছুই গড়ে নেয়ো হয়েছে।
কলেজ সূত্রমতে, এটি দেশের অন্যতম অত্যাধুনিক একটি মেডিকেল কলেজ হিসেবে রূপান্তর হবে। কিন্তু, এখনো এটি মেডিকেল কলেজ কাম হাসপাতাল হিসেবে চালু হচ্ছে না। তবে, অতিশিগগিরই মেডিকেল কলেজকে ঘিরে একটি ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। এটি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত প্রেকটিক্যাল ক্লাসের জন্য সদর হাসপাতালকেই এখনকার মতো ব্যবহার করা হবে।
কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১২ সালের শুরুর দিকে কক্সবাজার শহরতলির ঝিলংজা এলাকায় ৩০ দশমিক ৫৮ একর জমিতে মেডিকেল কলেজের ছয় তলার স্থায়ী ক্যাম্পাস ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ‘ডেল্টা ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি করার অনুমতি পায়।
কার্যাদেশ অনুসারে, ২০১৬ সালের জুন মাসে এই ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে প্রকল্পের কাজ শেষ হতে সময় লেগেছে অতিরিক্ত আরও ছয় মাস।
কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল আমিন মিয়া জাগো নিউজ বলেন, প্রকল্প ব্যয় ৫৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ধরা হলেও এরমধ্যে একাডেমিক ভবনের জন্য ৩৬ কোটি ৬৭ লাখ ও আবাসনের জন্য ১৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ হাতে আসে। সেটা দিয়েই নিবীড় পর্যবেক্ষণে মূল প্রশাসনিক ভবন ও দুটি হোস্টেলের অবকাঠামোগত সব কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
সম্পন্ন করা হয়েছে সীমানা দেয়াল ও বিদ্যুৎসংযোগের কাজও। ডিসেম্বরের প্রথম থেকে সৌন্দর্য বর্ধন ও নলকূপ স্থাপনের কাজ চলে। ওই মাসের শেষ সপ্তাহে হোস্টেল দুটি বুঝিয়ে দেয়া হয়।
একাডেমিক ভবনটি অফিসিয়ালি বুঝিয়ে দেয়া না হলেও ব্যবহার উপযোগী রয়েছে। এ কারণে রোবার থেকে ক্লাস শুরু করা হয়েছে বলে শুনেছি। ভালো লাগছে আমি কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ইতিহাসের সাক্ষী হতে পেরেছি।
কক্সবাজার বিএমএ সভাপতি ও সিভিল সার্জন ডা. পু চ নু জাগো নিউজকে বলেন, চিকিৎসা শিক্ষার ক্ষেত্রে নতুন বছরের উপহার হয়েছে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের নতুন ক্যাম্পাস। কলেজের সঙ্গে সংযুক্ত করে ৫০০ শয্যার একটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্মাণে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। গত বছরের শেষ সময়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম কক্সবাজারে এ হাসপাতাল নির্মাণের আগাম ঘোষণাও দিয়েছিলেন। পর্যটন নগরীর স্বাস্থ্য সেবায় এটি মাইলফলক হবে বলে আশা করা যায়।
সরেজমিন দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা খুশিমনে নিজেদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে নতুন ক্যাম্পাসে আসছেন।
কলেজের হিসাব বিভাগের প্রধান নির্বাহী হুরে জান্নাত খুকী জাগো নিউজকে জানান, ২০০৮ সালে কলেজটির যাত্রা শুরু হয়। তখন স্বল্প পরিসরের অস্থায়ী ক্যাম্পাস এবং ভাড়া বাড়িতে শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা করে অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার পর আজ স্থায়ী ক্যাম্পাসে আসতে পারা বড় সাফল্যের। প্রাথমিক যাত্রা থেকে নতুন ভবনে কলেজের সঙ্গে থাকতে পেরে একটি ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছি। তাই রুমাঞ্চিত অনুভব হচ্ছে।
কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মুহম্মদ নুরুল আলম, ডা. ফরহাদ হোসেনসহ অনেকের চোখে মুখে আনন্দের রেখা রয়েছে। পাঠদানের খাতিরে দীর্ঘদিন কলেজটির সঙ্গে থেকে নতুন যাত্রায় সামিল হতে পেরে তারাও খুশি।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ও বিএমএর সাধারণ সম্পাদক ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, কক্সবাজারে একটি অত্যাধুনিক মেডিকেল কলেজ স্থাপন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে পর্যটন নগরীর স্বাস্থ্য সেবায় বিশেষ উপহার। তার আন্তরিকতায় একটি পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল কলেজ দরিয়া নগরে স্থায়ী হওয়ায় জেলাবাসীর পক্ষ থেকে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে সাধুবাদ জানান।
এমএএস/পিআর