থমথমে সুন্দরগঞ্জ
গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহতের ঘটনায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ঘটনার পর নিজ গ্রাম সাহাবাজ (মাস্টারপাড়া), সর্বানন্দ, বামনডাঙ্গাসহ গোটা সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বস্তরের জনসাধারণের মধ্যে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
এছাড়া নিজ বাড়িতে এমন গুলিবিদ্ধের ঘটনায় হতবাক হয়েছেন বিক্ষুদ্ধ আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মী ও এলাকাবাসী। এ ঘটনায় তাদের মধ্যে আতঙ্কের সঙ্গে চাপা ক্ষোভ আর উত্তেজনা বিরাজ করছে। তবে এলাকাবাসীসহ দলীয় নেতাকর্মীর দাবি দ্রæত হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে ফাঁসি দেয়া হোক।
তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও যে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এমপি লিটনের বাড়িসহ বামনডাঙ্গা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শহরে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ। এছাড়া বিভিন্ন সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকাসহ বিভিন্ন মোড়ে পুলিশ টহল জোরদার করা হয়েছে।
অপরদিকে, সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এমপি লিটনের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনসহ আশপাশ ও দূর-দূরান্তের লোকজন ছুটে আসে। একনজরে এমপি লিটনের মরদেহ দেখেতে বাড়িতে ভিড় জমতে থাকে। সেই সঙ্গে চলে আত্মীয়-স্বজনসহ পাড়া-প্রতিবেশীর আহাজারি।
এদিকে, ঘটনার পর থেকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীসহ এলাকার লোক দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল অব্যহত রেখেছে। শনিবার রাত ১১টা পর্যন্ত তারা খণ্ডখণ্ডভাবে বিক্ষোভ মিছিল করে। এছাড়া তারা নলডাঙ্গা-বামনডাঙ্গা সড়কের বিভিন্ন এলাকায় গাছ ফেলে ও আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে।
ঘটনার পর পরেই বন্ধ হয়ে যায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শহরসহ বামনডাঙ্গা বাজার ও সকল প্রকার দোকানপাট। পরে রাত পৌনে ৮টার দিকে বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী কলেজ রোড়ে অবস্থিত এক জামায়াতর্কীর ওষুধের দোকানসহ বাড়িতে আগুন দেয়।
সুন্দরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিয়ার রহমান জানান, এমপি লিটনকে গুলি করে হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তবে কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন তাদের সনাক্ত করতে পুলিশের কয়েকটি টিম অভিযান চালাচ্ছে।
তিনি আরও জানান, রংপুর পুলিশ রেঞ্জের বিভাগীয় কমিশনার (ডিইআইজি) খন্দকার গোলাম ফারুক, রংপুর পুলিশ রেঞ্জের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার বশির আহম্মেদ, জেলা প্রশাসক আবদুস সামাদ, জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আশরাফুল আলম (বিপিএম), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) আবদুল্লাহ আল ফারুক ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ইউএনও) হাবিবুল আলমসহ পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এরআগে, শনিবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের সাহাবাজ গ্রামের নিজ বাড়িতে এমপি লিটনকে গুলি করে দুবৃত্তরা। রাত সাড়ে ৭টার দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এমপি লিটনের শ্যালক বেদারুল আহসান বেতার ও বাড়িতে থাকা এমপি লিটনের কর্মচারী জুয়েল মিয়া জানান, গত ২৯ ডিসেম্বর রাতে তিনি ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন। শনিবার বিকেলে এমপি লিটন তার বৈঠকখানার ঘরে টেলিভিশন দেখছিলেন। হঠাৎ করে মোটরসাইকেলে করে তিন যুবক এমপি লিটনের বাড়িতে আসে। ওই যুবকরা হেলমেট পড়া ছিল। একজন মোটরসাইকেলে নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। দুজন বারান্দায় এসে এমপি লিটনের অবস্থান জানতে চান। পরে তিনি ঘরে আছে বুঝতে পেরে দুই যুবক ঘরের দরজা খুলেই এলোপাথারি গুলি ছোড়ে। এরপর তারা দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়।
এমপি লিটনের মরদেহ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিম ঘরে রাখা হয়েছে। রোববার সকাল ৯টার দিকে লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হবে। এরপর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। লাশ তার গ্রামের বাড়ী সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের সাহাবাজা গ্রামের (মাস্টারপাড়ায়) কখন পৌঁছেবে তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি এমপি লিটনের স্বজনরা।
তবে লাশ কোথায় নেয়া হবে এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় কখন জানাজা হবে তা ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পাওয়ার পর রোববার সকালে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন এমপি লিটনের অপর শ্যালক সৈয়দ বদিউল কারেমীন বাদল।
জিল্লুর রহমান পলাশ/আরএআর/পিআর