ভিক্ষা নয় কাজ চায় প্রতিবন্ধী বানিছ
‘ভিক্ষা নয় কাজ চাই প্রতিবন্ধী বানিছ ভাই` এমন শ্লোগান মাইকে বলে নিজের ও পরিবারের পেট চালানোর জন্য কাজের সন্ধান করছেন প্রতিবন্ধী বানিছ। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। ভিক্ষা করে নয়; বিভিন্ন পেশায় নিজেকে নিয়োজিত রেখে দিনরাত জীবিকা অর্জন করে যাচ্ছে বানিছ। তার প্রতিদিনের কর্মকাণ্ড তাক লাগিয়ে দিয়েছে টাঙ্গাইলবাসীকে। কেও সুস্থ মানুষ হয়েও সমাজের জন্য বোঝা আবার অন্ধ হয়েও বানিছ সমাজের গর্ব।
জানা যায়, টাঙ্গাইলের সদর উপজেলার ধুলটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করা বানিছ ছয় ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। বানিছের বাবা সুতার রঙ্গের কাজ করতো। এখান থেকে যা পেত তাই দিয়ে সংসার চলতো। বানিছের মা গ্রামের মানুষের উপকারে ছুটে যেত দাইমার কাজে। ছোট বেলা থেকেই বানিছ অন্ধ।
পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় ছোট বেলাতে তার চোখের চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। দারিদ্রতার সাথে সংগ্রাম করে বিভিন্ন সমস্যার মধ্য দিয়ে সংসারে বড় হতে থাকেন তিনি। অভাবের কথা মনে করে জীবন সংগ্রামে পিছপা না হয়ে নিজেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ১৯৯৮ সালে ব্রেইলি পদ্ধতিতে এসএসসি পাশ করেন। আরও শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জনের জন্য ২০০০ সালে দেলদুয়ার সৈয়দ মহাব্বত আলী ডিগ্রি কলেজে স্কাইবার পদ্ধতিতে এইচএসসি পাশ করেন।
বর্তমানে তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তিনি চোখে না দেখলেও হাত দিয়ে নিজের অনুভুতি শক্তির মাধ্যমে টাঙ্গাইলের এতিহ্যবাহী তাঁত শিল্পের বিভিন্ন ডিজাইন তৈরি করে থাকেন ও লিং গুটাতে পারেন। তাছাড়া বেত শিল্পে রয়েছে তার শৈল্পিক হাতের নিপুণ কারুকার্য। তিনি প্লাষ্টিকের বেতের মাধ্যমে চেয়ার, টেবিল, মুরা, বক্র, কলমদানি ইত্যাদি বানাতে পারেন। তাছাড়া যেকোনো মুদ্রার টাকা চিনতে কষ্ট হয়না তার। বর্তমানে ‘স্মরলিপি’ মাইকিং অপারেটরের কাজ করছেন বানিছ।
এছাড়াও তিনি টাঙ্গাইলের প্রতিবন্ধি ‘স্বনির্ভর’ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পদে নিয়োজিত রয়েছেন। তবে বানিছের অন্যান্য প্রতিভাগুলোর মধ্যে অন্যতম তিনি মোবাইল ব্যবহার করতে পারেন। অত্র অঞ্চলের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রচার সংক্রান্ত প্রয়োজনে মাইকিং করতে হলে তাকে বিজ্ঞাপন একবার পরে শুনালেই মুখস্ত করতে পারে।
জীবন সংসারে অসহায় এই বানিছের এখন বড় চ্যালেঞ্জ তার ছেলেমেয়েকে শিক্ষিত করে প্রতিষ্ঠিত করা। সরকার, সমাজের বিত্তবান মানুষদের কাছে ভিক্ষুকের মতো হাত পেতে আর্থিক সহযোগিতা নয় বরং বানিছ চায় তার কাজের স্বীকৃতি। সে চায় তার ছেলেমেয়ে একদিন সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে দেশ ও সমাজের জন্য নিজেদেরকে নিবেদিত করবে।
এসএইচএ/বিএ/এমএস