ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

লবণ উৎপাদন শুরু হলেও নির্ধারণ করা হয়নি লক্ষ্যমাত্রা

প্রকাশিত: ১১:৩২ এএম, ০২ ডিসেম্বর ২০১৬

পরিবেশ অনুকূলে থাকায় নভেম্বরের শুরু থেকে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের সমুদ্র উপকূলীয় ৭ উপজেলায় লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে। তবে লবণ উৎপাদন শুরু হলেও এখনো লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে পারেনি বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)।

অন্যদিকে, চলতি মৌসুমে মহেশখালী ও টেকনাফে ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ সংস্কার না করায় এবং বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কারণে লবণ চাষের জমি অন্য মৌসুমের চেয়ে কমে যেতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, চলতি লবণ উৎপাদন মৌসুমে (নভেম্বর-মে) কক্সবাজার সদর, চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, টেকনাফ ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে।

সাধারণত আবহাওয়া লবণ চাষের অনুকূলে থাকলেও উৎপাদন মৌসুমে ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা গেলে চাষিরা দিনরাত খেটে লক্ষ্যমাত্রার অধিক লবণ উৎপাদন করে থাকেন।

ইতিমধ্যে কুতুবদিয়াসহ কয়েকটি এলাকায় লবণ উৎপাদন এবং বিক্রয় শুরু হয়েছে। তবে অধিকাংশ প্রান্তিক লবণ চাষি সহায় সম্বলহীন হওয়ায় মহাজনের টাকায় লবণ চাষে নেমেছেন বরাবরের মতো। তাই চলতি উৎপাদন মৌসুমে ভারত, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশ থেকে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে লবণ আমদানির পায়তারা নিয়ে তাদের মনে শঙ্কা কাজ করছে।

প্রতি বছরই এক শ্রেণির লবণ মিল মালিক সরকারকে ভুল বুঝিয়ে এ কাজটি করে থাকেন। ফলে প্রায় প্রতি বছর উৎপাদনের মাঝ পথে লবণ চাষিদের উৎসাহে ভাটা পড়ে।

কুতুবদিয়ার লবণ চাষি নেতা হাছান কুতুবী, হুমায়ূন কবির বলেন, গত বছর পর্যাপ্ত লবণ উৎপাদন ও দাম ভালো পাওয়ায় চলতি মৌসুমে প্রতি একর জমির লাগিয়ত ধরা হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা। একজন শ্রমিক নিয়োগ হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায়। সে হিসেবে একজন চাষিকে তিন কানি জমিতে পুঁজি বিনিয়োগ করতে হয়েছে প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার টাকা।

আবহাওয়া ভালো হলে ওই জমিতে উৎপাদন হতে পারে ৮ থেকে ৯০০ মণ লবণ। পুরো মৌসুমে মণ প্রতি গড়ে ৪০০ টাকা দাম না পেলে লাভের আশা অনিশ্চিত। বর্তমানে পুরাতন লবণ মণ প্রতি ৫০০ ও নতুন সাড়ে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কুতুবদিয়ার লেমশীখালী ইউপি চেয়ারম্যান আখতার হোছাইন, পোকখালী ইউপির গোমাতলী এলাকার সদস্য আলাউদ্দিন জনি ও লবণ চাষি নেতা সাইফুদ্দিন এবং ইয়াছিন উল­াহ বলেন, লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত লবণ উৎপাদন হলেও কিছু অসাধু মিলমালিক এবং সুবিধাভোগী আমলাদের কারণে গত বছরও আড়াই লাখ মেট্রিক টন লবণ আমদানি করা হয়। এবারো যদি এসব কুচক্রি মহলের ফাঁদে সরকার পা দেয় তবে কক্সবাজারের লাখো লবণ চাষি পথের ভিক্ষারিতে পরিণত হবেন।

Salt-Cultivetion

বিসিক কক্সবাজারস্থ লবণ প্রকল্প অফিস জানায়, গেল মৌসুমে কক্সবাজারের চকরিয়া-পেকুয়াসহ সাত উপজেলার উপকূলীয় এলাকার প্রায় ৬০ হাজার একর এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ৭ হাজার ২৫৬ একর জমিতে লবণ উৎপাদনে নামেন চাষিরা।

সরকারিভাবে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৮ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু প্রকৃতির বৈরি আচরণে লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। উৎপাদন হয় ১৫ দশমিক ৫৫ লাখ মেট্রিক টন। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে উৎপাদনের ঘাটতি থাকায় সরকার বিদেশ থেকে দেড় লাখ মেট্রিক টন লবণ আমদানির অনুমতি দেয় মিল মালিকদের।

কক্সবাজার সদরের প্রান্তিক লবণ চাষি কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মোর্শেদুর রহমান বলেন, ‘গেল লবণ উৎপাদন মৌসুমের শেষ দিকে বৈরি আবহাওয়ার দেখা দিলেও সরকারের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। তারপরও কোরবানির ঈদের সময় পশুর চামড়া সংরক্ষণের বাজারে পর্যাপ্ত লবণ সরবরাহের কথা বলে কিছু লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সে সুযোগে আরো কয়েক লাখ টন লবণ অতিরিক্ত আমদানি করা হয়। এতে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে ভারত ও মিয়ানমার থেকে লবণ আমদানি করতে হয়।

এ ব্যাপারে কক্সবাজরের লবণ শিল্প উন্নয়ন কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. আফসার উদ্দিন বলেন, ‘নভেম্বরের শুরু থেকে লবণ উৎপাদন শুরু হলেও এখনো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক হয়নি, তাই লক্ষ্যমাত্রা জানানোর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে।’

আন্তঃমন্ত্রণালয় লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতি বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়।

বিসিকের তথ্য মতে, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূলের অর্ধলক্ষাধিক লবণ চাষি লবণের আবাদ করেন। এসব চাষি আরো অর্ধ-লক্ষাধিক শ্রমিক লবণ চাষাবাদে নিয়োগ করে থাকেন।  

ফলে লক্ষাধিক উপকূলীয় বাসিন্দা এ লবণ চাষের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এছাড়া লবণ পরিবহন, মিলিং ও বাজারজাতকরণ পর্যন্ত ৪ থেকে ৫ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত হয়ে বছরের প্রায় ৬ মাস জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। আর এসব কর্মক্ষম লোকের আয়ের উপর নির্ভরশীল ২০ থেকে ২৫ লাখ পোষ্যের পরম প্রত্যাশা লবণ চাষ থেকে তাদের ভরণ পোষণ চলবে। আর এই প্রত্যাশার কথা ভেবে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কথায় ও কাজে আরো জনদরদি হওয়া প্রয়োজন।

এআরএ/এমএস