ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

বিলীন হয়ে যাচ্ছে কুয়াকাটার প্রাকৃতিক দৃশ্য

প্রকাশিত: ১০:১৮ এএম, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

কয়েক বছর আগেও কুয়াকাটার গঙ্গামতিসহ সমূদ্র সৈকতে ঘেঁষা গাছ পালার সবুজে গড়ে ওঠা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য মণ্ডিত দৃশ্য পর্যটকদের টেনে আনতো কুয়াকাটার বালু ভূমিতে। সবুজ বনাঞ্চলের কারণে পর্যটকদের বনের ভেতরে প্রবেশ খুবই ঝুকিপূর্ণ ছিল। সত্তুরের দশকের ভয়াবহ বন্যার ধারাবাহিকতায় উপকূলে বয়ে যাওয়া সিডর, আইলা, মহাসেনের মতো লাগামহীন প্রাকৃতিক দুর্যোগে পাল্টে গেছে কুয়াকাটার প্রাকৃতিক চিত্রপট। এ সকল দুর্যোগ থেকে জন-মানব রক্ষা পেলেও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরের গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে সবুজ বেষ্টনী।



পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, বর্ষা মৌসুমে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি এবং প্রবল ঢেউয়ে লণ্ড-ভণ্ড করে দিচ্ছে কুয়াকাটা ও গঙ্গামতি সৈকতের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। বর্ষা মৌসুম এলে প্রবল ঢেউয়ে সৈকতের বালুর স্তর প্রতিদিনই ৫/১০ ইঞ্চি পর্যন্ত নেমে যাওয়ায় গাছের কাণ্ড ভেঙ্গে পড়ছে। আবার কোনো কোনো গাছের শিকড় বের হয়ে খাদ্য সংগ্রহ করতে না পারায় মরে যাচ্ছে গেওয়া, কেওড়া, ছইলা,   নারিকেলসহ নানা প্রজাতির গাছ।

কুয়াকাটা গ্রামের শাহ আলম মৃধা বলেন, প্রায় তিন যুগ ধরে সাগরে মাছ শিকার করে আসছি। সাগরের কুল ঘেঁষা বনাঞ্চল দেখেই আমরা বলতে পারতাম সাগরের কোন জায়গায় আছি। আমাগো সবকিছু মুখস্ত ছিল। কুয়াকাটা ও গঙ্গামতি সৈকতের ভাঙনের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার কুয়াকাটাকে নিয়ে নানামুখি পদক্ষেপ নিলেও কুয়াকাটা রক্ষার জন্য কিংবা সৌন্দর্য বিকাশের  ভূমিকা অপ্রতুল।



লতা চাপলির কৃষক মোতালেব ফরাজি (৪৯) বলেন, এইতো সেদিন সাগর পাড়ে হাজার হাজার গাছ ছিল। কুয়াকাটা সৈকতের বিখ্যাত ফয়েজ মিয়ার নারিকেল বাগানে ঢুকলে আমাদের গা ছমছম করতো। এ বাগানের পশ্চিশ অংশে শাল বাগান, ঝাউ বাগান, ছইলা, কেওড়া বাগান ছিল। পশ্চিম দিকে ছিল তাল বাগান। সাগরের পাড় জুড়ে ছিল গুল্মলতায় ঘেরা। মাত্র কয়ডা বছরেই হেই বাগানগুলো সাগরে বিলীন হয়ে গেছে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াও স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিনা বাধায় বন বিভাগের নানা প্রজাতির গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে।

বন বিভাগ জানায়, ষাটের দশকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধের বাইরে গঙ্গামতি, কুয়াকাটার সৈকত লাগোয়া বালুচরে ম্যানগ্রোভ জাতের বৃক্ষের বনায়ন করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল গেওয়া, কেওড়া, ছইলা গাছ। তৎকালিন সময়ে ১১শ একর ভূমিতে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বাগান করা হয়েছিল। বন বিভাগের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, কুয়াকাটা ও গঙ্গামতি সৈকত এলাকার প্রায় ২০ হাজার গেওয়া, কেওড়া ও ছইলা গাছ বর্তমানে চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

কুয়াকাটা ডেভেলপমেন্ট সোসাইট (কেডিএস) এর নির্বাহী পরিচালক রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, সমুদ্রের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততার পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে সাগরের পার ঘেষা প্রাকৃতিক ভাবে জম্মানো বনাঞ্চল ও বন বিভাগের বাগান এখন হুমকির মুখে পড়েছে। এ ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ও সাগরে লবণাক্ত পানির স্তর বেড়ে যাওয়ায় এসব প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো বাগানের কোনো সঠিক তদারকি না থাকায় ধারাবাহিক জ্বলোচ্ছাসের ঝাপটায় মাটির স্তর ধুইয়ে নেমে যাওয়ায় প্রতিদিনই ভেঙ্গে যাচ্ছে বনাঞ্চল। যার ফলশ্রুতিতে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ও সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিলীন হয়ে যাচ্ছে।



পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের  অধ্যাপক প্রফেসর হুমায়ুন কবির হাওলাদার বলেন, বৈষ্ণিক উষ্ণতার কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় বরফ গলে যাওয়ার কারণে সাগর নদীর পানির উচ্চতা বেড়ে গেছে। সেই সাথে পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ৫০/৬০ বছর পূর্বে সৃষ্টি প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ও বন বিভাগের লাগানো বনাঞ্চল বিপরীত প্রতিকূলতায় এখন মরে যাচ্ছে।

তার মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন সাগরের পানির স্তর ক্রমশ বাড়ছে। এ কারণে বেশি করে গাছ লাগালে প্রাকৃতিক এ দুর্যোগ থেকে উপকূলের মানুষ রক্ষা পেতে পারে।

পটুয়াখালী উপকূলীয় বন কর্মকর্তা মিহির কুমার দো বলেন, সাগর পারে প্রাকৃতিক ভাবে জম্মানো ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের মধ্যে সাগরের জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় বালুর স্তর নেমে যাওয়ায় এ গাছগুলো মরে যাচ্ছে। এছাড়া সাগর ও নদীর ঢেউয়ের তোড়ে ভূমি ক্ষয়ের কারণে ভেঙ্গে পড়ছে কুয়াকাটা ও গঙ্গামতি এলাকার হাজার হাজার গাছ।

এমএএস/আরআই