মন্দিরে হামলা ঘরবাড়ি ভাঙচুর-লুটপাট
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পবিত্র কাবা শরীফ নিয়ে ব্যাঙ্গচিত্র করে পোস্ট দেয়ার অভিযোগে আটক রসরাজ দাস (৩০) নামে এক যুবকের ফাঁসির দাবিতে রোববার দিনভার উত্তাল ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা।
এ ঘটনার জের ধরে অন্তত ১০টি মন্দিরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। এছাড়া ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে শতাধিক ঘর-বাড়িতেও। হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় পুরো নাসিরনগর জুড়েই এখন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় রোববার সকাল থেকে নাসিরনগর উপজেলায় পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি, এপিবিএন ও র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। যদি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে পরিস্থিতি এখন অনেকটাই শান্ত।
এদিকে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশের নিরব ভূমিকার কারণেই মন্দির ও ঘর-বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শনিবার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের জগন্নাথ দাসের ছেলে রসরাজ দাস তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পবিত্র কাবা শরীফের উপর শিবমূর্তি বসিয়ে একটি পোস্ট দেন। এ ঘটনায় শনিবার দুপুরেই ওই যুবককে গ্রেফতার করার পরপরই তার ফাঁসির দাবি তুলেন স্থানীয়রা। এদিন বিকেলে সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই সড়কে লাঠি সোটা নিয়ে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন স্থানীয়রা। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতও এই বিক্ষোভে যোগ দেয়।
এ ঘটনায় রোববারও তাণ্ডব চালায় বিক্ষুব্ধরা। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, শত শত লোক দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নাসিরনগর সদরের দত্তবাড়ির মন্দির, নমসুদ্রপাড়া মন্দির, জগন্নাথ মন্দির, ঘোষপাড়া মন্দির, গৌরমন্দিরসহ ১০টি মন্দিরে ভাঙচুর চালায়। এ সময় হামলাকারীরা শতাধিক ঘর-বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এতে বেশ কয়েকজন আহতও হয়েছেন বলে জানা গেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, র্যা ব, বিজিবি ও এপিবিএন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রিজিওন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাশরুর উল্লাহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান, পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, র্যা ব-৯ এর কম্পানি কমান্ডার এএসপি মো. আবু সাঈদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে তারা এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দেন।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক রেজাওয়ানুর রহমান বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি, র্যা ব ও এপিবিএন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে হামলার ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুরো ঘটনাটি তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান জানান, একটি সুযোগ সন্ধানী মহল সরকারকে বিব্রত করতে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ঘটনার নেপথ্যে যারাই আছেন তাদেরকে খুঁজে বের করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আজিজুল সঞ্চয়/এএম/এবিএস