বরেন্দ্র অঞ্চলে বাড়ছে বাণিজ্যিক ফলের চাষ
ধানসহ অন্যান্য খাদ্যশস্য উৎপাদন খরচ বাড়ছে প্রতি বছরই। সেই তুলনায় উৎপাদিত ফসলের দাম পাচ্ছে না বরেন্দ্রখ্যাত রাজশাহী অঞ্চলের কৃষক। এতে দিন দিন ভারী হচ্ছে লোকসানের পাল্লা। এ অবস্থায় বাণিজ্যিক ফল বাগানে ঝুঁকছে মানুষ। লাভ বেশি হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে এর পরিধি।
কৃষকরা বলছেন, কৃষি ভিত্তিক বরেন্দ্রের অধিকাংশ এলাকায় চাষ হয় ধান। একদিকে ধানের উৎপাদন বাড়ছে, অন্যদিকে কমছে দাম। এতে বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে হাটছে কৃষক। এখন বরেন্দ্রের বিরাট একটি অংশ চলে এসেছে পেয়ারা, কুল, আম ও লিচু বাগানের আওতায়।
তবে তিন ফসলি জমিতে এসব বাণিজ্যিক ফল বাগান গড়ে উঠায় কমছে ধান চাষের জমি। এছাড়াও জমি চলে যাচ্ছে রাস্তা-ইটভাটা, চাতাল, পুকুর খনন ও বসতবাড়ি নির্মাণসহ নানা কাজে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দেয়া তথ্য মতে, ২০১০ সালে রাজশাহীতে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ছিল ২ লাখ ২ হাজার ৮০৩ হেক্টর। ২০১৪ সালে কমে গিয়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৮০ হাজার ৯১১ হেক্টরে। এরই মধ্যে আম বাগান তৈরিতেই চলে গেছে ১৬ হাজার ৫৮৩ হেক্টর জমি। এছাড়া ১ হাজার ২৩৯ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হচ্ছে। নানা জাতের কুল ও কলা চাষও বেড়েছে ব্যাপকভাবে।
কৃষি দফতর আরো জানায়, ২০১০ সালে রাজশাহীতে ধান চাষ হয় ২ লাখ ২ হাজার ৮০৩ হেক্টর জমিতে। সে বছর উৎপাদন ছিল ৬ লাখ ৭২ হাজার ৩৩৭ মেট্রিক টন। ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে কমে গিয়ে উৎপাদন দাঁড়ায় ৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪৩৫ মেট্রিক টন। ওই বছর ধান চাষ হয় ১ লাখ ৮০ হাজার ৩০৮ হেক্টর জমিতে। পরের বছরগুলোতেও কমেছে ধান চাষের জমি। উচ্চ ফলনশীল জাত চাষ করায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার ততটা হেরফের হয়নি।
এ বিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালি জানান, ফল বাগানে কৃষি মজুর লাগে তুলনামূলকভাবে কম। উল্টো আয় হয় কয়েকগুণ বেশি। এরই ধান ও অন্যান্য শষ্য চাষ ছেড়ে বাণিজ্যিক ফল বাগানে ঝুঁকে পড়েছে এ অঞ্চলের চাষীরা। এ অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে আম। বর্তমানে বিভিন্ন এলাকায় থাই পেয়ারার নতুন নতুন বাণিজ্যিক বাগান হচ্ছে। কমবেশি অন্যান্য ফলেরও বাগানও হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, কৃষকদের বাণিজ্যিক বাগানের জন্য এক ফসলি, অকৃষি অথবা পতিত জমি বেছে নেয়া দরকার। কিন্তু বর্তমানে এমন জমি কমে যাওয়ায় তিন ফসলি জমিতে একের পর এক বাণিজ্যিক বাগান সৃজন হচ্ছে। এতে খাদ্যশস্য উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা কমছে। এ প্রক্রিয়া চলতে থাকলে অদূরে ভবিষ্যতে মারাত্মক খাদ্য সংকটে পড়তে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এসএস/এমএস