অসহায় রংপুরের আলুচাষিরা
রংপুর অঞ্চলের আলুচাষিদের কপাল পুড়ছে অবরোধ-হরতালের আগুনে। টানা অবরোধ-হরতালের কারণে নতুন আলুর ক্রেতা নেই। স্থানীয় বাজারে দাম না থাকায় আলু বিক্রি করে উৎপাদন খরচই উঠছে না।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, রংপুরের আট উপজেলায় ৪৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। যার মধ্যে তিস্তার চরে আগাম আলু উৎপাদন হয়েছে ৩ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে। গত বছর আলুতে লোকসান হওয়ায় এ বছর তিস্তার চরে আগাম আলু চাষ করেন চাষিরা। ওই আলু উত্তোলনের ভরা মৌসুম চলছে এখন।
রংপুরের পীরগাছা উপজেলার দেউতি এলাকার কৃষক শামসুল আলম দুই একর জমিতে আগাম আলু আবাদ করেছেন। বৃহস্পতিবার পীরগাছা বাজারে আলু বিক্রি করতে গিয়ে দাম কমের কারণে বিক্রি করেননি। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, গত বছর আলুতে লোকসান দিয়েছিলাম ৬৮ হাজার টাকা। এবার লাভের আশায় আলুর আবাদ করতে গিয়ে ঋণের দায়ে জর্জরিত। বাড়িঘর বিক্রি করে এবার ঋণ পরিশোধ করতে হবে। অবরোধ আর হরতালের কারণে বাইরের ব্যবসায়ীরা আসছেন না, তাই দাম কম।
কাউনিয়ার মিরবাগের আলুচাষি আনিছুর রহমান ৯০ হাজার টাকা ঋণ করে আলুর আবাদ করেছিলেন। আলুর দাম না থাকায় পাওনাদারের ভয়ে এখন তিনি রাতে বাড়িতে থাকেন না। প্রায় একই অবস্থা এলাকায় মোবারক মিয়া, মিজানুর রহমান, আবুল কাশেমসহ অন্য আলুচাষিদের। তারা ধার করে আলুর আবাদ করেছিলেন। কিন্তু এক মাস ধরে অবরোধের কারণে বাজারে ক্রেতা না থাকায় আলুর দাম অস্বাভাবিক কমে গেছে। চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক বস্তা আলু উৎপাদন ও সংরক্ষণসহ মোট খরচ ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা। অথচ বর্তমান বাজারে স্থানভেদে ১ বস্তা গ্রানুলা আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বস্তা (প্রতি বস্তা ৮৫ কেজি)। ফলে প্রতি বস্তায় কৃষকদের লোকশান হচ্ছে ৬০০ টাকার ওপর।
কৃষি অফিস ও চাষি পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, এক একর জমিতে আলু আবাদ করতে জমি তৈরি, মাটি শোধন, জৈব সার প্রয়োগ, আলু বীজ, লেবার, নিড়ানি, লাইন বাঁধা, ওষুধ, রাসায়নিক সার প্রয়োগ, সেচ, আলু তোলা এবং বস্তাবন্দি করা থেকে বাজারজাত করা পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে প্রতি হেক্টর জমি আবাদ করতে কৃষকের গড়ে উৎপাদন ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৪০ থেকে ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতি বস্তায় উৎপাদন ব্যয় হয়েছে ৭০০ টাকা। এর মধ্যে কোল্ড স্টোরের ভাড়া যুক্ত হয়েছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, প্রতিটি খালি বস্তার দাম ৬০ টাকা, পরিবহন ৪০ টাকাসহ উৎপাদন ব্যয় ও সংরক্ষণসহ প্রতি বস্তায় মোট ব্যয় হয়েছে ১ হাজার টাকার উপরে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা ফজলুল হক জানান, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ অঞ্চলে ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ আলু কৃষকরা ঘরে তুলেছেন। বাকি আলু ২ থেকে ৩ সপ্তাহের মধ্যে ঘরে তুলবেন তারা। আলু উত্তোলন করলেও অবরোধ ও হরতালের কারণে ব্যবসায়ী না থাকায় তারা তা বিক্রি করতে পারছেন না।
এএইচ/আরআইপি