রংপুরে গরু বেশি ক্রেতা কম
আসন্ন কুরবানি উপলক্ষে রংপুরের বিভিন্ন হাটগুলোতে জমে উঠেছে গরু ছাগলের বেচাকেনা। ভারতীয় গরু আসতে শুরু হওয়ায় দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে দেশি গরুর। তবে ভারতীয়সহ দেশি গরুর আমদানি পর্যাপ্ত থাকলেও ক্রেতাদের উপস্থিতি তুলনামূলক কমে গেছে।
বিক্রেতারা বলছেন, বড় মহাজনরা হাটে না আসায় গত কয়েক দিনের তুলনায় বিক্রি কমে এসেছে। জেলার বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা গেছে, গত ১৫ দিন আগের তুলনায় দেশি গরুর দাম কিছুটা শিথিল হয়েছে।
এদিকে রংপুর বিভাগে কুরবানি দেয়ার পরেও প্রায় দেড় লাখ কোরবানিযোগ্য পশু উদ্বৃত্ত থাকবে বলে জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর।
জেলার লালবাগহাট, বুড়িরহাট, কেরানিরহাট, হাজিরহাট, নজিরেরহাট, লাহরীরহাট, পাওটানাহাট, খানসামাহাট, বড়বাড়িহাট ঘুরে দেখা যায় গত কয়েকদিন আগেও ভারতীয় গরু না আসায় ক্রেতারা বিপাকে পড়েছিল।
রংপুরে নিসবেতগঞ্জ এলাকার খামারি হাবিব মিয়া ও আলম মিয়া জানান, প্রথমদিকে ভারতীয় গরু না আসায় কুরবানির জন্য দেশি গরুর চাহিদা বেশ ভালো ছিল। গত বছরের তুলনায় ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা বেশি দামে গরু বিক্রি হয়েছিল। তবে ২/৩ দিন ধরে এ এলাকার বিভিন্ন হাটে ভারতীয় গরু আসতে শুরু হওয়ায় দেশি গরুর দাম কমতে শুরু করেছে।
বুড়িরহাটের ইজারাদার সহযোগী সামসুল জানান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মহাজনরা গরু কিনতে এসেছিলেন।
ভারতীয় গরু না আসায় সে সময় দেশি গরুর চাহিদা বেশ ভালো ছিল। তবে ৩/৪দিন ধরে মহাজনরা না আসায় এবং ভারতীয় গরু আসতে শুরু হওয়ায় বিক্রি কিছুটা কমে এসেছে। হাটে গরুর তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা অনেক কম বলে তিনি জানান।
কাউনিয়া তিস্তা চরের খামারি লাইজু, জসিম ও রোম্মান মিয়া জানান, গত কয়েক বছর কুরবানির সময় ভারতীয় গরু আসায় আমাদের লোকসান দিয়ে গরু বিক্রি করতে হয়েছে। এবার শুরুর দিকে দাম ভালো থাকলেও ভারতীয় গরু আসায় তা কমতে শুরু হয়েছে।
রংপুর প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের আট জেলায় কুরবানির উপযুক্ত গরু-ছাগল রয়েছে ৮ লাখ ৬০ হাজারের ওপর। এ বিভাগে কুরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ৭ লাখ। এ বছর উদ্বৃত্ত থাকবে দেড় লাখের ওপর। গত বছর কুরবানি হয়েছিল প্রায় ৭ লাখ।
সূত্রমতে, বাড়তি গরু থাকায় এবার এ বিভাগে কুরবানির সময় গরুর কোনো প্রকার সংকট হবে না। ভারতীয় গরু না এলেও গরুর কোনো সংকটে পড়বেন না ক্রেতারা।
গঙ্গাচড়ার গরু ব্যবসায়ী সাদেকুল জানান, ঢাকা ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে গরু ব্যবসায়ীরা এসে এ বিভাগ থেকে গরু কিনে নিয়ে যান। বাইরের ব্যবসায়ীরা না এলে গরুর চাহিদা ও দাম ভালো পাওয়া যাবে না। তবে গরুর খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশি গরুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।
রংপুর প্রাণিসম্পদ অফিসের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার পাল জানান, রংপুর বিভাগে এবার দেড় লাখের বেশি কুরবানির পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। ভারতীয় গরু না এলেও আমাদের কোনো সমস্যা হবে না।
বিভাগীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, রংপুরের ৮ জেলায় এবার ২০১টি স্থায়ী এবং ১২৪টি অস্থায়ী হাটে গরু কেনাবেচা হবে। বড় বড় হাটে জাল টাকা প্রতিরোধে বিশেষ টিম থাকবে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত পুলিশ নিয়ে হাটগুলো মনিটরিং করবে। উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গরুর হাটের প্রতি বিশেষ নজরদারি রাখবেন।
রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক জানান, কুরবানির পশুর হাটে যাতে কোনো ধরনের চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা না ঘটে, সেজন্য পুলিশের ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ ও হাটগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। এছাড়া রাস্তাঘাটে যাতে পশুর গাড়ি চলাচলে কোনো ধরনের সমস্যা না হয়, সে ব্যাপারেও নজরদারি করবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। কুরবানির পর পশুর চামড়া যাতে পাচার হতে না পারে সে বিষয়টিও নজরদারি করা হবে।
জিতু কবীর/এআরএ/পিআর