ফেসবুকে প্রেমের ফাঁদে ১৩ প্রেমিকাকে ধর্ষণ
বরিশাল নগরীর ফলপট্টি এলাকার আবাসিক হোটেল ফেয়ার স্টারের ১৩ নম্বর কক্ষে প্রেমিকাকে ধর্ষণ করে সায়েম আলম মিমু। পরে মোবাইল, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা নিয়ে বাইর থেকে তালা মেরে পালিয়ে যায় সায়েম। এরপর প্রেমিকা ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করে।
ঠিক একই কায়দায় ফেসবুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে আরো ১২ মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে সায়েম। এরপর তাদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে মোবাইল, স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থ ছিনিয়ে পালিয়ে এসে তার মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে ফেলে।
গত সোমবার ঢাকার মগবাজার এলাকা থেকে সায়েমকে গ্রেফতার করা হয়। সায়েম ঢাকার ওয়ারীর যোগীনগর রোড এলাকার ভাড়াটিয়া নিরাপত্তা কর্মী সেলিম আলমের ছেলে।
প্রতারণার শিকার নাইমা ইব্রাহীম ঈশী নগরীর সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের ছাত্রী এবং নগরীর গোরস্থান রোড এলাকার ব্যাংক কর্মকর্তা ইব্রাহীম খলিলের মেয়ে।
মঙ্গলবার দুপুরে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ কমিশনার এসএম রুহুল আমিন এসব তথ্য জানান।
এ সময় তিনি বলেন, গত ১০ আগস্ট ফেয়ার স্টার হোটেলের ৩০৯ নম্বর কক্ষ থেকে নাইমা ইব্রাহীম ঈশীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সেখান থেকে ঈশীর মোবাইল, ব্যবহৃত স্বর্ণাংলকার এবং নগদ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় সায়েম। তবে সায়েম মৃত ঈশীর মোবাইল বিক্রি করলেও তার সিমকার্ড ব্যবহার করতে থাকে। ঈশীর মৃত্যুর ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাকসুদুর রহমান মুরাদ মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে সায়েমের অবস্থান নিশ্চিত করেন।
এরপর ২৯ আগস্ট মগবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে সায়েমকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত সায়েম স্বীকার করে, ফেসবুকের মাধ্যমে তাদের পরিচয় হয়। এরপর মোবাইলে তাদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রেমের সম্পর্কে গত ৯ আগস্ট ঈশীর সঙ্গে দেখা করতে বরিশাল নগরীতে এসে ফেয়ার স্টার হোটেলে ওঠে সায়েম। ওই দিন ঈশীকে নিয়ে দুর্গাসাগর ঘুরতে যায়। পরদিন ১০ আগস্ট ঈশী হোটেলের কক্ষে গেলে তাকে ধর্ষণ শেষে মোবাইল, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা নিয়ে বাইর থেকে তালা মেরে পালিয়ে যায় সায়েম।
পুলিশের ধারণা, এরপর ঈশী ভেতর থেকে দরজার মাঝ বরাবর ছিটকানি আটকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করে। এছাড়া প্রেমিকা নিয়ে হোটেলের ওই কক্ষে থাকার জন্য হোটেল ম্যানেজারকে অতিরিক্ত টাকা দিয়েছে বলেও জানায় সায়েম।
স্বীকারোক্তিতে সায়েম আরো জানায়, এভাবে আরো ১২ মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে সে। এরপর তাদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে প্রেমিকার মোবাইল, স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থ ছিনিয়ে পালিয়ে এসে মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে সে।
ঈশীর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মুরাদ জানান, সায়েমের সঙ্গে জান্নাত, রিয়া, রিমা, সূবর্ণা, তমা, সুরাইয়া ও সুমাইয়াসহ একডজন মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তার কাছ থেকে ওইসব মেয়ের মোবাইল নম্বর বের করে কথা বলেছেন। তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সায়েমের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। সামাজিক ও পারিবারিক সীমাবদ্ধতার কারণে প্রকাশ্যে কোনো অভিযোগ দাখিল করতে ইচ্ছুক নন তারা।
উল্লেখ্য, ঈশীর আত্মহত্যার ঘটনায় গত ১০ আগস্ট হোটেল মালিক আব্দুর রব বিশ্বাস ও ম্যানেজার মজিবুর রহমান আকনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সাইফ আমীন/এএম/আরআইপি