রিশার ঘাতক ওবায়দুলের কর্মজীবন শুরু ঠাকুরগাঁওয়ে
পরিবারের দারিদ্রতার কারণে ২০০৩ সালে ঠাকুরগাঁও ম্যাজিক কার্ট টেইর্লাসে ছেলের কাজের সন্ধানে আসেন ঘাতক ওবায়দুলের বাবা আব্দুস সামাদ পাইকার। অভাবের সংসারের কথা শুনে ১৫ বছরের শিশু ওবায়দুলকে টেইর্লাসে কাজের সুযোগ দেন গৌরাঙ্গ।
ওবায়দুলের বাসা দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার মিরাডঙ্গী এলাকায়। শুরু হয় ওবায়দুলের কর্ম জীবন। ম্যাজিক কার্ট টেইর্লাসের মালিক গৌরাঙ্গের বাসায় থাকা শুরু করে সে। টেইলার্সে মাসে যা উপার্জন করতো সে থেকে পরিবারকে কিছু সহযোগিতা করতো ওবায়দুল। মালিক গৌরাঙ্গের কারণে টেইলার্সের সকল কাজ শিখে ফেলে সে।
২০০৮ সালে মালিকের সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে টেইলার্স থেকে বের হয়ে যায়। কিছু পর পাশের ডলফিন নামে এক টেইলার্সে কাজে যোগ দেয় ওবায়দুল। সেখানে ১ বছর কাজ করে আবার আগের কর্মস্থলে ফেরত আসে। ২০০৯ সালে ওবায়দুলের বাবা আব্দুস সামাদ পাইকার মারা যায়। সংসারের সর্ম্পূণ দায়িত্ব ওবায়দুলের ঘাড়ে পড়ে।
২০১০ সালে বেশি উর্পাজনের জন্য পাড়ি জমায় ঢাকায়। পরবর্তীতে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে অবস্থিত ইস্টার্ন মল্লিকা শপিং মলে বৈশাখী টেইলার্সে কাটিং মাস্টার হিসেবে যোগ দেয় ওবায়দুল।
ম্যাজিক কার্ট টেইলার্সের সহকর্মী ধনেশ জানান, ওবায়দুল ঠাকুরগাঁও থেকে কাজ শিখেছে। সে এখানে খুবই ভাল ছিল। তার মতো ছেলে ঢাকায় গিয়ে এমন কাজ করতে পারে ভাবতে পারছি না।
ম্যাজিক কার্ট টেইলার্সের মালিক গৌরাঙ্গ বলেন, ওবায়দুলের সংসারের অভাবের কারণে তাকে কাজ দিয়েছিলাম। এক সময় সে সকল কাজ শিখে ফেলে এখানে। তার বাবা মারা যাওয়ার পর ঢাকায় চলে যায়। টিভিতে যখন ওবায়দুলের ছবি দেখতে পাই খুবই খারাপ লেগেছে। খুবই অবাক লেগেছে ওর মতো ছেলে এমন কাজ করতে পারে। যদি ওবায়দুল হত্যাকাণ্ডেডের সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে সঠিক বিচার হওয়া উচিত।
উল্লেখ্য, কাকরাইলে গত বুধবার বখাটে এক যুবকের ছুরিতে আহত উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, `মেয়েটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়েছে।`
১৪ বছর বয়সী সুরাইয়া আক্তার রিশা উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের অষ্টম শ্রেণিতে পড়তো। তার বাবার নাম রমজান। তারা পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজারে থাকতো।
রিশার মা তানিয়া বেগমের জানিয়েছিলেন, কয়েক মাস আগে ইস্টার্ন মল্লিকার বৈশাখী টেইলার্সে একটি জামা বানাতে দিয়েছিলেন তিনি। যোগাযোগের জন্য সেখানে তিনি নিজের ফোন নম্বর দিয়েছিলেন।
ওবায়দুল নামে ওই দোকানের এক কর্মচারী ফোন করে রিশাকে বিরক্ত করছিল। এ কারণে রিশার মা ওই মোবাইল সিমটি বন্ধ করে দেন। তার ধারণা, ওবায়দুল রিশাকে ছুরি মেরেছে।
পরে ওই টেইলার্সে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, ওবায়দুল দুই মাস আগে চাকরি ছেড়ে সেখান থেকে চলে গেছেন।
উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার জানান, রিশার মা বুধবারই ওবায়দুলকে আসামি করে রমনা থানায় একটি মামলা করেছেন।
রবিউল এহসান রিপন/এসএস/এমএস