খুলনায় কোরবানির পশু সংকট
ভারত থেকে গরু আসা কমে যাওয়ায় মহানগরীসহ খুলনার ৯টি উপজেলায় এবার কোরবানির ৩৭ শতাংশ পশু সংকটের আশঙ্কা রয়েছে। পরপর দুই বছর কোরবারির হাটে পশুর ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় খামারিরা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ষাঁড় ও বলদ লালন-পালন করছেন না।
বিশেষ করে দীঘলিয়া, ডুমুরিয়া ও ফুলতলায় খামারে গরু মোটাতাজাকরণের পরিমাণ কমেছে। কোরবানির পশুর চাহিদা মেটাতে পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা গরু আমদানি করবে বলে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। হাটে-বাজারে নিরাপদ গো-মাংস নিশ্চিত করতে দফায় দফায় মনিটরিং করছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
স্থানীয় সূত্রগুলো বলেছে, বৈশাখের শুরু থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় নিম্নাঞ্চলে চাহিদা অনুযায়ী ঘাস উৎপাদন হয়নি। দানাদার খাবারেরও মূল্য বেড়েছে। লোকসান এড়াতে খামারিরা গরু লালন-পালনের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে খামারিরা আশানুরূপ দাম পাননি। ঈদের চারদিন পূর্বে পর্যাপ্ত গরু আমদানি হওয়ায় সস্তায় গরু বিক্রি করে এ অঞ্চলের খামারিরা। তবে ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধ হওয়ায় খামারিরা ন্যায্যমূল্য পাবে বলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন।
জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার ধামালিয়া, বরুণা, ছয়বাড়িয়া, গজেন্দ্রপুর, থুকড়া, মিকশিমিল, রুদাঘরা, খর্ণিয়া, রানাই, বদনিয়া, চুকনগর, মাগুরঘোনা, কোমরাইল, সোলগাতিয়া, কয়রা উপজেলার আমাদী, কিনুকাটি, গড়আমাদী, মসজিদকুড়, ফতেকাটি, বাগালী, জয়পুর, জোড়শিং, হায়াতখালী, হোগলা, অন্তাবুনিয়া গ্রামে উন্নতজাতের গবাদি পশু লালন-পালন হচ্ছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, জেলায় সাত হাজার খামারি ২৪ হাজার ৯০টি গরু এবং ৭ হাজার ৮৫৩টি ছাগল লালন-পালন করছে। গত বছর ৩৮ হাজার ৬৫২টি গরু এবং ৫৯ হাজার ১২৫টি ছাগল জবাই হয়। সে হিসেবে এবারের পশুর সংকট দেখা দেবে। নিরাপদ গো-মাংস নিশ্চিত করতে প্রত্যেকটি খামার মনিটরিং করা হচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. সৈয়দ মো. আনোয়ার-উল-ইসলাম জানান, নিরাপদ গো-মাংস নিশ্চিত করতে খামারিদের দফায় দফায় পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তিনি আশাবাদী, এবারও নিরাপদ মাংস সরবরাহ করা হবে। পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা গরু এনে এ জেলার চাহিদা মেটান।
ডুমুরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শরিফুল ইসলাম জানান, ১৪ ইউনিয়নে ৫ হাজার ৪৮৫টি গরু, ২ হাজার ১৩২টি ছাগল মোটাতাজা করা হচ্ছে। গত বছর ১২ হাজার গরু-ছাগল এ উপজেলায় কোরবানিতে জবাই হয়। এবার পশুর সংকট থাকবে। পার্শ্ববর্তী জেলা সাতক্ষীরা ও যশোর থেকে আগামী মাসের প্রথম দিকে গরু আসা শুরু হবে।
তিনি আরো জানান, গত বৃহস্পতিবার খর্ণিয়া ও শাহপুরে গরুর হাট বসে। সোমবার আঠারমাইল হাটে কোরবানির পশু বিক্রি শুরু হবে।
কয়রা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, নিরাপদ গো-মাংস নিশ্চিত করতে খামারিদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। উপজেলার সাত ইউনিয়নের স্টেরয়েড ওষুধ ব্যবহার করা হয়নি। উপজেলার দেউলী ও কালনায় পশুরহাট বসতে শুরু করেছে। সোমবার হোগলাহাটে পশু বিকিকিনি হবে। এ উপজেলায় কোরবানির জন্য বিভিন্ন খামারে ৬ হাজার ৬৭টি গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে।
আলমগীর হান্নান/এআরএ/এবিএস