কুমিল্লা বোর্ডে ইংরেজি ও আইসিটিতে ভরাডুবি
এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় গত বছরের চেয়ে জিপিএ-৫সহ মোট পাসের হার বেড়েছে। তবে ইংরেজি, আইসিটি, পদার্থ, রসায়ন ও হিসাববিজ্ঞানে শিক্ষার্থীরা তুলনামূলক খারাপ করেছে। সার্বিক বিবেচনায় অবশ্য কুমিল্লা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা গতবছরগুলোর তুলনায় এবার খারাপ ফল করেছে। বিশেষ করে ইংরেজি ও আইসিটি এ দুইটি বিষয় কমিল্লা বোর্ডের শিক্ষার্থীদের ডুবিয়েছে। এ দুই বিষয় আরেকটু ভালো হলে সার্বিক ফলে আরো ইতিবাচক প্রভাব পড়ত।
জানা যায়, সদ্য প্রকাশিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে দেশের আটটি সাধারণ এবং মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ডের মধ্যে পাসের হারের দিক থেকে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের স্থান অনেকটা তলানীতে।
১০টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৭৪.৭০ হলেও ৬৪.৪৯ শতাংশ পাসের মধ্যে দিয়ে কুমিল্লা বোর্ডের স্থান ১০ নম্বরে। কুমিল্লা বোর্ডের ৬ জেলা থেকে এবছর এক লাখ আট হাজার ৩৭৩ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৬৯ হাজার ৮৯৫ জন। তার মধ্যে শুধু মাত্র ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে ৩২ হাজার ৮৯০ জন পরীক্ষার্থী। একই সঙ্গে ইংরেজিতে ১৭ হাজার ৮৬২ জন এবং আইসিটিতে ১৫ হাজার ২৮ জন পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বছরও এ বোর্ডে এ দুটি বিষয়ে ২৩ হাজার ৮০৫ জন অকৃতকার্য হয়েছিল। বিশেষ করে আইসিটি বিষয়ে শিক্ষকের পদ সৃষ্টি না হওয়ায় এবং ইংরেজি বিষয়ে দক্ষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক না থাকায় অধিকাংশ কলেজেই ইতিহাস কিংবা সমাজ কল্যাণের শিক্ষক দিয়ে আইসিটি বিষয়ে ক্লাস নেয়া হয়। এছাড়া সৃজনশীল বিষয়ে শিক্ষকদের দক্ষতা না থাকায় ফল বিপর্যয় ঘটেছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষা ব্যবস্থায় সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি প্রবর্তন হয়েছে সাত বছর আগে। দীর্ঘ সময়েও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেকেই এ পদ্ধতি এখনো আয়ত্তে আনতে পারেননি। এর মাঝে এসেছে আরো পরিবর্তন। শিক্ষাক্রমে যোগ হয়েছে নতুন নতুন বিষয়। অথচ দক্ষ শিক্ষক তৈরি হয়নি। শিক্ষক তৈরির আগেই যোগ হয়েছে নতুন পাঠ্যক্রম। ফলে ফলাফলে প্রভাব পড়েছে।
কুমিল্লা বোর্ডে এবছর এক লাখ আট হাজার ৩৭৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৬৯ হাজার ৮৯৫ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র এক হাজার ৯১২ জন শিক্ষার্থী। দেশের গড় ফলাফল ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে অন্যান্য বোর্ডগুলো থেকে পিছিয়ে থাকায় এবং যারা জিপিএ-৫ পেয়েছে তাদের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিক্যালে ভর্তির জন্য বিজ্ঞান বিভাগের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী পদার্থ বিদ্যা ও জীববিদ্যা বিষয়ে কাঙ্ক্ষিত ৮০ শতাংশ নম্বর না পাওয়ায় তাদের ও পরিবারের স্বপ্নে চিড় ধরেছে।
অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানায়, ১০টি বোর্ডে ৫৮ হাজারের অধিক জিপিএ-৫ পেলেও কুমিল্লা বোর্ড নূন্যতম ১৯১২ জনের জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে মূলত দেশের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এই বোর্ডের মেধাবী সন্তানদেরকে আবেদন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুমিল্লা বোর্ডের একজন সাবেক কর্মকর্তা জানান, পদার্থ ও জীববিদ্যা বিষয়ে তুলনামূলকভাবে প্রশ্নপত্র কঠিন হওয়ায় পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষার হলে কাঙ্ক্ষিত উত্তর লিখতে পারেনি। ফলে সার্বিক ফলাফলে জিপিএ-৫ অর্জন করতে সক্ষম বিজ্ঞান বিভাগের ওই দুটি বিষয়ে ২ থেকে ৫ নম্বরের ব্যাবধানে অধিকাংশ শিক্ষার্থী ৮০ শতাংশ নম্বর অর্জন সম্ভব হয়নি। এক্ষেত্রে জিপিএ-৫ অর্জন করলেও ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিকেলে ভর্তির ক্ষেত্রে তাদেরকে বেশি বেকায়দায় পড়তে হবে।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের কম্পিউটার কেন্দ্রের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট বিকাশ চন্দ্র মল্লিক বলেন, এবার কুমিল্লা বোর্ডে ইংরেজি, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে ৩২ হাজার ৮৯০ জন। ইংরেজি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছেন ১৭ হাজার ৮৬২ জন। আইসিটি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছেন ১৫ হাজার ২৮ জন। গত বছরও এ বোর্ডে এই দুটি বিষয়ে ২৩ হাজার ৮০৫ জন অকৃতকার্য হয়েছে।
তিনি বলেন, এই দুই বিষয়ের শিক্ষক না থাকায় এমন ফল বিপর্যয় হয়েছে। অধিকাংশ কলেজেই আইসিটি বিষয়ে শিক্ষক না থাকায় ইতিহাস ও সমাজ কল্যাণের শিক্ষকদের দিয়ে আইসিটি বিষয়ে ক্লাস নেয়া হয়।
মো. কামাল উদ্দিন/এএম/এবিএস