ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

শাহপরীর দ্বীপে বাঁধ : এলাকাবাসীর উচ্ছ্বাস

প্রকাশিত: ০৫:৫২ এএম, ১৭ আগস্ট ২০১৬

কক্সবাজারের টেকনাফ শাহ পরীরদ্বীপে বেড়িবাঁধ তৈরির লক্ষ্যে ১০৬ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ছয়টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

তার মধ্যে টেকনাফ শাহ পরীরদ্বীপে বেড়িবাঁধ পুনঃনির্মাণ প্রকল্পটিও রয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৬ কোটি টাকা। দীর্ঘ ৪ বছর পর এ প্রকল্প অনুমোদন হওয়ায় দুর্ভোগে থাকা শাহ পরীরদ্বীপের ৪০ হাজার জনগোষ্ঠী উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে।

জানা গেছে, সাবরাং ইউনিয়নের একটি বৃহৎ এলাকা শাহ পরীরদ্বীপ। এ দ্বীপের পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে নাফনদী, দক্ষিণে বদর মোকাম, উত্তরে সাবরাং নয়াপাড়া। তবে সাগর ও নদীর উপকূল বেড়িবাঁধ দিয়ে রক্ষা ছিল। সেই বেড়িবাঁধ প্রায় অর্ধযুগ ধরে অরক্ষিত। এ অরক্ষিত বাঁধের কারণে জোয়ার-ভাটায় ডুবছে বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট, চিংড়ি ঘের, ফসলি জমি। ঢেউয়ের তোড়ে বিলীন হয়ে গেছে অসংখ্য ঘরবাড়ি ও গাছপালা। বর্তমানে দ্বীপটি পুরোটাই সাগরে বিলীনের শঙ্কায় ছিল।

এক সময় শাহ পরীরদ্বীপ বদর মোকাম ব্যবসায়ীদের বিখ্যাত ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। এখন তাসহ অধিকাংশ এলাকা সাগরের ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়ে গেছে। বর্ষায় দ্বীপের ৪০ হাজার মানুষ আতঙ্ক নিয়ে দিনাতিপাত করছে। বর্তমানে বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন দ্বীপের প্রায় তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অরক্ষিত।

তাছাড়া দুযোর্গ মোকাবেলায় নেই পর্যাপ্ত পরিমাণ সাইক্লোন শেল্টার। প্রতি মাসে পূর্ণিমা ও আমাবশ্যার জোয়ারে উপকূলের বসতঘর তলিয়ে যাচ্ছে। বীপের পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। বর্তমানে ভাঙন কবলে পড়ে পশ্চিম পাড়া, ঘোলাপাড়া, দক্ষিণপাড়া ও মাঝর পাড়া এলাকার শত শত পরিবার অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।

গত ২০১২ সালের ২২ জুলাই শাহ পরীরদ্বীপ পশ্চিমপাড়া বাঁধে ভাঙন ধরে সাগরের জোয়ারের পানি এলাকায় প্রবেশ করে। ফলে চলাচলের সড়কটিও ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর থেকে প্রতি মাসের পূর্ণিমা ও আমাবশ্যার জোয়ারে উপকূলসহ বসতঘর, চিংড়ি ঘের, ফসলি জমি তলিয়ে যায়।

গত ৪ বছর ধরে বাঁধ ও সড়ক ভাঙার কারণে দ্বীপবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বর্তমানে দ্বীপবাসীকে চলাচল করতে হচ্ছে নৌকায়। তাছাড়া পণ্য পরিবহনে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। এদিকে, বেড়িবাঁধ সংস্কার না হওয়ায় সড়ক সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে নৌকায় দ্বীপবাসীর চলাচলের একমাত্র ভরসা।

এদিকে, গত ২০১৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর উখিয়া হাইস্কুল মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাহ পরীরদ্বীপ বাধঁ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। সে প্রতিশ্রুতি ৪ বছরের মাথায় আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। দ্বীপের ৪০ হাজার জনগোষ্ঠী প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির বাঁধ বাস্তবায়নে
অপেক্ষার প্রহর গুনছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৯৯১ সালে ২৯ এপ্রিল ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে দ্বীপের বেড়িবাঁধ বিলীন হয়। এরপর বিচ্ছিন্নভাবে বাঁধের ভাঙন ও মেরামত কাজ চলে। সর্বশেষ বাঁধটি গত চার বছর আগে সামদ্রিক জোয়ারে ভেঙে পানি প্রবেশ করে দ্বীপবাসীকে দুর্ভোগে ফেলে। এ দূুভোগ তখন থেকে আর পিছু ছাড়ছে না। জোয়ারের পানি দুর্ভোগের পাশাপাশি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটাচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করে আসছিল দ্বীপবাসী।

শাহ পরীরদ্বীপ রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. হাশেম সিআইপি জানান, ভাঙা বাঁধের কারণে এলাকার মানুষ কষ্টে জীবন-যাপন করছে। বর্ষায় শত শত পরিবারকে গ্রাম ছাড়া করছে সাগরের আগ্রাসন। এতে দ্বীপময় দুর্ভোগ বেড়ে যায়।

প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির বাঁধ মেরামতে ১০৬ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেওয়ায় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয়
সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

সাবরাং ইউপি চেয়ারম্যান নূর হোসেন জানান, সাবরাং ইউনিয়নের বৃহৎ সমস্যা শাহ পরীরদ্বীপের ভাঙা বাঁধ। এ বাঁধের কারণে এলাকাবাসীর দুর্ভোগের শেষ নেই। দুর্ভোগ লাগবে প্রধানমন্ত্রী ১০৬ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন সবার মাঝে আশার আলো জাগাচ্ছে। সাবরাংবাসী প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে তিনি সেনাবাহিনী ব্যবহারের আবেদন জানান।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি জানান, শাহ পরীরদ্বীপবাসীকে রক্ষায় বেড়িবাঁধের একটি বড় প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছেন। প্রকল্পটি সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা চালাবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এসএস/এবিএস

আরও পড়ুন