ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

সংস্কারবিহীন বেড়িবাঁধ : ডুবছে ফসল নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ

প্রকাশিত: ০৮:২৭ এএম, ১০ আগস্ট ২০১৬

সাগর উপকূলের জেলা পিরোজপুরের প্রায় ১৩ লক্ষ মানুষকে প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে বসবাস করতে হচ্ছে। নদীর ভাঙন তাণ্ডব ঠেকাতে ব্যর্থ হলে দেশের মানচিত্র থেকে দ্বীপ জেলা পিরোজপুরের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বলেশ্বর, সন্ধ্যা, কচাঁ, তালতলা, কালিগঙ্গা, মধুমতি, পোনা ও গাবখান নদীর অব্যাহত ভাঙনে ৭ উপজেলায় ১৮টি বন্দর ও ৭৫টি গ্রাম হুমকির সম্মুখীন।

প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করেই বসবাস করতে হচ্ছে এসব এলাকার বাসিন্দাকে। একের পর এক ভাঙনে বসতবাড়ি, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, মসজিদ, মন্দির ও জমিজমা তলিয়ে যাচ্ছে রাক্ষুসী নদী গর্ভে। ২০০৯ সালের ২৫ মে প্রকৃতির সবচেয়ে ভয়াবহ জলোচ্ছাস লন্ড-ভন্ড করে দেয় বেড়িবাঁধ, ব্রিজ, কালভার্ট, রাস্তা-ঘাটসহ হাজার হাজার একর ফসলি জমি।  ফলে অরক্ষিত ও নিঃশ্ব হয়ে পড়ে অত্র জেলার লক্ষ লক্ষ মানুষ।
 
Pirojpur-Nadi

প্রকৃতির রুদ্র হামলার শিকার আইলার আঘাতে অবশিষ্ট যেটুকু বেড়িবাঁধ ছিল তাও এখন প্রকৃতির বার বার ছোবলে বিলীন হতে বসেছে। আর এ কারণেই অরক্ষিত ও সংস্কারবিহীন অবস্থায় উপকূল জুড়ে শুধুমাত্র সোনালী ফসলই নয়, মাঠ-ঘাট, হাট-বাজার, অবকাঠামো, গবাদি পশু, হাসঁ-মুরগি এবং ঘরবাড়িসহ ব্যাপক জানমালের ক্ষতি সাধিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

তিন যুগ এর অধিক সময় ধরে নদী ভাঙন শুরু হলেও এ বছর ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। ফলে উপকূলবাসীকে একের পর এক গুনতে হচ্ছে চরম মাশুল। জেলার বিধ্বস্ত বাধঁগুলো এখনও সংস্কারবিহীন থাকায় উদ্বিগ্ন জেলাবাসী।

পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, জেলায় মোট বেড়ীবাঁধের পরিমাণ ২শ ৫৮ কিমি। জেলার ৭টি উপজেলায় বিগত কয়েক বছরে ৮১ কিমি এলাকার নদীর তীর বিলীন হয়েছে নদী গর্ভে।
 
Pirojpur-Nadi

জেলার নদীপথের প্রবেশ দ্বার হুলারহাট নৌ-বন্দর, বেকুটিয়া এবং চরখালী ফেড়িঘাটসহ নলবুনিয়া এলাকা বিগত কয়েক বছরে ১৬ কিমি নদী তীরের কোনো চিহ্ন নেই। এলাকায় নদীর অব্যাহত ভাঙনে অস্তিত্ব বিলীন প্রায়। এছাড়া সদর উপজেলা শঙ্করপাশা ইউনিয়নের কচাঁ নদীর অব্যাহত ভাঙনে পীর হাবিবুর রহমান এর বাড়ির মসজিদ, বসত ঘড়, গাজিপুর নেছারিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার বিভিন্ন অংশসহ একাধিক গ্রাম এখন হুমকির মুখে।

অপরদিকে জেলা শহরের তীব্র ভাঙনে চাঁদমারি, বলেশ্বর ব্রিজ, পুরাতন ফেরিঘাট, বিনোদনের একমাত্র প্রাণকেন্দ্র ডি.সি.পার্ক এলাকাও হুমকির সম্মুখীন।
 
জেলার প্রত্যন্ত এলাকা ঘুরে আরও জানা যায়, স্বরূপকাঠি (নেছারাবাদ) ও কাউখালী উপজেলার বুক চিরে বয়ে যাওয়া সন্ধ্যা নদীর ভাঙনের ফলে স্বরূপকাঠী-বরিশাল সড়ক এখন মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। বর্তমানে নেছারাবাদ শর্ষিণা পীর সাহেবের বাড়ি, দরবার শরীফ, মাদরাসা ও এতিমখানাসহ কাউখালী বন্দর রয়েছে হুমকির মুখে।

সন্ধ্যার করালগ্রাসে নেছারাবাদ উপজেলা লঞ্চঘাট, কৌড়িখাড়া লঞ্চঘাট, সোহাগদল, ছারছিনা, জলাবাড়ি, উত্তর কৌড়িখাড়া, গনমান, মুনিনাগ, বারড়া, শান্তিহার, কুনিয়ারীসহ ৮টি গ্রামের ৪ কিমি নদীর তীর বিগত কয়েক বছরে শেষ হয়েছে। এমনকি নদী ভাঙনে পল্লী সল্ট ইন্ডাস্ট্রি ও বেশ কয়েকটি বশত ঘর সন্ধ্যা নদীর পেটে চলে যায়।

Pirojpur-Nadi

একই ভাবে উপকূলীয় উপজেলা জিয়ানগরের কচাঁ ও বলেশ্বর নদীর অব্যাহত ভাঙনে চারাখালী খাদ্য গুদাম, গুচ্ছ গ্রামসহ একাধিক গ্রাম এখন হুমকির মুখে। জিয়ানগর উপজেলার ৫ কিমি নদী তীরের কোনো খোঁজ নেই। মঠবাড়িয়া উপজেলায় বলেশ্বরসহ বিভিন্ন নদীর ভাঙনে খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ভোলমারাসহ গ্রামের ৮ কিমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

পানি উন্নয়নের বোর্ডের এ পরিসংখ্যানের পাশাপাশি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত পিরোজপুর জেলার আয়তনের পরিসংখ্যা রীতিমতো ভাবিয়ে তুলেছে জেলাবাসীকে। ২০১১ সালের আদমশুমারী ও এলাকার আয়তন শুমারীর প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০১ সালে পিরোজপুর জেলার আয়তন ছিল ১৩০৭.৬১ স্কয়ার কিমি সেখানে ২০১৬ সালে জেলার আয়তন দাঁড়িয়েছে ১২৭৭.৮০ স্কয়ার কিমি। অর্থাৎ এ জেলার মানচিত্রে বর্তমানে ৩০ বর্গ কিমি এলাকা বিভিন্ন নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাঈদ আহম্মেদ বলেন, জেলার বিভিন্ন উপজেলার হাট-বাজার, বন্দর, বেড়িবাঁধ ও নদী ভাঙনের প্রতিবেদন এবং এগুলো রক্ষার জন্য পিপি করে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। টাকা বরাদ্দ হলে সমস্যা সমাধান করা হবে।
 
এফএ/পিআর

আরও পড়ুন