ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

২৮ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ১৩০০ আবাসন

প্রকাশিত: ০১:৩৫ পিএম, ০৭ আগস্ট ২০১৬

আবাসন সমস্যা, শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষক ও পরিবহন সংকটের কারণে ১১৭ বছরের পুরনো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। কলেজের ২৮ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে এক হাজার ৩০০ জনের আবাসন সুবিধা রয়েছে। উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রীদের কোনো আবাসনব্যবস্থা নেই। তার ওপর উচ্চমাধ্যমিক ও ডিগ্রি শাখা দুটি আলাদা ক্যাম্পাসে হওয়ায় শিক্ষকদের ক্লাস নিতে অসুবিধা হচ্ছে। নানা সমস্যায় জর্জরিত কলেজটি ধীরে ধীরে যেমন তার ঐতিহ্য হারাচ্ছে।

কলেজের পাঁচটি আবাসিক হল থাকলেও অধিকাংশ হল জরাজীর্ণ হয়ে আছে। এর মধ্যে দুটি হল একেবারেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ায় বন্ধ রয়েছে।  

জানা যায়, ১৮৯৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর তৎকালীন জমিদার রায় বাহাদুর আনন্দ চন্দ্র রায় কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠালগ্নে কলেজটির উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠদানের মধ্য দিয়ে ১০৭ জন ছাত্র এবং সাতজন শিক্ষক নিয়ে যাত্রা শুরু করে।

Comilla

১৯১৮ সালে চালু হয় স্নাতক (সম্মান) কোর্স। বিএসসি এবং বিকম কোর্স শুরু হয় পর্যায়ক্রমে ১৯৪২ এবং ১৯৫৬ সালে। নৈশকালীন পাঠদান কর্মসূচি চালু হয় ১৯৫৮ সালে। ১৯৬২ সালে কলেজের উচ্চমাধ্যমিক ও ডিগ্রি শাখায় বিভক্ত হয়।

১৯৭১ সালে পাঁচটি বিভাগ চালু করা হয়। বাংলা বিভাগ চালু হয় ১৯৭৩ সালে। ১৯৮৪-১৯৮৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের মর্যাদা লাভ করে। স্নাতক এবং উচ্চমাধ্যমিক শাখা ২৯ একর ভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে কলেজের ২৭ হাজার ৪১৮ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। কলেজে কর্মরত ১৬৫ জন শিক্ষক। কলেজে ২১টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স চালু রয়েছে।

শিক্ষা ও আবাসন সমস্যা প্রকট

কলেজের ডিগ্রি শাখায় দুটি ছাত্রাবাস রয়েছে। ছাত্রদের জন্য কবি নজরুল ইসলাম হল। যেখানে আসন সংখ্যা ৬৩৫। ছাত্রীদের জন্য নবাব ফয়জুন্নেসা হল। যার আসন সংখ্যা ৪০০। এসব ছাত্রাবাসের প্রতিটিতেই ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। সংস্কার নেই দীর্ঘদিন। দেয়ালের চুন, আস্তর খসে খসে পড়ছে।

Comilla 
উচ্চমাধ্যমিক শাখার জন্য টমছম ব্রিজ এলাকায় নিউ হোস্টেলের সোহরাওয়ার্দী ও রবীন্দ্রনাথ হলের চারটি ভবনের মধ্যে একতলা বিশিষ্ট তিনটি ভবনই জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত। পাশের চারতলা বিশিষ্ট একটি ভবনে গাদাগাদি করে প্রায় ৩০০ ছাত্র রয়েছে। নগরীর দক্ষিণ চর্থায় কলেজের শেরেবাংলা ছাত্রী নিবাসটি দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ ধরে বন্ধ। ফলে দুর্ভোগের শেষ নেই ছাত্রীদের।

ছাত্র-ছাত্রীর জন্য হলের আসন বরাদ্দ থাকার ফলে বাকি শিক্ষার্থীরা আবাসন সংকটে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বিশেষ করে ছাত্রীদের ক্ষেত্রে এ দুর্ভোগের মাত্রা অবর্ণনীয়। প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল আবাসিক ব্যবস্থার ফলে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও মেসে অতিরিক্ত ব্যয়ভার বহন করে। এ অবস্থায় ছাত্রীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

Comilla

কবি নজরুল ইসলাম ও নিউ হোস্টেলের হলের আবাসিক ছাত্ররা জানায়, তাদের কক্ষগুলো জরাজীর্ণ, স্যাঁতসেঁতে ভবনে ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। দেয়ালের চুন ও আস্তর খসে পড়ছে। বেশির ভাগ বাথরুম ও টয়লেটের দরজা নেই। শিক্ষার্থীর তুলনায় বাথরুম ও টয়লেট স্বল্পতার কারণে প্রতিদিন ভোরে সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে পর্যায়ক্রমে প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে হয়।

ফয়জুন্নেসা ছাত্রীনিবাসের ছাত্রীরা জানায়, তারাও একই সমস্যায় রয়েছে। মশা-মাছির উপদ্রব তো আছেই। এসব সমস্যার সমাধানে পরিকল্পিত কোনো উদ্যোগ নেই বলেও জানায় তারা।

নিউ হোস্টেলের আবাসিক ছাত্ররা জানায়, চারটি ভবনের মধ্যে একতলা বিশিষ্ট তিনটি ভবন সংস্কারের অভাবে পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ সংস্কারের উদ্যোগ নিলে এখানে অনেক শিক্ষার্থী থাকার সুযোগ পেতো। তিনটি ভবনে সামান্য বৃষ্টিতে কক্ষে পানি ঢুকে পড়ে। আশপাশে খানাখন্দ, আগাছা, মশা-মাছি ও সাপ-বিচ্চুর আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে।

Comilla

কলেজের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কাজের চর্চায় বিএনসিসি (সেনা), বিএনসিসি (বিমান), মুভ রেড ক্রিসেন্ট, বিতর্ক পরিষদ, ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটার ও রোভার স্কাউটস থাকলেও কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। কলেজের দুটি মাঠ থাকলেও খেলাধুলা বা অনুষ্ঠানের জন্য এগুলো সংস্কারের অভাবে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে আছে। সামান্য বৃষ্টিতে ডিগ্রি শাখার কলা ভবনের সামনে হাঁটু পানি জমে যায়।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নিয়মিত ক্লাস হয় না। বিশেষ করে ইংরেজি, হিসাব বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস না করায় শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট নির্ভর হতে হচ্ছে।

ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো.আবদুর রশীদ বলেন, এখানকার প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। তার ওপর রয়েছে শ্রেণীকক্ষ ও আবাসনসংকট। সংস্কৃতি চর্চা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কলেজের ধর্মপুর ডিগ্রি শাখায় ছাত্রীদের জন্য আরো একটি আবাসিক হল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া নিউ হোস্টেলের পরিত্যক্ত ভবনগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

মো. কামাল উদ্দিন/এএম/এবিএস