এখন খাবার পাই তাই স্কুল ফাঁকি দিতে ভালো লাগে না
ঠাকুরগাঁও প্রাথমিক স্তরে ‘মিড ডে মিল’ কার্যক্রম চালু হওয়ার পর শিশুদের ভর্তির হার সন্তোষজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়েছেন অভিভাবক ও শিক্ষকরা। তাই প্রতিটি বিদ্যালয়ে এই কার্যক্রম চালুর দাবি জানিয়েছে সচেতন মহল।
ঠাকুরগাঁওয়ের গ্রামাঞ্চলের প্রায় ৮০ ভাগ মানুষই দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে। ফলে অনেকে নিজ সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন না। কিন্তু গত দুই বছর যাবত বিভিন্ন বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং কার্যক্রম চালু হওয়ায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির চিত্র পাল্টে গেছে। এখন প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার শতকরা ৮০ ভাগ।
সরেজমিনে ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জ উপজেলা কাস্তোর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করছে। দুপুর ১ টা ১৫ মিনিটে ক্লাস শেষে সকলে ভালো করে হাত ধুয়ে প্লেট নিয়ে একটি ঘরে অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণ পরেই শিশুদের প্লেটে খিচুরি ও ডিম দেয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সুন্দর করে খেয়ে আবার হাত ধুয়ে ক্লাসে যায় ওইসব শিক্ষার্থী।
স্থানীয় বাসিন্দা সাদেকুল ইসলাম জানান, শ্রমিকের কাজ করি। যা উপার্জন করি তা দিয়ে সন্তানদের মুখে তিনবেলা খাবার তুলে দেয়া খুবই কষ্টকর হয়ে যায়। তাই সন্তানদের স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ ছিল না তেমন। কিন্তু স্কুলে এখন মিড ডে মিল চালু হওয়ায় প্রতিদিন সন্তানরা স্কুলে যাচ্ছে। ফলে পড়ালেখায় তাদের আগ্রহ বাড়ছে।
স্থানীয় সায়েম আলী বলেন, মিড ডে মিল চালুর আগে প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল অর্ধেকেরও কম। এখন সব শ্রেণিতেই ৮০ ভাগের উপর শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে।
ওই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী মারিয়া জানায়, অনেক সময় খেয়ে না খেয়ে দিন কেটেছে। ক্ষুধা পেটে নিয়ে স্কুলে আসা হতো না। পড়ালেখায় মনোযোগ থাকতো না। এখন স্কুলে খাবার পাই। ভালো লাগে। তাই স্কুল ফাঁকি দিতে আর ভালো লাগে না।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহিনুর জানায়, স্কুলে দুপুরের খাবার না পেলে আমার হয়তো স্কুলেই আসা হতো না। স্কুলের খাবার খেয়ে আমরা এখন নিশ্চিন্তে পড়ালেখা করতে পারছি।
পীরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হক জিয়া জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে আর কোনো বিদ্যালয়ে মিড ডে মিলের এমন কর্মসূচি চালু ছিল না। জেলা প্রশাসক মূকেশ চন্দ্র বিশ্বাসের আন্তরিকতায় অনেক বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল চালু হওয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝড়ে পড়ার হার কমে গেছে। আমরা সমন্বিতভাবে এগিয়ে আসলে প্রাথমিক শিক্ষার মানে আরো উন্নতি হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবু হারেস বললেন, কমিউনিটির (স্থানীয় জনগণ) সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলেই যে কোনো কর্মসূচি টিকিয়ে রাখা সম্ভব। ঠাকুরগাঁওয়ে জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মিড ডে মিল চালু হওয়ায় নবদিগন্তের আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মূকেশ চন্দ্র বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, হরিপুর উপজেলায় একটি বিদ্যালয়ে নিজ উদ্যোগেই ‘মিড ডে মিল’ হওয়ায় আলোড়ন তৈরি হয়েছিল। সেই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে আমি বিভিন্ন বিদ্যালয় পরিদর্শন করে মিড ডে মিল চালুর ব্যবস্থা করি। ইতোমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ও সচিব হুমায়ূন খালিদ দুটি বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন। সকলে সহযোগিতা করলে জেলার প্রতিটি বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল চালু করা সম্ভব।
শনিবার পীরগঞ্জ উপজেলায় মিড ডে মিল কার্যক্রম উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ূন খালিদ বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে মিড ডে মিল কার্যক্রম আমাকে মুগ্ধ করেছে। জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনগণের আন্তরিকতা থাকলে একদিন বাংলাদেশের সব স্কুলে মিড ডে মিল কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হবে। ফলে প্রাথমিক শিক্ষার মান দিন দিন আরো উন্নতি হবে।
এমএএস/এমএস