হাঁস মুরগি গরু ছাগল মানুষ সবার চিকিৎসক তিনি
শরীয়তপুরে এক আজব কাহিনীর জন্ম দিয়েছেন আবু সাইদ নামে এক ব্যক্তি।নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় প্রদানকারী এই ব্যক্তি একাধারে পশু ও মানুষের ‘চিকিৎসা’ দিয়ে যাচ্ছেন নিজস্ব এক পদ্ধতিতে। সার্জন ডা. আবু সাইদের পেঁপে ডাটার এই চিকিৎসা পদ্ধতি এখন কাঁচিকাঁটা ইউনিয়নের চরজিংকিং এলাকার মানুষের মুখে মুখে ।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ডা. আবু সাইদ ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার গৌরঙ্গ বাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী হুমায়ুন কবির উচ্চ বিদ্যালয় গেইট ও সখিপুর বাজার জুঁই মেডিকেল হল নামে ২টি চেম্বার বসিয়ে ডাক্তারের পরিচয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছিল। কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠানিক সনদ না থাকায় এবং অপচিকিৎসার দায়ে স্থানীয় ব্যক্তিরা তাকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়।
এরপর তিনি একই উপজেলার বিচ্ছিন্ন জনপদ কাঁচিকাঁটা ইউনিয়নের চর জিংকিং গ্রামের আ. কাদির মোল্লার বাজারে গিয়ে আবার প্রতারণার ফাঁদে ফেলান অসহায় মানুষকে। জনবিচ্ছিন্ন দুর্গম চরের সরল প্রাণ মানুষকে সার্জন ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পরিচয়ে ব্যবসা শুরু করেন সাঈদ।
তার মিষ্টি চেহারা ও রসের কথায় মানুষ বিশ্বাস করে তার সেবা নেয়। ইতোমধ্যে এক নবজাতককে পেঁপের ডাটার মাধ্যমে বিচিত্র চিকিৎসা প্রদান করেন। চিকিৎসার কিছুক্ষণ পরই নবজাতক মারা যান।
স্থানীয়রা জানান, ডা. আবু সাঈদ নিজেকে সার্জন বলে দাবি করেন। তিনি হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল ও মানুষের চিকিৎসা করেন। সে বড় বড় টিউমার, গেজ ও পাইলস অপারেশন করেন আমাদের এলাকায়। ফোঁড়া থেকে ডেলিভারি সকল অপারেশনই তিনি করে থাকেন।
ধাত্রী খায়রুন নেছা বলেন, যে শিশুটি মারা গেছে তার ডেলিভানি ও চিকিৎসার জন্য আমাকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু আমি অবস্থা খারাপ দেখে ঢাকা বা নড়িয়ায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলি। শিশুটি পৃথিবীতে আসার পর পরই পেঁপের ডাটা দিয়ে ডা. আবু সাঈদ মুখের ভিতর ফু দেয়। এতে শিশুটির মুখের লালা নাক দিয়ে বের হয়ে শিশুটি মারা যান।
শিশুটির মামা আল আমিন খা বলেন, তার সাইনবোর্ড এবং ভিজিডিং কার্ড দেখে আমরা বড় ডাক্তার ভেবেছিলাম। কিন্তু তার ভুল চিকিৎসায় আমার ভাগ্নের মৃত্যু হয়। তার ক্ষমতার ভয়ে মামলা করতে পারিনি।
শিশুটির মা হালিমা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ডা. আবু সাঈদ আমার শিশুটিকে পৃথিবীর মুখ দেখতে দেয়নি। আমার শিশুটিকে মেরে ফেলেছে। আমি এর বিচার চাই।
এ বিষয়ে ডা. আবু সাঈদ বলেন, আমার চিকিৎসা পদ্ধতিতে ভুল হয়েছে। আমি কোনো মেডিকেলে পড়িনি। তবে চিকিৎসা করে মানুষের উপকার করছি। এই চরে আমি মানুষের মাঝে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখিয়েছি।
শরীয়তপুর সিভিল সার্জন ডা. মসিউর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এই মাত্র আপনার কাছ থেকে জানতে পারলাম। আমি সকল অপচিকিৎসকের বিরুদ্ধে সোচ্চার। এই বিষয়ে আমি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
ছগির হোসেন/এসএস/আরআইপি