কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, পানিবন্দী লক্ষাধিক
কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারসহ ১৫টি নদ-নদীর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। সেই সঙ্গে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ।
শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ফলে আরো নতুন কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সেই সঙ্গে কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী, উলিপুর, রৌমারী, রাজিবপুর, নাগেশ্বরী ও ফুলবাড়ী উপজেলার নদ-নদীর অববাহিকার দুই শতাধিক চর ও দ্বীপচরের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ সরবরাহ শুরু না হওয়ায় গত পাঁচদিন ধরে পানিবন্দী মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট। রাস্তা-ঘাট তলিয়ে থাকায় ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে প্রায় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
এদিকে, বন্যা দুর্গত এলাকার অনেক পরিবার গবাদিপশু নিয়ে উঁচু বাঁধ ও পাকা সড়কে আশ্রয় নিয়েছে। পাশাপাশি পানিতে ভেসে আসা এক বৃদ্ধ নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানি অপরিবর্তিত থাকলেও বেড়েছে দুধকুমারের পানি।
তিনি আরো জানান, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। ৯ উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়নে বন্যার পানি হানা দিয়েছে। গত দু’দিনে নদীর ভাঙনে আরো শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়েছে।
কুড়িগ্রাম বন্যা কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, সরকারি হিসাবে ৩১টি ইউনিয়নের ২৯০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ৩৫২কিঃ মিঃ এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে আছে। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩ হাজার ৯৩০ পরিবার। বন্যায় সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ১৩ হাজার ৬৪২ এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ৩০ হাজার ৬৬৯ পরিবার।
জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন জানান, বন্যা ও ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ১০ লাখ ৯৪ হাজার টাকা ও ৯২ মেট্রিক টন চাল ববাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে শুকনা খাবার ক্রয়ের জন্য।
নাজমুল হাসান/এএম/এমএস