শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ৪ : টার্গেট ছিল ইমামের উপর
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের কাছে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দুইজন পুলিশ সদস্যসহ ৪ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন এলাকাবাসী ও এক সন্ত্রাসী রয়েছেন।
এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। এদের মধ্যে পুলিশ সদস্যই বেশি। আহতদের মধ্যে দুই পুলিশ সদস্যকে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতাল থেকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকার সিএমএইচে নেওয়া হয়েছে। বাকিরা কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নিহতরা হলেন, পুলিশের কনস্টেবল জহিরুল হক, সানাউল হক ও এলাকাবাসী ঝর্ণা ভৌমিক। নিহত আরেক জনের নাম পরিচয় জানা যায়নি।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল ও একটি চাপাতি উদ্ধার করেছে। আহত অবস্থায় দুই সন্ত্রাসীসহ ৪ জনকে আটক করা করেছে পুলিশ।
আটক সন্ত্রাসীরা হলেন, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার আব্দুল হাই এর ছেলে শরিফুল ইসলাম ওরফে আবু মোকাত্বিল (২২) ও কিশোরগঞ্জের পশ্চিম তারপাশা এলাকার আব্দুস সাত্তারের ছেলে জাহিদুল হক (২০)। অন্য দুইজনের নাম জানা যায়নি।
এদিকে এ ঘটনার পর ঘটনায় বর্তমানে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ঘটনার পর থেকেই ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এসএম নূরুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির যৌথ অভিযান চলছে।
জানা গেছে, দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত শোলাকিয়া ঈদগাহে জামায়াত শুরু হওয়ার কথা ছিল সকাল ১০ টায়। কিন্তু ভোর থেকে হাজার হাজার মুসল্লি পায়ে হেটে শোলাকিয়ার দিকে আসতে থাকেন। রাস্তার দুই পাশে ও মাঠের আশপাশে অবস্থান নেন র্যাব-পুলিশের কয়েক হাজার সদস্য।
আগেই শহরে মাইকিং করা হয়েছিল নিরাপত্তার সার্থে মুসল্লিরা যেনো জায়নামাজ ছাড়া অন্য কিছু সঙ্গে না নেন। সে অনুযায়ী মাঠে যাওয়ার সময় টহল পুলিশ মুসল্লিদের তল্লাশি করছিল।
সকাল পৌনে ৯টার দিকে শোলাকিয়া ঈদগাহের উপর দিয়ে একটি হেলিকপ্টার চক্কর দেয়। এ সময় শোলাকিয়ার মাইকে বরা হয় ইমাম সাহেব এসেছেন হেলিকপ্টারে করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি মাঠে আসছেন।
এর কিছুক্ষণ পরই শোলাকিয়া মাঠের অদূরে শহরের আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যারয়ের কাছে মুফতি মোহাম্মদ আলী জামে মসজিদের মোড়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের ওপর বোমা হামলা করে সন্ত্রাসীরা।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন খান জানান, মুসল্লিদের বেশে সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। সকাল ৯টার দিকে নিরাপাত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা ৫/৬ জনের একটি দলকে তল্লাশি করছিল। এ সময় মুসল্লিবেশে সন্ত্রাসীরা পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। তারা প্রথমে বোমা ফাটিয়ে কুপিয়ে ৭ পুলিশ সদস্যসহ ৮ জনকে গুরুতর আহত করে। আহতদের হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান কনস্টেবল জহিরুল হক। পরে ময়মনসিংহ সামরিক হাসপাতালে মারা যান অপর পুলিশ কনস্টেবল সানাউল হক।
এদিকে ঘটনার পরপরই অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। সকাল সোয়া ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে আসার পরপরই একই এলাকায় ওৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা পুলিশের ওপর গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। পুলিশও পাল্টা গুলি করে। এক পর্যায়ে হামলাকারীরা মসজিদ সংলগ্ন একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে সেখান থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড নিক্ষেপ করে ও গুলি চালায়। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে পুলিশের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের গোলাগুলি হয়। এসময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ওই বাড়িটি চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে।
বেলা ১১টার দিকে ওই বাড়ি থেকে এক সন্ত্রাসী পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তবে এখনো তার নাম পরিচয় জানা যায়নি।
এদিকে বেলা ১২টা নাগাদ পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয় র্যাব, বিজিবিসহ অন্যান্য বাহিনী। এর কিছুক্ষণ পর পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আসে। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এসএম নূরুজ্জামান ঘটনাস্থলে আসেন। এরপরই তার নেতৃত্বে শুরু হয় সাঁড়াশি অভিযান।
ডিআইজি নূরুজ্জামান জানান, মুসল্লি বেশে সন্ত্রাসীরা অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের হামলায় ২ পুলিশ সদস্য নিহত হয়। পুলিশের হামলায় নিহত হয় এক সন্ত্রাসী। তবে তাদের সংখ্যা কত ছিল তা জানাতে পারেননি তিনি।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার কয়েকজন জানান, সন্ত্রাসীরা আল্লাহু আকবার বলে পুলিশের ওপর হামলা চালায়।
একটি সূত্র জানায়, সপ্তাহ খানেক আগে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে একটি জঙ্গি গোষ্ঠী কিশোরগঞ্জে আসে।
পুলিশের গুলিতে আহত এক সন্ত্রাসী জানায়, তারা ৫ জনের একটি দল গত ২৭ জুন অপারেশন চালাতে কিশোরগঞ্জে আসে। কে তাদের পাঠিয়েছে তা তিনি জানেনা বলেও জানান।
জানা গেছে, সন্ত্রাসীদের মূল টার্গেট ছিল শোলাকিয়া মাঠের ইমামের উপর।
এ দিকে হামলার পর নির্দিষ্ট সময়েই ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। তবে শোলাকিয়ার ঈদগাহ মাঠে যেতে পারেননি অনেকেই।
দুপর আড়াইটার দিকে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে র্যাবের বোম ডিসপোজাল ইউনিটের একটি দল করে কিশোরগঞ্জে আসে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে নিরাপত্তা বাহিনী।
নূর মোহাম্মদ/ এমএএস/পিআর