ঝাড়ুদারই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক!
ডাক্তার নেই, নার্স নেই, কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই, পরীক্ষা নিরীক্ষা করার কোনো মেশিন নেই। আছে কেবল একটি সাইনবোর্ড আর ঝাড়ুদারসহ কয়েকজন দালাল। সাইনবোর্ডে লেখা নোভা ডায়াগনোস্টিক ল্যাব। পাশাপাশি সাইনবোর্ডে ৬ জন চিকিৎসকের নাম লেখা রয়েছে।
রোগী এলে ঝাড়ুদার নিজেই এপ্রোন পরে হয়ে যান চিকিৎসক। শুধু তাই নয় প্রয়োজন হলে বিভিন্ন রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হতেও দিধা করেন না তিনি। শুধুমাত্র একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিনের পর দিন প্রতারণা করে দরিদ্র রোগীদের কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছে সর্বস্ব।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বরিশাল নগরীর জর্ডন রোড এলাকার ওই ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে কোতয়ালী ও ডিবি পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে আটক করেছে ওই ঝাড়ুদারসহ ৪ জনকে।
আটকরা হলেন, ব্রাঞ্চ রোড এলাকার শাহিন ওরফে ঝাড়ুদার শাহিন, মধ্য রুপাতলী এলাকার রিপন, বাকেরগঞ্জের চুন্নু মৃধা এবং ভোলার রাজু।
জানাযায়, নোভা ডায়গনোস্টিক সেন্টারের মালিক মোট ৮ জন। এদের মধ্যে ল কলেজের শিক্ষক, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতারা রয়েছেন।
অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া কোতয়ালী থানা পুলিশের এসআই সাইদুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকেলে বরগুনার মধ্য বামনা এলাকার শামীম হোসেন ও তার বোন রাশিদা বেগম চিকিৎসার জন্য বরিশাল আসেন। বিকেল ৫টার দিকে রুপাতলী বাসস্ট্যান্ডে নেমে ওই ডায়াগনোস্টিকের দালাল রাজুর খপ্পরে পড়ে। রাজু রোগীদের ভুল বুঝিয়ে ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে এনে বাইরে থেকে তালাবন্ধ করে রাখে।
এরপর ঝাড়ুদার শাহিন এপ্রোন পরে নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দেন। দালালের খপ্পরে পড়েছেন বুঝতে পেরে রাশিদা মেয়ে জামাইকে ফোন দেন। তিনি বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে অবহিত করেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে চারজনকে আটক করা হয়।
পরে তাদেরকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করা হলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কল্যান চৌধুরী ঝাড়ুদার শাহীনকে ১৫ হাজার টাকা ও অপর তিন নের মধ্যে একজনকে ৫ হাজার, একজনকে ২ হাজার এবং অপরজনকে ১ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ও আনাদায়ে ১ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেন।
প্রতারণার শিকার রোগী শামীম হোসেন বলেন, আমাদেরকে চুক্তিতে এখানে নিয়ে আসে দালাল রাজু। সে (রাজু) জানায় চিকিৎসক দেখানোসহ রোগ নির্ণয় করে ৪ হাজার টাকার মধ্যে সব টেস্ট করিয়ে দেবেন। আমরা বুঝে ওঠার আগেই দালাল রাজু তার নিজস্ব মাহেন্দ্রতে করে জর্ডন রোড নিয়ে আসে। আমাদেরকে একটি কক্ষে আটকে রেখে ডায়াগনোস্টিকের মালিক শাহিনকে ফোন দিয়ে জানায় রোগী আছে তাড়াতাড়ি আসুন।
রাজুর কথা এবং ভেতরের পরিবেশ দেখে আমাদের সন্দেহ হয়। কারণ ভেতরে পরীক্ষা নিরীক্ষার কোনো যন্ত্রাংশ নেই। নেই কোনো লোকজনও।
আটকরা জানান, কোনো চিকিৎসক ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে বসে না। দালালের মাধ্যমে রোগী এনে বাইরে পরীক্ষা নিরীক্ষা করানো হয়। এর পার্সেনটেজ দেয়া হয় সাইনবোর্ডে যাদের নাম লেখা রয়েছে সেইসব চিকিৎসকদের। ভুয়া ওই ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন, যুবলীগ নেতা শাহাবুদ্দীন, তারেক, পরিক্ষিত দাশ, সবুজ, বরিশাল ল কলেজের শিক্ষক মনি বেগম, শেরেবাংলা স্কুলের শিক্ষক শিমুল বেগম, মাছ ব্যবসায়ী মিরাজ সিকদার এবং মো. আলাল।
সাইফ আমীন/এফএ/আরআইপি