ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

দেড় হাজার জনকে আসামি করে বিজিবির মামলা

প্রকাশিত: ১২:১৩ পিএম, ২৭ মে ২০১৬

রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কাপ্তাই উপজেলার রাইখালীতে বিজিবি এবং এলাকাবাসীর উত্তেজনা সৃষ্টির ঘটনায় এলাকার লোকজন চরম আতঙ্কে রয়েছে। এ ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে প্রায় অজ্ঞাত এক-দেড় হাজার জনকে আসামি করে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে চোরাই কাঠ পাচারকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এলাকাজুড়ে বিরাজ করছে চাপা উত্তেজনা। গ্রেফতার আতঙ্কে এলাকার লোকজন পালিয়ে গেছে।

শুক্রবার সেখানে গিয়ে দেখা যায় ঘটনাস্থল রাইখালীর ডংছড়ি, বড়খোলাপাড়াসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি পাড়া পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে।

ঘটনার বিষয়ে কথা হয় বিজিবি, পুলিশ কর্মকর্তা ও স্থানীয়দের সঙ্গে।

Kaptai-Raikhali-Attact

এ সময় তারা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ১৯ বিজিবির রাইখালীর ডংছড়ি ক্যাম্পের পাশে স্থাপিত চেকপোস্টের সামনে পড়লে অবৈধ চোরাই কাঠ বোঝাই একটি চাঁদের গাড়িকে (খোলা জীপ) থামার জন্য সংকেত দেয় বিজিবির টহলরত সদস্যরা। কিন্তু চেরাচালান বোঝাই গাড়িটি দ্রুতগতিতে চেকপোস্ট অতিক্রম করে পালানোর চেষ্টা করে। ওই সময় গাড়িটি আটকাতে বিজিবির সদস্যরা ধাওয়া করলে রাস্তায় গাড়ি উল্টে সাদ্দাম হোসেন নামে এর হেলপার ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

এছাড়া গুরুতর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পাঠালে গভীর রাতে সেখানে গাড়ির চালক চিকিৎসাধীন মো. জাবেদ মারা যান। ঘটনাটিকে ঘিরে এক পর্যায়ে বিজিবি এবং উত্তেজিত জনতার মুখোমুখি পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। পরিস্থিতি অনেকটা রূপ নেয় সংঘর্ষে।

ওই সময় উত্তেজিত জনতা বিক্ষুব্দ হয়ে বিজিবির ডংছড়ি চেকপোস্টে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং ভাঙচুর চালায়। আগুনে পুড়ে যায় গোলঘরসহ চেকপোস্টটি। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে বিজিবির সদস্যরা। এতে জনতা পিছু হঁটলে শেষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

Kaptai-Raikhali

তবে বিজিবি দাবি করে বলেছে, জনতার সঙ্গে তাদের কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। চোরাচালানিদের উস্কানিতে স্থানীয় জনতা বিজিবির ক্যাম্পে হামলা চালায়। ওই সময় সরকারি সম্পদ রক্ষায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়া হলেও কারও গায়ে গুলি চালানো হয়নি বলে জানান ১৯ বিজিবির ওয়াছড়া জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সোহেল উদ্দিন পাঠান।

তিনি বলেন, ওই ঘটনায় বিজিবির পক্ষে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে প্রায় অজ্ঞাত এক-দেড় হাজার জনকে আসামি করে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। একটি মামলা হয়েছে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়া থানায় অবৈধ কাঠ পাচার ও চোরাচালানের বিরুদ্ধে। অপর মামলাটি হয়েছে চন্দ্রঘোনা থানায় সরকারি কাজে বাধা দেয়া, ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি এবং সরকারি সম্পদে আগুন ধরিয়ে দেয়ার অপরাধের বিরুদ্ধে।
 
এদিকে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ঘটনার পর রাইখালীর স্থানীয় বড়খোলা পাড়াবাজার বন্ধ রয়েছে। এলাকার পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও জনমনে বিরাজ করছে ভীতিকর অবস্থা। ঘটনার পর থেকে গ্রেফতার এড়াতে লোকজন পালিয়ে যাওয়ায় এলাকায় ভুতুড়ে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাস্থলের আশেপাশের এলাকাগুলো পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। আতঙ্কে মুখ খুলছে না এলাকার নারী-পুরুষ কেউ। এলাকায় পুলিশ ও বিজিবি টহল জোরদার করা হয়েছে।
 
ঘটনার বিষয়ে চন্দ্রঘোনা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহুরুল আনোয়ার বলেন, বিজিবির ওই চেকপোস্টে হামলা ও অগ্নি সংযোগ এবং কাঠ পাচারের ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে চন্দ্রঘোনা ও রাঙ্গুনীয়া থানায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত প্রায় দেড় হাজার জনকে আসামি করে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

কাপ্তাই থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রঞ্জন কুমার সামন্ত জানান, এলাকা বর্তমানে শান্ত রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলের আশেপাশের এলাকা ও ডংছড়ি বিজিবি চেকপোস্টে অতিরিক্ত বিজিবি, পুলিশ ও আনসার মোতায়েন করা হয়েছে।

সুশীল প্রসাদ চাকমা/এফএ/এবিএস

আরও পড়ুন