ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

জমি লিখে না দেওয়ায় বাবাকে মানসিক রোগী সাজিয়ে হাসপাতালে ভর্তি!

জেলা প্রতিনিধি | পাবনা | প্রকাশিত: ০৫:০১ পিএম, ২৪ মার্চ ২০২৫

বসতবাড়ির ১৯ শতক জমি লিখে না দেওয়ায় নাসির উদ্দিন (৫০) নামের এক ব্যক্তিকে মানসিক রোগী সাজিয়ে মানসিক হাসপাতালে ভর্তির অভিযোগ উঠেছে তার স্ত্রী-সন্তানের বিরুদ্ধে। পরে ভুক্তভোগীর ভাগনের সাধারণ ডায়েরির (জিডি) সূত্র ধরে ৯ দিন পর তাকে মানসিক হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এমনই ঘটনা ঘটেছে পাবনার চাটমোহর উপজেলার বিলচলন ইউনিয়নের দোলং গ্রামে।

ভুক্তভোগী নাসির উদ্দিন ওই গ্রামের মৃত আবির মোল্লার ছেলে। তার স্ত্রীর নাম বেদেনা খাতুন (৪৫)। তাদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে। তার মধ্যে বড় মেয়ে নাজমা খাতুনের বিয়ে হয়েছে একই উপজেলার বোয়াইলমারী গ্রামের মৃত কিতাব মাস্টারের ছেলে আসাদ হোসেনের সঙ্গে। ছোট মেয়ে শামসুন্নাহারের বিয়ে হয়েছে পৌর সদরের আফ্রাতপাড়া মহল্লার মিছা প্রামাণিকের ছেলে জাহিদ প্রামাণিকের সঙ্গে। আর একমাত্র ছেলে মাসুম মোল্লা (২১) সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের বিএ (অনার্স) প্রথমবর্ষের ছাত্র।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

অভিযোগে সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন এলাকায় গাছ কাটা ও ঝোড়ার কাজ করে সংসার চালান হতদরিদ্র নাসির উদ্দিন। এক বছর আগে রামনগর গ্রামের মোফাজ্জল সরদারের কাছ থেকে বাৎসরিক ৪৫ হাজার টাকায় জমি লিজ নেন তিনি। সেই জমি আবাদ করে সচ্ছলতা ফেরানোর চেষ্টা করছিলেন। এর মাঝে এক মাস আগে বসতবাড়ির ১৯ শতক জমি নাসির উদ্দিনকে লিখে দিতে বলেন তার ছেলে মাসুম। না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ ছেলে বাবাকে মারধর করেন। সেইসঙ্গে লিজ নেওয়া জমির মালিক মোফাজ্জল সরদারকে নাসির উদ্দিনের স্ত্রী-সন্তান বলেন, তারা আর জমি লিজ নেবেন না। কিন্তু নাসির উদ্দিনের ইচ্ছা তিনি জমি লিজ নিয়ে আবাদ করবেন। কিন্তু তাতে বাধ সাধেন তার স্ত্রী বেদেনা খাতুন, ছেলে মাসুম এবং জামাই আসাদ। এ নিয়ে দেখা দেয় দ্বন্দ্ব। তখন নাসির উদ্দিনের ভাগনে শরীফুল ইসলাম জানতে পেরে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।

ভুক্তভোগী নাসির উদ্দিনের ভাষ্যমতে, গত ২২ ফেব্রুয়ারি প্রথমে তাকে বেঁধে পাবনায় নিয়ে যান এক চিকিৎসকের কাছে। সেখানে একটি ইনজেকশন দিয়ে কিছু ওষুধ লিখে নিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসেন। নাসির উদ্দিন ভয়ে সেই ওষুধ খাননি। পরে আর বাড়ি থেকে বের হতে দেননি।

জমি লিখে না দেওয়ায় বাবাকে মানসিক রোগী সাজিয়ে হাসপাতালে ভর্তি!

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

এর মধ্যে গত ১২ মার্চ আবারও নাসিরের কাছ থেকে জমি লিখে চান ছেলে মাসুম, স্ত্রী বেদেনা ও মেয়ে জামাই। তাতে রাজি না হওয়ায় ১৩ মার্চ ভোরের দিকে সবার অগোচরে মানসিক রোগী সাজিয়ে হাত-পা ও কোমর বেঁধে পাবনা মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যান তারা। সেখানে চিকিৎসক দেখিয়ে পার্শ্ববর্তী একটি বেসরকারি মানসিক হাসপাতালে (সুরমা ক্লিনিক) ভর্তি করে রেখে আসেন। সেখানে ৯ দিন ভর্তি ছিলেন। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।

নাসির উদ্দিনের ভাগনে শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘নিখোঁজ মামার সন্ধান চেয়ে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছি। তার স্ত্রী-সন্তানের কাছে জানতে চাইলে তারা কিছু বলে না। পরে বাধ্য হয়ে গত ১৯ মার্চ চাটমোহর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করি। পরে পুলিশ জানতে পারে পাবনায় সুরমা ক্লিনিকে মানসিক রোগী হিসেবে ভর্তি রয়েছেন নাসির উদ্দিন। তাকে উদ্ধার করতে পুলিশ ও স্থানীয়রা ক্লিনিকে গেলে কর্তৃপক্ষ প্রথমে কোনো পাত্তা দেয়নি। পরে পুলিশ নাসির উদ্দিনের জবানবন্দি নিয়ে নিশ্চিত হয় তিনি মানসিক রোগী নন। ভয়ে তার স্ত্রী-সন্তানও তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেয় পুলিশকে। কিন্তু ২১ মার্চ বাড়ি থেকে পালানোর চেষ্টা করেন স্ত্রী বেদেনা খাতুন ও ছেলে মাসুম। টের পেয়ে এলাকাবাসীর সহায়তায় তাদের আটক করা হয়। পরে ওইদিন তাদের সঙ্গে নিয়ে সুরমা ক্লিনিকে গিয়ে নাসির উদ্দিনকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়।’

বিজ্ঞাপন

রেজাউল করিম, ফজলুর রহমান ও মহসিন মোল্লাসহ স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শী জানান, নাসির উদ্দিনের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। তাকে কখনো মানসিক রোগী মনে হয়নি। এমন বউ-ছেলের শাস্তি হওয়া উচিত।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত নাসির উদ্দিনের ছেলে মাসুম মোল্লা বলেন, ‘আমার বাবা রাতে ঘুমান না। মধ্যরাতে ঘরের বাইরে এখানে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকেন। কথাবার্তাও অসংলগ্ন বলেন। এর আগেও ডাক্তার দেখাইছি। ডাক্তার বলেছেন, তার মাথায় সমস্যা আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মানসিক হাসপাতালে নিয়ে বাবাকে ডাক্তার দেখাই। সেখানেও তাকে দেখে ওষুধ লিখে দেন ও হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন ডাক্তার। পরে সরকারি হাসপাতালে সিট না থাকায় পাশের ক্লিনিকে ভর্তি করি। এখানে আমাদের নামে যেসব কথা আব্বা বলছেন, তা সঠিক নয়।’

বিজ্ঞাপন

নাসির উদ্দিনের স্ত্রী বেদেনা খাতুন বলেন, ‘ডাক্তার বলেছে তার মাথায় সমস্যা আছে। আমাকেও যখন তখন যা তা ভাষায় উল্টা পাল্টা কথা বলে। জমি লিখে নেওয়ার কোনো বিষয় নয়।’

এ বিষয়ে চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল আলম বলেন, অভিযোগটি পাওয়ার পর সবার সঙ্গে কথা বলে আমরা বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করেছি। তখন সন্দেহ হওয়ায় পুলিশ অফিসারকে ক্লিনিকে পাঠিয়ে আসলে নাসির উদ্দিন মানসিক রোগী কি না জানার চেষ্টা করি। সেখান থেকে নিশ্চিত হই, তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ নন।

আলমগীর হোসাইন নাবিল/এসআর/এমএস

বিজ্ঞাপন