সিলেটে ব্র্যান্ডের নামে গলাকাটা ব্যবসা

সিলেটে একের পর এক নামিদামি ব্র্যান্ডের দোকান-শোরুম বাড়ছে। নগরীর অলিগলিতেও এখন গড়ে ওঠেছে বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের দোকান। ঈদকে সামনে রেখে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ও একদরের এসব নামিদামি ব্র্যান্ডের শোরুমগুলোতে ভিড় বাড়ছে অভিজাত বা উচ্চবিত্ত শ্রেণির ক্রেতাদের।
প্রতিযোগিতার বাজারে অভিজাত শ্রেণির ক্রেতাদের টানতে সাধারণ বিপণী বিতানগুলোর রূপও এখন ভিন্ন। একসময় সব শ্রেণিপেশার মানুষ যেসব বিপণী বিতানে ঈদ বাজার করতে পারলেও এখন সেসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে সাঁটানো হয়েছে একদরের স্টিকার। নিয়ন্ত্রণহীন এসব দোকানে চলছে গলাকাটা ব্যবসা। চোখ ধাঁধানো ডেকোরেশন ও আলোকসজ্জায় সজ্জিত এসব দোকানে এখন ঢুকতে সাহস পাচ্ছেন না মধ্যবিত্তরাও।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার, পূর্বজিন্দাবাজার, জল্লারপাড়, নয়াসড়ক, কুমারপাড়া ও লামাবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য ব্র্যান্ডের কাপড়ের দোকান ও শোরুম রয়েছে। এসব দোকানে একদামে বিক্রি হচ্ছে পোশাক। কোনো ধরণের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় অনেকটা গলাকাটা ব্যবসা চলছে এসব দোকান-শোরুমগুলোতে। অভিজাত শ্রেণির ক্রেতা ছাড়া এসব দোকানগুলোতে কেনাকাটা করার মধ্যবিত্তের সাধ্য নেই।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
তাই এবারের ঈদে মধ্যবিত্তরাও ছুটছেন নিম্নবিত্তের বাজারে। অনেকে ফুটপাতেও সারছেন কেনাকাটা। শনিবার (২২ মার্চ) ও আগেরদিন শুক্রবার ছুটির দিনে সিলেটের বিভিন্ন বিপণীবিতান ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।
প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটে প্রতিবছর রমজানের শেষ দশকে জমে ওঠে ঈদের বাজার। বেশিরভাগ পরিবারে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স দিয়ে চলে ঈদের বাজার। যার কারণে রমজানের শেষের দিকে জমে ওঠে ঈদের কেনাকাটা।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার ছুটির দিনে ক্রেতাদের ভিড় ছিল সিলেটের লালদিঘীরপাড় হকার্স মার্কেট। এ মার্কেট মূলত নিম্নবিত্তদের কেনাকাটার একমাত্র ভরসা। আবার সিলেটজুড়ে পাইকারি দরে কাপড় বিক্রিরও অন্যতম বাজার এটি। শুক্রবার বাদ জুমআ হকার্স মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে ক্রেতারা ভিড় জমিয়েছেন। নিম্নবিত্ত পরিবারের সঙ্গে মধ্যবিত্তরাও ঘুরছেন ঈদের পোশাক কিনতে।
হকার্স মার্কেটের ভেতরে কথা হয় সিলেট নগরীর একটি স্কুলের শিক্ষক এম এ লতিফের সঙ্গে। তিনি বলেন, জিন্দাবাজার, পূর্বজিন্দাবাজার ও নয়াসড়ক এলাকায় বেশিরভাগ নামিদামি ব্র্যান্ডের কাপড়ের দোকান। বড় বড় বিপণী-বিতানগুলোতেও প্রতিযোগিতা করে বিক্রি চলছে। তাই এবার হকার্স মার্কেট থেকে পোশাক কিনতে এসেছি।
তিনি বলেন, এ মার্কেটে বিভিন্ন মানের পোশাক রয়েছে। ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে কিনেতে পারলে বাইরের চাকচিক্যের দোকান থেকেও ভালো।
বিজ্ঞাপন
মামুন আলী নামে এক ক্রেতা বলেন, আমরা সব সময়ই এ মার্কেট থেকে কাপড় কিনি। ঈদের বাজারও এখান থেকে করা হয়। বিভিন্ন বয়সীদের পোশাক ন্যূনতম ২৫০-৩০০ টাকায়ও পাওয়া যায়। ভালো মানের পোশাক আরও দামেও মিলে।
লালদিঘীরপাড় হকার্স মার্কেটের সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, হকার্স মার্কেটে সব ধরনের পোশাক সাধ্যের মধ্যে পাওয়া যায়। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষরা স্বস্তিতে এখান থেকে ঈদের কেনাকাটা করতে পারেন। এ মার্কেটে মানভেদে বিভিন্ন ধরনের পোশাক স্বল্পমূল্যে পাওয়া বলে ক্রেতারা প্রতিবছরই ভিড় জমান।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, এবার এখন পর্যন্ত ঈদের বাজার তেমনটা জমে ওঠেনি। আশা করা যাচ্ছে আরও দুই-তিনদিন গেলে বাজার জমে ওঠবে।
সিলেটে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের কেনাকাটার জন্য অন্যতম হাসান মার্কেট। শনিবার সকাল থেকে হাসান মার্কেটেও ক্রেতাদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। গোলাপগঞ্জের লক্ষণাবন্দ থেকে ছেলে সন্তানকে নিয়ে ঈদের কেনাকাট করতে এসেছেন মোবারক হোসেন। তিনি বলেন, বড় বড় মার্কেটে দাম বেশি। আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য হাসান মার্কেট, হকার্স মার্কেট ও মধুবন সুপার মার্কেট যথেষ্ট। প্রতি ঈদে এ তিন মার্কেট ঘুরে সন্তানদের জন্য কেনাকাটা করি। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
বিজ্ঞাপন
হাসান মার্কেটে কথা হয় নগরীর আম্বরখানা খাসদবির এলাকার বাসিন্দা রাহেলা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখানে মহিলা ও বাচ্চাদের কাপড় তুলনামূলক অন্যান্য মার্কেটের চেয়ে সস্তা। মোটামুটি ১৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা বাজেট হলে এখানে কেনাকাটা করা যায়।
হাসান মার্কেটের পারভীন রেডিমেইটস ব্যবসায়ী কামিল খান বলেন, মার্কেটে মেয়ে শিশুদের জন্য সালোয়ার–কামিজ, নায়রাকাট জামা, কাফতান, স্কার্ট-টপস, প্যান্ট টপ, ফ্রকসহ বিভিন্ন পোশাক রয়েছে। মানভেদে ৫০০ টাকা থেকে বিভিন্ন দামের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের পোশাকের দাম মধ্যবিত্তদের সাধ্যের মধ্যে রয়েছে।
তিনি বলেন, এবারের ঈদে এখনও ব্যবসা তেমন জমে ওঠেনি। ক্রেতার তুলনায় দর্শনার্থী এখনও অনেক বেশি। কেউ কেউ ঘুরে বাজার দর যাচাই করছেন। দুয়েকদিন গেলে কেনার জন্য আসবেন।
বিজ্ঞাপন
আহমেদ জামিল/আরএইচ/এএসএম
বিজ্ঞাপন