কক্সবাজার
ঈদে ১১ দিনের টানা ছুটিতে পর্যটন জমবে মাত্র পাঁচদিন!

স্বাধীনতা দিবস দিয়ে শুরু আর সাপ্তাহিক মিলে এবার ঈদুল ফিতরের টানা ১১ দিনের ছুটির ফাঁদে পড়ছে দেশ। সরকারি চাকরিজীবীদের পরিবারে এ টানা ছুটি ঈদ আনন্দের মাত্রা বাড়াচ্ছে।
বুধবার (২৬ মার্চ) স্বাধীনতা দিবস দিয়ে শুরু হচ্ছে ছুটি। বৃহস্পতিবারের পর শুক্র-শনি সাপ্তাহিক ছুটি। ঈদুল ফিতর ৩১ তারিখ হলে ৩০ মার্চ থেকে গণনা হচ্ছে ঈদের ছুটি। আবার রোজা ৩০টি হলে ঈদের নামাজ হবে ১ এপ্রিল। তখন ২ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়বে ছুটি। ৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার। এদিন সরকারি দপ্তর খোলার দিন হলেও ৪-৫ (শুক্র-শনি) সাপ্তাহিক ছুটি পড়েছে। এভাবেই এবারের ঈদুল ফিতর ১১ দিনের ছুটির ফাঁদে ফেলেছে সবাইকে।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
হিসাবের কোটায় ১১ দিন ছুটি হলেও কক্সবাজারের পর্যটন জমবে মাত্র পাঁচদিন। সেভাবেই কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল বুকিং হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের বিপণন ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ নুর সোমেল।
তার মতে, ১ এপ্রিল থেকে ৫ এপ্রিল কক্সবাজারে পর্যটক সমাগম বাড়বে। এরইমধ্যে তারকা হোটেলগুলোতে ১-২ এপ্রিলের জন্য ৬০-৬৫ শতাংশ রুম বুকিং হয়ে গেছে। আর ৩-৪ এপ্রিলের বুকিং এসেছে ৯০-৯৫ শতাংশ। ৫ এপ্রিল আবার ৫০-৬০ শতাংশে নেমেছে। এ পাঁচদিনে গড়ে ৭০-৮০ শতাংশ রুম বুকিং থাকবে বলে আশা করা যায়।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন:
ইমতিয়াজ নুর সোমেল বলেন, টানা বন্ধ ১১ দিন হলেও রোজার শেষ দিন থেকেই আনন্দ ভ্রমণের পরিকল্পনা আঁকছেন ভ্রমণপ্রেমীরা। আন্তরিক সেবায় কক্সবাজারের প্রতি সবাইকে আকৃষ্ট করার তাগাদা থাকে আমাদের।
বিজ্ঞাপন
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট ক্লাব ও ট্যুরস অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (টুয়াক) সভাপতি রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘পরিচ্ছন্ন ভ্রমণপিয়াসীরা ভোগান্তি এড়িয়ে নিরাপদ অবকাশ যাপনে পছন্দের হোটেল-মোটেল-কটেজে এরইমধ্যে বুকিং দিয়েছেন। এতে গরমেও পর্যটন ব্যবসা চাঙা হওয়ার ইঙ্গিত পাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। ২৬ মার্চের পর বন্ধে রমজানেরও কিছু বুকিং আছে জেনেছি, তবে তা উল্লেখ করার মতো নয়। কিন্তু ১ থেকে ৫ এপ্রিলের জন্য বুকিং তুলনামূলক ভালো হচ্ছে।’
পর্যটন উদ্যোক্তা মিজানুর রহমান মিল্কী জানান, কক্সবাজারে তারকা ও নন-তারকা, গেস্ট হাউজ ও কটেজ মিলে অন্তত ৫০০ আবাসিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব আবাসনে দৈনিক সোয়া লাখের বেশি অতিথি অবস্থান করতে পারেন। তবে, তারকা হোটেলের পরিমাণ হাতেগোনা অর্ধশতের মতো। গেস্ট হাউজ, ফ্ল্যাট, স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট এবং কটেজ শ্রেণির আবাসন বেশি। এখানে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরাই বেশি আতিথেয়তা নেন। এসব হোটেলে পর্যটক বাড়লে কক্সবাজার লোকারণ্য হয়।
তিনি বলেন, এ ক্যাটাগরির হোটেলে আগাম বুকিং কমই দেওয়া হয়। তারা ওয়াকিং গেস্টদের চাহিদার বিপরীতে নিয়মের চেয়ে দু-তিনগুণ ভাড়া নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এরপরও ঈদুল ফিতরে কক্সবাজার লোকারণ্য হবে বলে আশা করছি।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিন জানা গেছে, প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদ অতিথি বরণে হোটেল-মোটেল সাজানো হচ্ছে। সবকিছুতেই যেন বাড়তি মনোযোগ। অনেকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করছেন ব্যবহার্য পণ্য। রুমে দেওয়া হচ্ছে নতুন রং। জেলা সদরের বাইরেও হিমছড়ি, দরিয়ানগর, ইনানী, মহেশখালী, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ জেলার সব পর্যটন স্পটগুলোকে ইজারাদাররা সাজাচ্ছেন নতুন করে।
হোটেল সি-নাইট গেস্ট হাউজের ব্যবস্থাপক শফিক ফরাজী বলেন, ‘আমাদেরও কিছু কিছু বুকিং আসছে। সবখানে খবরাখবর নিয়ে ৫০ শতাংশ আগাম বুকিং দিলেও বাকি রুম ওয়াকিং গেস্টদের জন্য রাখা হচ্ছে। চাহিদা বাড়লে রুম ভাড়ায় ডিসকাউন্ট দেওয়া লাগে না।’
কক্সবাজার হোটেল ও গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, আবহাওয়া যা-ই থাক, ঈদুল ফিতরে পর্যটন আবারও চাঙা হবে এমনটি বিশ্বাস। তবে, বন্ধ পড়া ১১ দিনই ব্যবসা জমলে পর্যটন ব্যবসায়ীরা লাভবান হতো।
বিজ্ঞাপন
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ জানান, পর্যটক যা-ই আসুক, সব পর্যটন স্পটগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুতি শুরু করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও অপরাধ দমনে জেলা পুলিশের সহযোগিতায় কয়েকটি ভাগে সাজানো হচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশকে। পাশাপাশি সৈকতে বিপদাপন্নদের উদ্ধারকারী লাইফগার্ডদের প্রশিক্ষণ আরও জোরদার করা হয়েছে। টেকনাফ ও ইনানীসহ সব পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্বপালন করবে বলেও জানান তিনি।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, অতীতে প্রতি ঈদের ছুটিতে পর্যটকের ভিড় বেড়েছে কক্সবাজারে। এবারও এমনটি হতে পারে। এসময়ে বৃষ্টি হলে সৈকতের চিত্র আরও মোহনীয় হয়ে উঠবে। ঈদ উপলক্ষে পর্যটকে টইটম্বুর হবে বেলাভূমি এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানান, ভ্রমণকারীদের বিচরণ নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের একাধিক টিম টহলে থাকবে। পুলিশ-র্যাবসহ সাদা পোশাকের শৃঙ্খলা বাহিনীও টহলে থাকবে।
বিজ্ঞাপন
এসআর/জেআইএম
বিজ্ঞাপন