যে রেস্তোরাঁয় বিনামূল্যে মেলে সেহরি-ইফতার

রমজানে প্রতিদিন তিন শতাধিক রোজাদারকে সেহরি ও ইফতার করান রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম। ৯ বছর ধরে তিনি এলাকার অসহায় রোজাদারদের জন্য এ আয়োজন করেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌর শহরের কাঁচা বাজারের রফিক হোটেলের মালিক রফিকুল ইসলাম। তিনি পৌর শহরের কেশবপুর গ্রামের মৃত খাজামুদ্দিনের ছেলে। ক্ষুদ্র এ হোটেল মালিক ২০১৬ সাল থেকে রমজান মাসে অসহায় দুস্থ ও সাধারণ রোজাদার মানুষকে বিনা পয়সায় ইফতার ও সেহরি করান।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
তিনি বছরের ১১ মাস ব্যবসা করে যা আয় করেন সেখান থেকে কিছু টাকা জমিয়ে রাখেন। রমজান মাস শুরু হলে ব্যতিক্রমী এমন আয়োজন শুরু করেন।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
রফিকের দেওয়া ইফতারিতে থাকে, গরুর মাংসের বিরিয়ানি, খেজুর ও ঘাটিসহ নানা সালাদ। সেহরিতে গরুর মাংস, মাছ, ডিম, সবজি, ভাজি ও ভর্তা খাওয়ানো হয়। সেই সঙ্গে থাকে দুধ। ইফতারে দেড়শো থেকে দুইশো ও সেহরিতে দেড়শোর মতো রোজাদার এখানে খেতে আসেন। বিনামূল্যে খাবার পেয়ে বেশ খুশি তারা। আর এমন উদ্যোগে মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন হোটেল মালিক রফিক।
আহসান হাবিব নামে এক রোজাদার বলেন, আমি নওগাঁ থেকে গাড়িতে মাল নিয়ে এসেছি। এখানে এসে দেখি ইফতারের সময় হয়ে গেছে। এ রেস্তোরাঁয় ইফতার করে মালিককে টাকা দিতে চাইলে তিনি টাকা নেননি। পরে শুনতে পেলাম এখানে সেহরি ও ইফতার ফ্রি খাওয়ানো হয়।
বিজ্ঞাপন
দুলাল হোসেন নামের একজন বলেন, আমার বাড়ি বগুড়ার সাড়িয়াকান্দিতে। আক্কেলপুরে একটি কোম্পানিতে চাকরি করি। প্রায় এখানে এসে ইফতার করি। পাশাপাশি সব শ্রেণিপেশার শতশত মানুষ এখানে বিনামূল্যে এসে ইফতার ও সেহরি করেন। এমন আয়োজন আমার চোখে আগে কখনও পড়েনি, এখানে প্রথম দেখলাম। তাকে সাধুবাদ জানাই।
আক্কেলপুর উপজেলার শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামের আরিফুল ইসলাম বলেন, ছোট ব্যবসায়ী হয়েও তিনি মানুষের সেবা করছেন। অনেকের অনেক টাকা থাকলেও এমন মহৎ কাজ করেন না। এখানে সর্বস্তরের মানুষ খেতে আসেন। বিশেষ করে আমার মতো ব্যাচেলরদের জন্য অনেক সুবিধা হচ্ছে। আমরা রান্না করতে পারি না। এজন্য এখানে এসে খাবার খেতে পারছি।
বিজ্ঞাপন
রেস্তোরাঁ মালিক রফিকুল ইসলাম সোনার জাগো নিউজকে বলেন, একটা মানুষ যখন সারাদিন রোজা রেখে কোথাও দাঁড়িয়ে থেকে ইফতার করে তখন আমার খুব খারাপ লাগতো। এজন্য ২০১৬ সালে উদ্যোগ নেই যে মানুষকে আমারা বিনামূল্যে ইফতার ও সেহরি করাবো। এ জন্য প্রতিবছর আয় থেকে কিছু টাকা সঞ্চয় করে রাখি। এরপর রমজান মাস এলে সেই টাকা থেকে বিনামূল্যে ইফতার ও সেহরির আয়োজন করি।
তিনি বলেন, এখানে হাসপাতালের রোগী-স্বজন, যানবাহনচালক, রেলস্টেশনের যাত্রী, শ্রমিকসহ প্রতিদিন তিন শতাধিক মানুষ আসেন ইফতারি-সেহরি করতে আসেন। এটা আমার অনেক ভাল লাগে। যতদিন বেঁচে আছি ততদিন এ কার্যক্রম চালিয়ে যাবো।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে আক্কেলপুর কলেজ বাজার বণিক সমবায় সমিতির সভাপতি কাজী শফিউদ্দীন জাগো নিউজকে বলেন, রফিক যে কার্যক্রম করছে তাতে আমরা ও এলাকার মানুষ অনেক খুশি। অনেকের অঢেল সম্পদ থাকলেও মন থাকে না। কিন্তু রফিক ছোট ব্যবসায়ী হয়েও বিনামূল্যে ইফতার ও সেহরি করাচ্ছেন মানুষদের। তাকে দেখে অন্যদের এমন মানবিক কাজে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
আল মামুন/আরএইচ/জেআইএম
বিজ্ঞাপন