ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

বর্জ্যে ভুগছে পায়রা নদী

নুরুল আহাদ অনিক | প্রকাশিত: ১২:৩১ পিএম, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বরগুনার আমতলী পৌর শহরের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে পায়রা নদীতে। এতে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে নদী ও নদী তীরবর্তী এলাকার পরিবেশ। চারপাশের দুর্গন্ধময় বাতাসে দমবন্ধের উপক্রম স্থানীয়দের। পাশাপাশি নদীর পানি ব্যবহার করে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এলাকাবাসী।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গত তিন দশকে পৌরসভার উন্নয়নে শতকোটি টাকা ব্যয় হলেও বর্জ্য পরিশোধনাগার নির্মাণ করেনি পৌর কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

বর্জ্যে ভুগছে পায়রা নদী

জানা যায়, ১৯৯৮ সালের ২৩ আগস্ট আমতলী পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৫ সালে এটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত হয়। প্রায় ৭ দশমিক ৭৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই পৌরসভায় ৩৩ হাজারের অধিক মানুষের বসবাস। পৌর এলাকায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৬ টন বর্জ্য তৈরি হয়।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

সরেজমিন দেখা গেছে, পায়রা নদীর তীরে বর্জ্যের স্তূপ। আমতলী পানি উন্নয়ন বোর্ড সংলগ্ন ব্লকে পায়রা নদী তীর ঘেঁষে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ময়লা ফেলছেন। পৌরশহরের সকল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে এই নদীতে। এদিকে কাক, মুরগি, কুকুর সেগুলো ঘাঁটাঘাঁটি করছে। বর্জ্য নদীর স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। খোলা স্থানে এমনভাবে বর্জ্য ফেলায় দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ স্থানীয়রা। নদীর পানি ব্যবহার করে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এলাকাবাসী। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি নদীও দূষিত হচ্ছে।

দেখা যায়, একইভাবে ময়লা ফেলা হচ্ছে বাসুগী খালেও। পলিথিন, চিপস, বিস্কুটের খোসা ভাসছে খালের পানিতে। হাসপাতালে ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, কাচের বোতলসহ নানা ধরনের ক্লিনিক্যাল বর্জ্য দেখা গেছে সেখানে। শুধু পায়রা বা বাসুগী খাল নয়, ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষি রোডের পূর্ব পাশের ডোবা, সাত ধারা, খোন্তাকাটা, সবুজবাগ, একে স্কুলসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক ঘেঁষে ময়লার স্তূপ করে রেখেছে পৌর কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০১৫ সালে আওয়ামী সরকারের আমলে এটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে ঘোষিত হলেও বর্জ্য অপসারণের নির্ধারিত কোনো জায়গার ব্যবস্থাপনা করতে পারেনি পৌর কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন সময়ে পৌরসভার উন্নয়নে শত কোটি টাকারও বেশি ব্যয় হলেও পৌরসভা থেকে ময়লা ফেলানোর নির্ধারিত জায়গা তৈরি না করায় সাবেক মেয়রকে দায়ী করছেন পৌর বাসিন্দারা।

বর্জ্যে ভুগছে পায়রা নদী

আমতলী পানি উন্নয়ন বোর্ড সংলগ্ন চা দোকানি লাইলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগে আমাদের এখানে অনেক লোক ঘুরতে আসতো, তাই দোকান দিয়েছিলাম। বেশ কিছুদিন পৌরসভার সব ময়লা এই নদীর পাশে এনে ফেলা হচ্ছে। দুর্গন্ধে এখানে বসবাস করাই কষ্টকর। আমাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নাই তাই বাধ্য হয়ে এখানে থাকছি। এই নদীর পানি আমাদের ব্যবহার করতে হয়। সেটাও এখন দূষিত হয়ে গেছে। এর ফলে আমাদের পরিবারের সবাই পেট খারাপ, শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন

আমতলী পৌর এলাকার দিনমজুর মেহেদী হাসান সোহেল জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখানে ময়লা ফেলায় আমাদের খুব ক্ষতি হচ্ছে। নদীর পাশে সরকারি বিভিন্ন প্রজেক্টের ব্লক বানানোর কাজসহ পণ্যবাহী নৌযানের মালামাল এখানে খালাস করা হয়। এখানে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াইশ দিনমজুর কাজ করে। আমরা সবাই পেটে সমস্যাসহ নানাবিধ সমস্যায় ভুগছি।’

পায়রা নদী রক্ষায় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আমতলীর স্থানীয় বাসিন্দা মো. মনিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘পৌরসভায় বর্জ্য শোধনাগার না থাকায় সব ময়লা নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি নদীও দূষণ হচ্ছে। এর ফলে নদীতে মাছের আধিক্য কমে গেছে। এই নদীর উপকূলের লোকজন এই পানি ব্যবহার করতে পারছেন না। আমি সরকারের কাছে দাবি জানাই দ্রুতই যেন পায়রা নদী বাঁচাতে পৌরসভার জন্য একটি বর্জ্য শোধনাগার তৈরি করা হয়।’

নদী দূষণ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশকর্মী এইচ এম রাসেল জাগো নিউজকে বলেন, ‘পৌরসভার বয়স ২৬ বছর। এর মধ্যে আগের কর্তৃপক্ষ একটি বর্জ্য শোধনাগার করতে পারেনি। পৌরসভার যত বর্জ্য সব এনে এই নদীর তীরে ফেলা হচ্ছে। এতে এলাকার মানুষ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। পাশাপাশি নদী দূষণের সঙ্গে মৎস্য সম্পদও হুমকিতে পড়েছে।’

বিজ্ঞাপন

বর্জ্যে ভুগছে পায়রা নদী

তিনি আরও বলেন, ‘আমতলীতে ঘোরার কোন জায়গা না থাকায় প্রতিদিন বিকেলে এখানে অনেক মানুষ ঘুরতে আসতো। এখন সেটাও এখন বন্ধ হয়ে গেছে।’

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক ও বরগুনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক অনিমেষ বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রত্যেক পৌরসভায় সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র থাকতে হয়। বরগুনা সদর ছাড়া অন্য পৌরসভাগুলোতে সেটি নেই। আমরা দ্রুতই সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র স্থাপনের জন্য জমি ক্রয় বা অধিগ্রহণ করে পৌরসভার নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র স্থাপন করার উদ্যোগ নেবো।

বিজ্ঞাপন

এফএ/জিকেএস

বিজ্ঞাপন