শেকৃবি
ছাত্রলীগের পথে ছাত্রদল, অতিষ্ঠ হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর এখন অনেকটাই স্বাভাবিক রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) ক্যাম্পাস। ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ার পর তাদের কোনো শোরগোল নেই। তবে তাদের পথেই হাঁটছে ছাত্রদল। ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার ও হল দখলের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। তাদের কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীরা। যদিও এসব অভিযোগের দায় নিতে নারাজ ক্যাম্পাস শাখা ছাত্রদল।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশীদ, অধ্যাপক ড. আয়েশা আক্তার, সহযোগী অধ্যাপক রুহুল আমিন ও দুজন কর্মকর্তার রুমে তালা লাগিয়ে দেন ছাত্রদল সমর্থিত শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল নেতা আহসান হাবীব, জিব্রিল শরীফসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
তালা দেওয়া প্রসঙ্গে জিব্রিল শরীফ বলেন, ‘যে সব শিক্ষক ছাত্র আন্দোলনের সরাসরি বিরোধিতা করেছিলেন, যারা নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পদক্ষেপ গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতার জন্যই আমরা প্রতিবাদস্বরূপ কর্মসূচি পালন করি। কিন্তু কারও প্রতি অন্যায় করা হয়নি।’
জুলাই আন্দোলনে যারা সরাসরি ছাত্রদের বিরোধিতা করেছিলেন, লাঠি হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন, ফেসবুকে সরব ছিলেন ছাত্রদের বিরুদ্ধে, যারা তখন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হলে থাকতে দিচ্ছিলেন না, সেসব শিক্ষার্থীকে কীভাবে এখন হলে থাকার সুযোগ দেওয়া হয়।-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষার্থী
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে গিয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে হল ছাড়ার হুমকি দেওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক শিক্ষার্থীকে হল ছাড়তে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ আছে।
- আরও পড়ুন
- কোটাবিরোধী আন্দোলন: শেকৃবি শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ
- ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করলো সরকার
- শেকৃবিতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের গণপিটুনি
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদল সমর্থিত এক শিক্ষার্থী বলেন, জুলাই আন্দোলনে যারা সরাসরি ছাত্রদের বিরোধিতা করেছিলেন, লাঠি হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন, ফেসবুকে সরব ছিলেন ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে, যারা তখন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হলে থাকতে দিচ্ছিলেন না, সেসব শিক্ষার্থীকে কীভাবে এখন হলে থাকার সুযোগ দেওয়া হয়? কোনো শিক্ষার্থীকেই ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে কিছু বলা হয়নি। যারা সরাসরি এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদেরই হল ছাড়তে বলা হয়েছে।
শিক্ষকদের রুমে তালা ও কিছু শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেওয়ার খবর এসেছে। প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আশা করি, দ্রুত প্রতিবেদন দাখিল করবে এবং সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতার আওতায় আনবে। -বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আশিক আহমেদ
হল ছাড়ার হুমকি পাওয়া শিক্ষার্থীরা ভুক্তভোগী হলেও এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তাদের অনেকেই জুলাইয়ের আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। এমনকি জুলাইয়ের আন্দোলনে বিভিন্ন খাতে অর্থ দিয়ে আন্দোলন বেগবান করেছেন।
এর আগে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর শেকৃবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বিএম আলমগীর কবিরের হল দখলের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সে সময় সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল।
- আরও পড়ুন
- উত্তাল শেকৃবি, হল ছেড়ে রাস্তায় শিক্ষার্থীরা
- প্রথমবারের মতো আচরণবিধি পেলেন ইবির নবীন শিক্ষার্থীরা
এ বিষয়ে বিএম আলমগীর কবির গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি ৫ আগস্টের। আমাদের ক্যাম্পাস গণভবনের পাশে হওয়ায় ক্যাম্পাসে প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটে। বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে হলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকায় তখন আমরা হলে অবস্থান নেই। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে হল ত্যাগ করি। এখানে হল দখলের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
আধিপত্য বিস্তার ও হল ছাড়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে আলমগীর কবির বলেন, ‘শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের লিখিত সদস্য ব্যতীত কারও কাজের দায়ভার ছাত্রদল নেবে না। এছাড়া আমি ব্যক্তিগতভাবে এসব বিষয় সম্পর্কে অবগত নই।’
সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন, ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের আধিপত্য বিস্তারের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। প্রক্টরকে ছাত্রদলের ব্যানারে মানববন্ধনে দাঁড়াতে দেখা যায়। ফলে তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করছেন নাকি ছাত্রদলের জন্য কাজ করছেন, সেটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন একাধিক শিক্ষার্থী।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আশিক আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষকদের রুমে তালা দেওয়া এবং কিছু শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেওয়ার খবর আমাদের কানে এসেছে। তাদের (ছাত্রদল) ভাষ্যমতে, বিগত স্বৈরাচারী শাসনামলে এই ব্যক্তিরা দলীয় কারণে তাদের প্রতি অন্যায় আচরণ করেছেন এবং আন্দোলন চলাকালে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন। আন্দোলনের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে প্রশাসন এরইমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আমরা আশা করি, কমিটি দ্রুত তাদের প্রতিবেদন দাখিল করবে এবং সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতার আওতায় আনবে।’
- আরও পড়ুন
- শেকৃবিতে সামাজিক পরিবেশের অবনতি, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
- র্যাগিংমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিশ্রুতি শেকৃবি উপাচার্যের
আশিক আহমেদ বলেন, ‘তবে আন্দোলনের চেতনার পরিপন্থি কোনো কাজ যেন না ঘটে বিশেষ করে ব্যক্তি আক্রোশ থেকে কাউকে জুলুম করার ঘটনা। এমন কোনো ঘটনা ঘটলে প্রশাসনের প্রতি কঠোরভাবে হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ জানাই। সবকিছুই হতে হবে ন্যায্যতা ও আদর্শের ভিত্তিতে।’
ছাত্রদল প্রসঙ্গে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আরফান আলী বলেন, ‘এসব বিষয় সম্পর্কে আমি অবগত হয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে সে জন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। এছাড়া যে সব শিক্ষার্থী শিক্ষকদের রুমে তালা দিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।’
হলে থাকার নিশ্চয়তা, ক্যাম্পাসে নিরাপদ পরিবেশ ও চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনে নবীন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ওই অনুষ্ঠানে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে শতভাগ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় দাবি করে র্যাগিং, মাদক, গণরুম কালচার ও সেশনজটমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ।
সাইদ আহম্মদ/এসএনআর/এমএমএআর/জিকেএস