ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ক্যাম্পাস

কী আশায় পড়বো আইন?

শিক্ষা ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৮:৩৬ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

যারা পাতার পর পাতা মুখস্ত করতে পারেন, তাদেরই শুধু আইন পড়া উচিত। কারণ আইনে পড়লেই অনেক ধারা মুখস্ত করতে হবে! এসব ধারণা নিয়ে ভর্তি পরীক্ষার ফরম তুলছেন না তো?

আইন নিয়ে আসলে কার ও কেন পড়া উচিত?

একজন শিক্ষার্থীর আইন পড়ার ক্ষেত্রে ভালো স্মৃতির সাথে প্রয়োজন গবেষণা বা বিশ্লেষণের প্রতি আগ্রহ। কেননা আইনের ধারা হলো নিয়ম। কিন্তু কোন মামলার সঙ্গে কোন আইনটি ব্যবহার করতে হবে, কীভাবে উপস্থাপন করতে হবে এসব বিষয় বিশ্লেষণের মাধ্যমেই বের করেন একজন আইনজীবী। আবার বিচারককে আরো গভীরভাবে এর ব্যাখ্যা করতে হয়। সরাসরি আইন প্র্যাকটিস না করে অন্য কোনো চাকরি বা গবেষণার ক্ষেত্রে সামাজিক আরো অনেক বিষয়, এমনকি কোনো কোনো আইনের যৌক্তিকতা নিয়েও বিশ্লেষণ করতে হয়। ফলে আইনে স্নাতক বা এলএল.বি মোটেই মুখস্তভিত্তিক পড়াশোনা নয়।

আইন বিষয়ে পড়ালেখা প্রসঙ্গে কথা হয় জয়পুরহাটে কর্মরত সহকারী সিনিয়র জজ ইফতেখার শাহরিয়ারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আইন একটি প্রায়োগিক বিষয়। এখানে অ্যাকাডেমিক জ্ঞানের সাথে বাস্তবিক জ্ঞান অর্জন করতে হয়। এই কারণে প্রচন্ড পরিশ্রমের বিকল্প নেই।’

বিচারক ইফতেখার শাহরিয়ার আইনে পড়াশোনা করার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, নাগরিকের নানাবিধ অধিকার নিয়ে সচেতন শিক্ষার্থীদের আইনে পড়া উচিত। এছাড়া আইনজীবীদের বলা হয় সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ার। ফলে সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদেরই আইনের মতো বিষয় নির্বাচন করা উচিত। পরিশ্রমে অনাগ্রহী শিক্ষার্থীদের আইন নিয়ে না পড়াই ভালো। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার সাথে সাথেই আইনের পড়াশোনা শেষ হয় না। বরং জীবনভর এ পড়াশোনা চলমান থাকে।

কোথায় পড়বেন আইন?

এই ভূখণ্ডে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত দুই বছরের সান্ধ্যকালীন এলএল.বি পড়ানো হতো। সে সময় ‘বিলেত’ গিয়ে আইন পড়া এক ধরণের স্ট্যাটাস সিম্বলও ছিল বলা যায়। এরপর ১৯৭৩-৭৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে তা তিন বছরের আর ১৯৭৭ সাল থেকে চার বছরের এলএল.বি পড়ানো শুরু হয়। বর্তমানে পাবলিক-প্রাইভেট মিলিয়ে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে। সেগুলো হলো:

● রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
● ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
● জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
● চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
● ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
● খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
● জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
● জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
● বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
● কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
● গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
● নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি
● ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি
● ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি
● বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্
● বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি
● স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি
● আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ
● স্টেট ইউনিভার্সিটি
● সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি
● ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
● ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি
● নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি
● ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি
● গ্রিন ইউনিভার্সিটি
● আশা ইউনিভার্সিটি
● জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

ক্যারিয়ার আছে কোথায়?

বিচারক ইফতেখার শাহরিয়ার এলএল.বি ডিগ্রিধারী তরুণদের ক্যারিয়ার বিষয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, আইনে পড়াশুনা করে বিভিন্ন সেক্টরে আইনজীবী হওয়াসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লিগ্যাল সেলে আইন কর্মকর্তা, কনসালটেন্ট, পরিবেশ অধিকারকর্মী ও মানবাধিকার সংস্থায় ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে।

আইনে পড়ে যেসব বিষয়ে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন:

● অ্যাডভোকেট, সহকারী জজ ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
● কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীরা যেসব চাকরিতে আবেদনের যোগ্য, আইনের একজন শিক্ষার্থী সেই সব পদে অনায়াসেই আবেদন করতে পারেন এবং প্রতিযোগিতায় উক্তীর্ণ হয়ে চাকরিতে যোগ দিতে পারেন।
● একমাত্র আইনের শিক্ষার্থীরাই পারেন বিসিএস ও বিজেএস দুটি পরীক্ষাতেই অংশ নিতে। তবে বিজেএস, বার কাউন্সিল ও বিচার-সম্পর্কিত পদগুলো শুধু আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য।
● একজন আইনের শিক্ষার্থী সামরিক বাহিনীতে লেফটেন্যান্ট, সাব-লেফটেন্যান্ট, ফ্লাইং অফিসার হয়ে কমিশন্ড অফিসারের পদমর্যাদায় সেনা, নৌ কিংবা বিমানবাহিনীতে ‘জাজ-অ্যাডভোকেট জেনারেল’ (জেএজি) কোরে যোগ দিতে পারেন।
● আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে সহকারী আইন সচিব হিসেবে ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব।
● বর্তমানে সব ব্যাংক, বিমা, কোম্পানি, শিল্প ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানেই লিগ্যাল ডিভিশন আছে। ব্যাংকিং, কোম্পানি ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানে সাধারণ অফিসার হিসেবে আবেদনের সুযোগ তো আছেই, সাথে আইন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন শুধু আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরাই।
● এ ছাড়াও সব কোম্পানিতে পৃথক ‘করপোরেট লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স’ বিভাগ আছে। সেখানে বিভিন্ন পদে নিয়োগ পেতে আইনে স্নাতক হতে হয়। অর্থাৎ করপোরেটে আইনের শিক্ষার্থীদের সুযোগ অন্যদের তুলনায় বেশিই বলা যায়।
● জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, যেমন: ইউএনসিআর, ইউএনডিপি, ডাব্লিউএইচও, সেভ দ্য চিল্ড্রেন, আইওএম, আইএলও ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে আছে আইন সংশ্লিষ্ট নানা কাজের সুযোগ।
● বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি দূতাবাসগুলোতেও ‘আইন কর্মকর্তা’ হিসেবে নিয়োগের সুযোগ আছে।
● দুদক, নির্বাচন কমিশন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, ওয়াসা, পিডিবি, পেট্রোবাংলা, বাপেক্সসহ প্রায় সব সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত কমিশন এবং প্রতিষ্ঠানে আইন কর্মকর্তা ও প্যানেল আইনজীবী হিসেবে সুযোগ আছে।
● রাজনীতিতে আইনের ছাত্রদের জন্য থাকে বিশেষ সুযোগ। একসময় জাতীয় সংসদের বড় একটি অংশের সিট আইনজীবীদের দখলে ছিল।
● আদালতে সরকারি আইন কর্মকর্তা বা পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হিসেবে নিয়োগ হয়।
● বিদেশে ইমিগ্রেশন কেস অফিসার বা ল অফিসার হিসেবে কাজ করেন অনেকে।
● আইনি পরামর্শক বা উপদেষ্টা হিসেবেও ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। তা ছাড়া মানবাধিকার কিংবা নারী ও শিশু অধিকার নিয়েও কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
● কেউ যদি একটু ব্যতিক্রম কোনো ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হতে চান, চলচ্চিত্রশিল্পে আইন পরামর্শক বা কোর্টরুম-বিষয়ক চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যকারও হতে পারেন।

বিদেশে উচ্চশিক্ষা

ব্রিটেনে কেউ যদি আন্ডারগ্র্যাজুয়েট লেভেলে ভর্তির জন্য আবেদন করতে চায়, তাহলে দরকার এ লেভেল বা এইচএসসি ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার প্রমাণ। আর যদি পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের কথা ভাবেন, তাহলে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ল ডিগ্রি, ইংরেজি ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণ, পার্সোনাল স্টেটমেন্ট জমা দিতে হয়। সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ভর্তির জন্যে আবেদন জমা দিতে হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই করে অফার লেটার ইস্যু করে।

আইন পড়ার প্রথম ধাপ হচ্ছে একটা বিষয়কে বিশ্লেষণ করতে পারা। গভীর চিন্তাশক্তি এ ক্ষেত্রে খুব জরুরি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জরুরি। কিন্তু আইনের সাধারণ জ্ঞানও যে কতটা জরুরি, তা আমাদের চারিদিকে তাকালেই বোঝা যায়। দেশের জনগণ, যারা এই বিশেষায়িত ডিসিপ্লিনে পড়াশোনা করেননি, তাদের মধ্যেও অন্তত সাধারণ জীবনযাপন সংক্রান্ত আইনগুলো কীভাবে পরিচিত করা যায়, এই দায়িত্বও আমাদের এলএলবি পাশ তরুণসমাজের।

এএমপি/আরএমডি/এএসএম