গুচ্ছে থাকলে শাবিপ্রবি শিক্ষকদের অসহযোগিতার হুঁশিয়ারি
গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ না নিতে দাবি জানিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মানসম্মত শিক্ষার্থীর সংকট, ফাঁকা আসন নিয়ে ক্লাস শুরু, দীর্ঘ ভর্তি প্রক্রিয়া, মেধাবীদের ভর্তিতে অনাগ্রহ ও স্বকীয়তা হারানোসহ বেশ কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করে গুচ্ছের ব্যাপক সমালোচনা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।
শাবিপ্রবির মান পূর্বের জায়গায় ফিরিয়ে নিতে গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্রভাবে কার্যক্রম পরিচালনার দাবি জানিয়েছেন তারা। এবার গুচ্ছ প্রক্রিয়ায় শাবিপ্রবি অংশ নিলে কোনো ধরনের সহযোগিতা করবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শাবিপ্রবি শিক্ষকরা।
গুচ্ছ থেকে বের হয়ে আসতে গত ৪ ডিসেম্বর শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় জোরালো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভা শেষে তাৎক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ার উদ্দিন চৌধুরীর কাছে সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত উত্থাপন করেন শিক্ষকরা। এসময় শিক্ষকরা উল্লেখ করেন, আমরা কোনোভাবে গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে চাচ্ছি না। গুচ্ছ থেকে বের হয়ে শাবিপ্রবিকে স্বতন্ত্রভাবে ভর্তি কার্যক্রম চালু করতে হবে। ভর্তিচ্ছুদের দুর্ভোগ লাঘবে বিভাগীয় পর্যায়ে পরীক্ষা আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে।
শিক্ষকদের সভা সূত্রে জানা যায়, দ্রুত গুচ্ছ থেকে বের হয়ে না আসলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কোনো ধরনের সহযোগিতা করবেন না বলেও জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
এর আগে ৩০ অক্টোবরও শিক্ষক সমিতির আয়োজনে শিক্ষকদের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। পরে গত ৩ নভেম্বর এ সিদ্ধান্তটি লিখিত আকারে উপাচার্যকে জানান শিক্ষক প্রতিনিধিরা।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে শাবিপ্রবি গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার পর মানসম্মত শিক্ষার্থীর সংকট, ফাঁকা আসন নিয়ে ক্লাস শুরু, দীর্ঘ ভর্তি প্রক্রিয়া, মেধাবীদের ভর্তিতে অনাগ্রহ, স্বকীয়তা হারানো, গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েও শিক্ষার্থী না পাওয়া, অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং পরিচিতি ও ব্র্যান্ড ভ্যালু ক্ষতিসহ নানামুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এমনকি গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার পর থেকে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে শাবিপ্রবির অবস্থান দিনদিন তলানিতে যাচ্ছে বলেও মনে করেন অনেকে।
এদিকে গুচ্ছ থেকে বের হয়ে স্বতন্ত্র ভর্তি কার্যক্রমের ব্যবস্থা করতে গত ১০ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলন করেছেন শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সালেহ নাসিম বলেন, ‘পূর্বে শাবিপ্রবির প্রশ্নপত্রের যে মান ছিল, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল এবং সময় সাপেক্ষ। এ প্রক্রিয়া শাবিপ্রবির জন্য উপযুক্ত নয়। তাই এ প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে আসতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এমনকি ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে গত ১৫ নভেম্বর মানববন্ধনও করেছেন তারা। মানববন্ধনে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী আসাদুল্লা আল গালিব বলেন, শিক্ষার্থীদের আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা চালু হয়েছিল। আমরা সবাই গুচ্ছকে স্বাগত জানিয়েছিলাম। তবে গত তিন বছরে গুচ্ছ সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি বরং শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে গত ১ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠিতে উপাচার্যকে এ বছর গুচ্ছে থাকার আহ্বান জানানো হয়। যদিও গত ১১ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের এক সভায় গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রায় ২৫ দিন অতিক্রম হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকরী কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
গুচ্ছের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর কবির বলেন, গুচ্ছে অংশ নিয়ে শাবিপ্রবি তার স্বতন্ত্রতা হারিয়েছে। অতি দ্রুত আমাদের গুচ্ছ থেকে বের হতে হবে। শিক্ষকদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে গুচ্ছ থেকে বের হয়ে স্বতন্ত্রভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে উপাচার্যকে একাধিকবার জানিয়েছি। আশাকরি এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিম গণমাধ্যমে বলেন, গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যেতে একাডেমিক কাউন্সিলেও আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। উপাচার্য শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলছেন। আশাকরি সবার সহযোগিতা পেলে আমরা গুচ্ছ সিস্টেম থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরয়ারউদ্দিন চৌধুরী বলেন, গুচ্ছের সিকিউরিটিসহ নানা লিমিটেশন মাথায় রেখে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমে আমরা গুচ্ছে না থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং সেটা আমরা শিক্ষা উপদেষ্টাকে জানিয়েছি। আমরা গুচ্ছ থেকে বের হতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।
নাঈম আহমদ শুভ/আরএইচ/এমএস