ভর্তি পরীক্ষা পেছানো ও আবেদন ফি কমানোর দাবি ঢাবি ছাত্রদলের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২৪-২৫ সেশনের ভর্তি পরীক্ষা পেছানো ও আবেদনের ফি কমানোর দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমদের কাছে স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন ঢাবি ছাত্রদলের নেতারা।
এসময় ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন, সহ-সভাপতি আনিছুর রহমান অনিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম আখতার এবং সাংগঠনিক সম্পাদক নুর আলম ভুঁইয়া ইমন উপস্থিত ছিলেন।
স্মারকলিপিতে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বলেন, গণমাধ্যমে আমরা জেনেছি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তি-পরীক্ষা অতিদ্রুত আগামী ডিসেম্বর মাসেই নেওয়ার বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২০২৪ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ফলাফল প্রকাশের মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়টি সদ্য উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়া ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মধ্যে আশঙ্কা ও উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করেছে।
বিগত জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার গনঅভ্যুত্থানে অন্যান্য স্তরের শিক্ষার্থীদের ন্যায় ২০২৪ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরাও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। শিক্ষার্থীদের অনেকে এই আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন এবং অসংখ্য শিক্ষার্থী চিরতরে পঙ্গু ও মারাতত্মকভাবে আহত হয়ে এখনও হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী অপশক্তি যে সহিংসতা ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তা অন্যান্যদের মতো এস্ শিক্ষার্থীকেও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছে।
নেতারা বলেন, এছাড়াও গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে এসব শিক্ষার্থীই ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। যে কারণে তাদের স্বাভাবিক শিক্ষাজীবনে ফিরতে বেশ কিছু সময় লেগে গেছে। ডিসেম্বরে ভর্তি-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে আহত ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শিক্ষার্থীদের বৃহদাংশই এতে অংশগ্রহণের সুযোগ হতে বঞ্চিত হবেন বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি-পরীক্ষার মতো প্রতিযোগিতামূলক একটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য সাধারণত একটি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতি গ্রহণের যে সময় পেয়ে থাকে আগামী ডিসেম্বর মাসে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি গ্রহণের সময়কাল সে তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে যাবে। বিষয়টিও তাদের মানসিকভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
উদ্ভুত প্রেক্ষাপটে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস এই যে ভর্তি পরীক্ষার সময়সীমা যৌক্তিকভাবে পেছানো হলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা তাদের প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় সময় পাবেন এবং আহত শিক্ষার্থীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এতে অংশ নিতে পারবেন।
শিক্ষার্থীদের কল্যাণবিরোধী এবং শিক্ষার্থী নির্যাতন-নিপীড়নের মদদদাতা পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের তল্পিবাহী বিগত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০১৮-১৯ থেকে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ৫ বছরের ব্যবধানে ভর্তি-পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আবেদন ফি শতকরা ২০০ ভাগ বাড়িয়ে ১০৫০ টাকা নির্ধারণ করে। দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বা নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের অনেকের পক্ষেই এই পরিমাণ আবেদন ফি দিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা একটি কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং পরিস্থিতি বিবেচনায় ভর্তি-পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আবেদন ফি যথাসম্ভব হ্রাস করা এখন সময়ের দাবি।
স্বারকলিপিতে ঢাবি ছাত্রদলের নেতারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের উত্থাপিত যৌক্তিক দাবি দুটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় আনার আশা প্রকাশ করেন।
তারা বলেন, ঢাবির ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সদ্য কৃতকার্য হওয়া শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে আহত শিক্ষার্থীদের অধিকার যাতে কোনোভাবেই খর্ব না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে প্রান্তিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের পথ সহজতর করতে যথাক্রমে ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি ডিসেম্বর মাস থেকে যৌক্তিক সময় পর্যন্ত পিছিয়ে ও ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আবেদন ফি যথাসম্ভব হ্রাস করে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবেন।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের কল্যাণে সসবসময়ই কাজ করে আসছি। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা এই দাবি নিয়ে গিয়েছি। উপাচার্য ছিলেন না, তাই আমরা প্রক্টরের মাধ্যমে স্বারকলিপি উপাচার্যের কাছে জমা দিয়েছি।
এমএইচএ/এমআইএইচএস/জেআইএম