৮ লাখ টাকা বাকি
‘ছাত্রলীগ আমাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে, বিচার আল্লাহর কাছে দিয়েছি’
• বাকির প্রায় অর্ধেকই চা-সিগারেট বাবদ
• বাকির চাপে ব্যবসা ছেড়েছেন অনেকে
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আবাসিক হলের ডাইনিং ও বিভিন্ন দোকানের বাকির খাতায় প্রায় আট লাখ টাকা বাকি রয়েছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের। এর প্রায় অর্ধেকই চা-সিগারেট বাবদ এবং বাকিটা হোটেল ও ডাইনিংয়ের।
পাঁচটি ছাত্র হল, ক্যাম্পাসের ভেতর ও প্রধান ফটকের অন্তত ৩০টি দোকানের বাকির হিসাব থেকে এ তথ্য উঠে এসেছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ক্যাম্পাসমুখী হতে দেখা যায়নি বাকি খাওয়া ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের। ফলে দোকানীদের মধ্যে এই টাকা পাওয়া নিয়ে হতাশা দেখা দিয়েছে। তারা বিভিন্ন মাধ্যমে নেতাকর্মীদের খুঁজছেন বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে কখনো প্রভাব খাটিয়ে, আবার কখনো হুমকি দিয়ে বিভিন্ন দোকান থেকে বাকি খেতেন ইবির ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। সেসময় ভয়ে কেউ মুখ খুলতেন না। এখন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একে একে মুখ খুলছেন ব্যবসায়ীরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, হল ডাইনিং, খাবার হোটেল ও অন্য দোকানগুলোতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মোট বাকির পরিমাণ ৭ লাখ ৯৫ হাজার ৫২ টাকা। এরমধ্যে চা-সিগারেটের দোকানগুলোতে বাকি ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৪৫২ টাকা। আর ডাইনিং ও খাবার হোটেলে বাকি ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৬০০ টাকা। ছাত্রদের পাঁচটি হল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় মোট বাকি এক লাখ ২৯ হাজার টাকা। এরমধ্যে জিয়াউর রহমান হলে ৬০ হাজার ও লালন শাহ হলে ৩০ হাজার টাকা বাকি রয়েছে। হলগুলোর ডাইনিং ম্যানেজাররা তাদের বকেয়া খাতা হিসাব করে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এছাড়া ক্যাম্পাসের ভেতরের ও প্রধান ফটকের মোট ছয়টি খাবার হোটেলে বাকি ৩ লাখ ১০ হাজার ৬০০ টাকা। এরমধ্যে ক্যাম্পাসের ‘ভাই ভাই’ হোটেলে দেড় লাখ ও প্রধান ফটকের সামনের ‘ইবি স্ন্যাকসে’ এক লাখ ২০ হাজার টাকা বাকি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের।
এদিকে, ক্যাম্পাস ও প্রধান ফটকের চা দোকানসহ অন্যান্য অন্তত ২৫টি দোকানে মোট বাকির পরিমাণ ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৪৫২ টাকা। এরমধ্যে সর্বোচ্চ বাকি ‘অভি ক্যাফেতে’ এক লাখ ১৭ হাজার ৮৯০ টাকা। এসব দোকানের বাকির প্রায় সবই চা-সিগারেট বাবদ।
ব্যবসায়ীরা জানান, টাকা বাকি রাখা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অধিকাংশের মোবাইল বন্ধ। কেউ কেউ মোবাইল খোলা রাখলেও পাওনাদারদের ফোন রিসিভ করছেন না। যোগাযোগ করতে না পেরে হা হুতাশ করছেন এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। টাকা না পাওয়ায় ব্যবসা চালু রাখতে মারাত্মক চাপে পড়েছেন তারা। কেউ কেউ মোটা অঙ্কের বাকির বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। এরই মধ্যে কয়েকজন ব্যবসায়ী টাকা না পেয়ে লোকসানে পড়ে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন।
ক্যাম্পাসের পুরোনো ব্যবসায়ী ভাই ভাই হোটেলের মালিক আফজাল হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, জমি বিক্রি করে হোটেল চালু করেছিলাম। ছাত্রলীগের বাকির চাপে শেষপর্যন্ত ব্যবসা বাদ দিয়ে এখন একেবারে নিঃস্ব হয়ে অন্যের দোকানে কর্মচারীর কাজ করি। তাদের কাছে দেড় লাখ টাকা বাকি। আমাকে তারা পথে বসিয়ে দিয়েছে। তাদের বিচার আল্লাহর কাছে ছেড়ে দিয়েছি।
ইবি স্ন্যাকস রেস্টুরেন্টের পরিচালক এনামুল কবির বলেন, ছাত্রলীগের ছেলেরা গত ১৫ বছর ধরে আমার কাছে দুই লাখের বেশি টাকা বাকি খেয়েছে। টাকা না দেওয়ায় একসময় ক্ষোভে হিসাব রাখা ছেড়ে দেই। এখন আমাকে লোন নিয়ে দোকান চালু করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
লক্ষাধিক টাকা বকেয়া থাকা অভি ক্যাফে শপের মালিক আলমগীর হোসেন বলেন, ছাত্রলীগের ছেলেরা আমার দোকান থেকে চা-সিগারেটই বেশি খেতেন। টাকা চাইলে ক্যাম্পাসে ব্যবসা বন্ধ করার হুমকি দিয়ে জোর করে নিজের ইচ্ছামতো সিগারেট নিয়ে চলে যেতেন।
এসব বিষয়ে ইবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, লেনদেন সবার জন্যই একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এজন্য ক্যাম্পাসের দোকানগুলোতে যে কারো বাকি থাকতে পারে। আমার আহ্বান থাকবে ছাত্রলীগের কর্মীদের প্রতি, যদি কারো দোকানে বাকি থাকে তাহলে মানবিক দিক বিবেচনায় তারা যেন টাকা পরিশোধ করে দেন।
মুনজুরুল ইসলাম/জেডএইচ/এমএস