ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ক্যাম্পাস

শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারে যা চায় ‘শিক্ষক সমাজ’

হাসান আলী | প্রকাশিত: ০৫:০৯ পিএম, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ও রাজনীতিমুক্ত একটি শিক্ষক প্ল্যাটফর্ম ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমাজ’। জুলাই গণঅভ্যুত্থান থেকে উত্থিত এ প্ল্যাটফর্মটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান দ্বিদলীয় শিক্ষক সংগঠনের বাইরের একটি সংগঠন। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারে এ সংগঠনের শিক্ষকরা বিদ্যমান নানা জটিলতার সমাধানে কিছু খসড়া প্রস্তাবনা উত্থাপন করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমদ চৌধুরী অডিটোরিয়ামে অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌসের সভাপতিত্বে সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে খসড়া প্রস্তাব উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরিন, জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ-আল-মামুন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ড. খোরশেদ আলম এবং থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ড. শাহমান মৈশান।

নিপীড়ন, হয়রানি, বৈষম্য, ভয়ের সংস্কৃতি এবং পদ্ধতিগত ভয়ের সংস্কৃতি ভেঙে একটি বৈষম্যহীন ও নিপীড়নমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে শিক্ষক সমাজ বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন। সেসব প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে—

শিক্ষক-শিক্ষার্থী নিপীড়ন ও হয়রানি বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নিপীড়ন-নির্যাতন-বৈষম্যবিরোধী সেল’ গঠন করতে হবে; নিপীড়নের আওতায় শুধু নারী-পুরুষ সম্পর্ককে সীমাবদ্ধ না রেখে নারী-নারী, পুরুষ-পুরুষের মধ্যকার সম্পর্ককেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; নিপীড়নের আওতায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্কের পাশাপাশি শিক্ষার্থী-শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক-শিক্ষক সম্পর্ককে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; সিঅ্যান্ডডি নামক একটি ঊর্ধ্বতন বডি রেখে বিভাগ/ইনস্টিটিউটের মধ্যে ইন্টারনাল হায়ারর্কি রাখা যাবে না; বিভাগ/ইনস্টিটিউটের সব সিদ্ধান্ত সব শিক্ষকের উপস্থিতিতে একাডেমিক কমিটি নেবে; সিঅ্যান্ডডি যদি শেষ পর্যন্ত রাখতেই হয় তবে সেখানে সব ক্যাটাগরির শিক্ষক প্রতিনিধি থাকতে হবে।

শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারে যা চায় ‘শিক্ষক সমাজ’

বিভাগ/ইনস্টিটিউটের সভাপ্রধান পরিচালকের ক্ষমতাচর্চার কারণে অন্য শিক্ষকরা বৈষম্যের শিকার হলে তা প্রতিকারের ব্যবস্থা থাকতে হবে; কর্মক্ষেত্রে নিপীড়ন, নির্যাতন ও বৈষম্য রোধে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় একটি ‘কোড অব কনডাক্ট’ তৈরি করে নির্দিষ্ট সময় পর পর, তার ওপর ট্রেনিং করা বাধ্যতামূলক করবে; প্রতিটি বিভাগ/ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী উপদেষ্টা সদ্য ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কোড অব কনডাক্ট’টির ওপর কর্মশালা করবেন, যেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের গোড়াতেই শিক্ষার্থীরা এ সংক্রান্ত সম্যক ধারণা পেয়ে যান; অভিযোগকারীর অভিযোগ অসত্য প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা থাকতে হবে; অভিযোগকারী ও অভিযুক্তের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না; তদন্ত ও বিচার চলাকালে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের মাধ্যমে ‘নিপীড়ন-নির্যাতন-বৈষম্যবিরোধী সেল’ সদস্যদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, যেন তদন্ত ও বিচারিক কার্যক্রম যথাসম্ভব ত্রুটিমুক্ত হয়; অতীতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শাস্তিপ্রাপ্ত অনেককেই পরবর্তীতে কোর্ট থেকে অব্যাহতি নিয়ে কর্মস্থলে যোগ দিতে দেখা গেছে; বিশেষ পরিস্থিতি ব্যতীত সেলকে ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।

ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ‘যথাযথ ও কাঙ্ক্ষিত’ বিষয়ে ভর্তির সমস্যা সমাধানের জন্য অনুষদভিত্তিক ‘গুচ্ছ পদ্ধতি’তে পরীক্ষা নেওয়া যায় কি না তা খতিয়ে দেখা; ভর্তি পরীক্ষা যতটা সম্ভব শিক্ষার্থীবান্ধব হতে হবে; শিক্ষার্থীদের যেন ভোগান্তি ও অর্থ খরচ কম হয় সে ব্যাপারে যত্নশীল হতে হবে

বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান ভর্তি পরীক্ষার মৌলিক পরিবর্তনের জন্য ভর্তি পরীক্ষা নিয়েও কিছু প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে— সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা, তা সম্ভব না হলে ১৯৭৩ সালের আদেশভুক্ত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব কি না তা খতিয়ে দেখা; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান ভর্তি পরীক্ষা অনেকটা বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের মাথায় রেখে ডিজাইন করা; ইংরেজি মাধ্যম থেকে আসা ভর্তিচ্ছুদের আগ্রহী করতে বিদ্যমান পরীক্ষা পদ্ধতি, ইউনিট ও প্রশ্নমালা রিভিউ করা প্রয়োজন।

ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ‘যথাযথ ও কাঙ্ক্ষিত’ বিষয়ে ভর্তির সমস্যা সমাধানের জন্য অনুষদভিত্তিক ‘গুচ্ছ পদ্ধতি’তে পরীক্ষা নেওয়া যায় কি না তা খতিয়ে দেখা; ভর্তি পরীক্ষা যতটা সম্ভব শিক্ষার্থীবান্ধব হতে হবে; শিক্ষার্থীদের যেন ভোগান্তি ও অর্থ খরচ কম হয় সে ব্যাপারে যত্নশীল হতে হবে; ভবিষ্যতে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করা যায় কি না তা খতিয়ে দেখা।

শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারে যা চায় ‘শিক্ষক সমাজ’

স্নাতক ও স্নাতকোত্তর নিয়ে প্রস্তাবনাগুলো হলো— বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী-শিক্ষক অনুপাত বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ২০:১ বাস্তব কারণে মানা না গেলেও ৪০:১ এর বেশি করা যাবে না; প্রয়োজনে একটি বিভাগে একটি কোর্সের একাধিক সেকশন/ইউনিট থাকতে পারে; সম্প্রতি এমন অনেক বিভাগ খোলা হয়েছে যা আমাদের প্রস্তুতি, বাজারের চাহিদা এবং একাডেমিক প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়; সরাসরি বাজারের চাহিদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন কোনো বিষয়েই এক ইউনিট অর্থাৎ, ৪০ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না; বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স কনটেন্ট শ্রমবাজারের দক্ষতার চাহিদার ভিত্তিতে তৈরি করতে হবে; বর্তমান বিশ্বের এবং দেশের শ্রমবাজারের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা তৈরিতে নতুন নতুন কোর্স চালু করতে হবে।

চাহিদার সঙ্গে দূরবর্তী সম্পর্কও নেই এমন বিভাগগুলোতে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী ভর্তি না করানো ভালো; এগুলো অন্য বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের স্ট্রিম হিসেবে চালু করা যেতে পারে; বিদ্যমান কোর্সগুলো যেখানে দরকার, সেখানে সংস্কার আনতে হবে। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোর্স ম্যাপিং করলেই এ কাজ অনেক সহজ হবে; স্নাতকোত্তর ডিগ্রিটির কোর্স-কারিকুলাম ও শিক্ষাদান পদ্ধতির পরিবর্তন জরুরি, যেন তা বিদ্যমান স্নাতক ডিগ্রির পুনর্পাঠ হয়ে না দাঁড়ায়।

আরও পড়ুন

অনুষদভিত্তিক সমন্বিত, স্কিল-বেজড ও জেনারেল কোর্স চালু করা যেতে পারে। তাতে একই ধরনের কোর্স ভিন্ন ভিন্ন বিভাগে না পড়িয়ে অবকাঠামো ও জনবলের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা সম্ভব হয় এবং বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের মধ্যকার ইন্টারেকশন ও একাডেমিক শেয়ারিং সম্ভবপর হয়; বিদ্যমান অনুষদভুক্ত বিভাগগুলোকে একটি নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ কমিটি দিয়ে রিভিউ করাতে হবে; প্রয়োজনে বিভাগগুলোকে পুনর্বিন্যাস এবং অপরাপর জরুরি সংস্কার করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে যারা ডিগ্রি করতে ইচ্ছুক তাদের জন্য গ্রীষ্ম ও শীতকালীন প্রোগ্রাম চালু করা যেতে পারে।

মেধা এবং আর্থ-সামাজিক প্রয়োজন বিবেচনায় প্রথম বর্ষ থেকেই সিট বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে; ডিগ্রি সমাপনী পরীক্ষা শেষে সর্বোচ্চ এক মাসের মধ্যে হলের সিট ছেড়ে দেওয়ার নিয়ম করতে হবে; নারী শিক্ষার্থীদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নতুন হল নির্মাণ এবং গণরুম ও গেস্টরুম সংস্কৃতির বিলোপ করতে হবে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে টিচিং অ্যান্ড রিসার্চ- এই উভয় বৈশিষ্ট্যের আলোকে একটি মিশ্র প্রকৃতির বিশ্ববিদ্যালয় রূপে কার্যকরভাবে গড়ে তুলতে উচ্চশিক্ষা (এমফিল/পিএইচডি) নিয়েও কিছু প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো— ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ফুল-টাইম, ফুল-পেইড, পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করতে হবে; একজন পিএইচডি অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীকে অন্তত ৫০ হাজার টাকা মাসিক বেতন দিতে হবে; সুপারভাইজারকে প্রতি মাসে ভালো পরিমাণ অর্থ দিতে হবে। সুপারভাইজার হিসেবে দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাপকদের সংযুক্ত করতে হবে।

পিএইচডি অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সপরিবারে আবাসিক সুবিধা দিতে হবে; পিএইচডি ভর্তির জন্য অন্তত তিনটি পিয়ার রিভিউড আর্টিক্যাল লাগবে; আবেদনকারীকে একটি অর্টিক্যালের একক লেখক এবং অন্যটিতে প্রথম লেখক হতে হবে; পিএইচডি ডিগ্রির প্রথম সেমিস্টার গবেষণা পদ্ধতি ও সংশ্লিষ্ট তত্ত্বগুলোর ওপর কোর্স ওয়ার্ক করতে হবে; ১১টি অনুষদের ১১ জন বয়োজ্যেষ্ঠ অধ্যাপককে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় একটি এথিক্যাল বোর্ড বা আইআরবি (প্রাতিষ্ঠানিক পর্যালোচনা বোর্ড) তৈরি করবে; পিএইচডি ও এমফিল শিক্ষার্থীদের এই বোর্ড থেকে ট্রেনিং করে সার্টিফিকেট নিতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের আবাসন ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা নিয়েও কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছে সংগঠনটি। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে— মেধা এবং আর্থ-সামাজিক প্রয়োজন বিবেচনায় প্রথম বর্ষ থেকেই সিট বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে; ডিগ্রি সমাপনী পরীক্ষা শেষে সর্বোচ্চ এক মাসের মধ্যে হলের সিট ছেড়ে দেওয়ার নিয়ম করতে হবে; শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসনে যথার্থ স্টাডি সাপেক্ষে নতুন হল নির্মাণ করতে হবে; নারী শিক্ষার্থীদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নতুন হল নির্মাণ করা প্রয়োজন; গণরুম ও গেস্টরুম সংস্কৃতির বিলোপ করতে হবে।

শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারে যা চায় ‘শিক্ষক সমাজ’

আবাসিক হলগুলোতে খাদ্যের পুষ্টিমান নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও পোস্টগ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীদের ভিজিট ও রিভিউ প্রথা চালু করতে হবে; হল পর্যায়ে মানসম্পন্ন খাবার নিশ্চিতকরণে কেন্দ্রে থেকে অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে হবে; হলের সব কার্যক্রম হবে অংশগ্রহণমূলক; সব কার্যক্রমে হল সংসদ থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; হলকে শিক্ষার্থীবান্ধব করে গড়ে তুলতে হবে; হলগুলোতে বির্তক প্রতিযোগিতা, খেলাধুলা ও সহ-শিক্ষা কার্যক্রমকে উৎসাহিত করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের বৃত্তি, ঋণ ও কর্মসংস্থান নিয়ে প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে— স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় স্তরে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থের উৎস হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও করপোরেট সেক্টরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে; সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে; দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসভিত্তিক খণ্ডকালীন চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে; প্রতিটি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা থাকা দরকার, যেন তারা হাতে-কলমে শিখতে পারে; ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থীদের চাকরি পেতে সাহায্য করবে; বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর জব/ক্যারিয়ার ফেয়ার এবং ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে যেসব প্রস্তাবনা এসেছে সেগুলো হলো— বিদ্যমান লেজুড়বৃত্তিক শিক্ষক রাজনীতি এবং পেশীশক্তি বা সন্ত্রাস নির্ভর ও সাম্প্রদায়িক ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে হবে; শিক্ষার্থী যদি দলীয় রাজনীতির বলি ও ভৃত্যে পরিণত হয় তাহলে ক্যাম্পাস হয়ে উঠে ক্ষমতাসীনদের আধিপত্য ও সন্ত্রাসের লীলাভূমি; তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বাক ও স্বাধীন মতপ্রকাশের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে সংগঠন করার অধিকারকে সুরক্ষা দিতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ এবং হলভিত্তিক ছাত্রসংসদ নির্বাচনকে সক্রিয় ও নিয়মিত করতে হবে।

শিক্ষার্থী যদি দলীয় রাজনীতির বলি ও ভৃত্যে পরিণত হয় তাহলে ক্যাম্পাস হয়ে উঠে ক্ষমতাসীনদের আধিপত্য ও সন্ত্রাসের লীলাভূমি; তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বাক ও স্বাধীন মতপ্রকাশের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে সংগঠন করার অধিকারকে সুরক্ষা দিতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ এবং হলভিত্তিক ছাত্রসংসদ নির্বাচনকে সক্রিয় ও নিয়মিত করতে হবে

কেন্দ্রীয় ও হল পর্যায়ের ছাত্রসংসদ থেকে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি উঠে আসবে; বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী কমিটিতে নির্বাচিত শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; শ্রেণিকক্ষ ও পাঠ্যক্রমের বাইরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সূচিত হবে সামাজিক নেতৃত্ব, পরমত সহিষ্ণুতা, গণযোগাযোগের দক্ষতা, প্রতিযোগিতার আত্মবিশ্বাস ও পারফরমেটিভ কোয়ালিটি; ছাত্রসংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতি সরকার বা দলমুখী হবে না, বরং সংস্কৃতিমুখী হবে।

শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে— দেশি-বিদেশি যে কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী যোগ্য প্রার্থীর জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরি উন্মুক্ত রাখতে হবে; অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো চাকরিপ্রত্যাশী তার ব্যাকগ্রাউন্ডের কারণে যেন বৈষম্যের শিকার না হন তা নিশ্চিত করতে হবে; প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক পদে আবেদনকারীর উচ্চতর ডিগ্রি/অভিজ্ঞতা (এমফিল, পিএইচডি, পোস্টডক, ফেলোশিপ) থাকলে শর্ত হিসেবে অনার্স ও মাস্টার্সের সিজিপিএ (৩.৫) শিথিল করা যেতে পারে।

প্রভাষক পদের নিয়োগ হবে অস্থায়ী; নিয়োগকারী পিএইচডি এবং নিজ ডিসিপ্ল্যানের একটি টপ জানালে একক (বা প্রথম লেখক) আর্টিকেল প্রকাশ করার পর সহকারী অধ্যাপক পদে স্থায়ীভাবে নিয়োগ বা পদোন্নতি পাবেন; শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া ত্রুটিমুক্ত ও নিরপেক্ষ করতে হবে।

শিক্ষকদের জবাবদিহি বিষয়ে বলা হয়েছে— শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষক মূল্যায়ন ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে হবে এবং তা শিক্ষকের পদোন্নতির একটি ক্রাইটেরিয়া হিসেবে বিবেচনা করতে হবে; শিক্ষককে তার কর্মস্থলে নিয়মিত হতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে একজন শিক্ষকের অপরাপর কাজকে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার আওতায় আনতে হবে; প্রভাষক থেকে অধ্যাপক প্রত্যেক ক্যাটাগরির শিক্ষকের কাজ ও দায়িত্ব বৈষম্যহীনভাবে বণ্টন করতে হবে; কর্মরত থেকে নির্ধারিত দায়িত্ব (ক্লাস/কাজ) পালন না করা হলে ওই দিনটি বিনা বেতনে ছুটি হিসবে গণ্য করতে হবে।

পরীক্ষা হলের ডিউটিকে ঐচ্ছিক হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই; বিভাগকে আগাম না জানিয়ে নির্ধারিত দিনের ডিউটি পালন না করলে তা বিনা বেতনে ছুটি হিসেবে গণ্য করতে হবে; বিভাগ বা ইনস্টিটিউটের সভাপ্রধান বা পরিচালকের দায়িত্ব, কর্মপরিধি ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। গবেষণা বা অন্য খাতগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে আসা দেশি-বিদেশি অর্থের উৎস ও তার ব্যবহারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

আরও পড়ুন

শিক্ষক রাজনীতি ও শিক্ষক সমিতি সংক্রান্ত প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে— বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও রাষ্ট্রের সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পক্ষে সার্বক্ষণিক বার্গেইনিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করবে শিক্ষক সমিতি; তাই স্বার্থের দ্বন্দ্ব এড়াতে শিক্ষক সমিতির পদে থাকা কোনো ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বা রাষ্ট্রের কোনো প্রশাসনিক পদ গ্রহণ করতে পারবেন না; একজন শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটির বেশি পদে থাকতে পারবেন না; বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি নির্বাচন অনলাইনে হতে হবে, তাতে প্রচারণার আতিশয্য যেমন কমবে তেমনই তা হবে ব্যয়সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব।

গবেষণা বরাদ্দ, শিক্ষক-বৃত্তি ও বেতন কাঠামো— বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় সরকারি বরাদ্দ বাড়াতে হবে; জাতীয় বাজেটে আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড জিডিপির ৪ ভাগ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ দিতে হবে; রাষ্ট্রীয় বরাদ্দের পাশাপাশি গবেষণা ব্যয় হিসেবে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উৎসের সন্ধান করতে হবে; করপোরেট খাত যেন শিক্ষাখাতকে সিএসআর ফান্ডিংয়ের জন্য অগ্রাধিকার দেয় তার উদ্যোগ নিতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয় ইন্ডাস্ট্রি ও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় ও সমঝোতা করে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করবে; গবেষণার অর্থায়নে ইন্ডাস্ট্রি ও মন্ত্রণালয় এগিয়ে আসবে; বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজনীয় গবেষণা সম্পাদন করে রাষ্ট্রের সমৃদ্ধি ও বিকাশে সরাসরি অংশগ্রহণ করবে এবং একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।

বিদেশি গবেষকদেরও বৃত্তি দিয়ে উচ্চতর গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সেন্টারগুলোর কার্যক্রম রিভিউ ও পুনর্বিন্যাস করা প্রয়োজন; পাশাপাশি যাদের রিসার্চ প্রোফাইল ভালো এমন শিক্ষকদের ওইসব সেন্টার পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া প্রয়োজন; হাই-ইস্পেক্ট জার্নালে প্রকাশিত আর্টিকেলের জন্য শিক্ষককে ইনসেনটিভ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে; শিক্ষকদের নিজস্ব উদ্যোগে পরিচালিত গবেষণার ক্ষেত্রে স্বীকৃতি ও প্রণোদনা দিতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক তথা রাষ্ট্রের সব স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের জন্য পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর অনুসরণে স্বতন্ত্র বেতন স্কেল নির্ধারণ করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের আর্থিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা-সম্পর্ক নতুন আইনি কাঠামোয় পুনর্নির্ধারণ করতে হবে।

প্রকাশনা, জার্নাল, বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইট বিষয়ে প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে— বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ‘রিভিউ ইন গাইডলাইন’ থাকতে হবে; অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ শিক্ষকের একটি কমিটিকে এ গাইডলাইন তৈরির দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে; বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত সব জার্নালের অনলাইন সংস্করণ এবং ডিজিটাল অবজেক্ট আইডেন্টিফায়ার (ডিওআই) থাকতে হবে; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা ও মুদ্রণ বিভাগ সচল করতে হবে; অভিজ্ঞ একজনকে পূর্ণকালীন নিয়োগ দিয়ে তা পরিচালনার দায়িত্ব দিতে হবে; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইট হালনাগাদ করতে হবে; প্রতিটি শিক্ষকের প্রোফাইলে তার সম্পর্কে পরিপূর্ণ তথ্য থাকা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

লাইব্রেরি ও শিক্ষাসামগ্রী বিষয়ে প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে— বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি সিস্টেমকে ক্রমশ অনলাইনভিত্তিক করতে হবে, যেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যে কোনো লোকেশনে বসে তা ব্যবহার করতে পারেন; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিকে রাত ১২টা পর্যন্ত চালু রাখতে হবে; শিক্ষার্থীরা যেন তাদের প্রয়োজনীয় শিক্ষাসামগ্রীর লোন করতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে; ইন্টার লাইব্রেরি লোন প্রথা চালু করতে হবে; প্রতিটি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের সেমিনার ও লেইটেস্ট বই ও জার্নালের তালিকা করে তা লাইব্রেরিতে রাখতে হবে; প্ল্যাজিয়ারিজম পরীক্ষার জন্য অনলাইনভিত্তিক সিমিলারিটি ডিটেকশন সার্ভিসের ব্যবস্থা করতে হবে; প্রত্যেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সেই একসেস থাকতে হবে।

অবকাঠামোগত পরিকল্পনা বিষয়ে প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে— বিশ্ববিদ্যালয়ের দখল হয়ে যাওয়া ভূমি উদ্ধার করার উদ্যোগ নিতে হবে; যথাযথ পরিকল্পনা ব্যতীত ক্যাম্পাসে নতুন স্থাপনা তৈরি করা যাবে না; ক্যাম্পাসের বহুতল ভবন নিয়ে সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে, ফাঁকা স্পেসগুলো ভরাট করা যাবে না, বরং নতুন করে ফাঁকা স্পেস তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূমি ও আবাসন সংকটের প্রকটতা বিবেচনায় নিয়ে প্রভোস্ট বাংলোগুলো বাতিল করে এক বা একাধিক, প্রয়োজন মতো, প্রভোস্ট টাওয়ার হতে পারে; প্রভোস্ট টাওয়ারের জায়গায় পরিকল্পিতভাবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন ভবন তৈরি করতে হবে।

একটি কারিগরি ও বিশেষায়িত কমিটি করে অতিদ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজনমাফিক অবকাঠামোগত সংস্কার করতে হবে; ক্যাম্পাসের সর্বত্র শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের জন্য একটি শক্তিশালী ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক স্থাপন করে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সরবরাহ করতে হবে; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজকে বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান রিসোর্সকে নিজেদের উন্নয়ন ও বিকাশে নিয়োজিত করতে হবে।

ক্যাম্পাসের পরিবেশ বিষয়ে প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে— স্টিকারযুক্ত গাড়ি এবং অন্য জরুরি যানবাহন ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে অন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে হবে; ক্যাম্পাসের প্রবেশমুখগুলোতে পরিকল্পিতভাবে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য বহুতল পার্কিং ব্যবস্থা করা যেতে পারে; ক্যাম্পাসের ভেতরের যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ (ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার) করতে হবে; ক্যাম্পাসে হর্ন নিষিদ্ধ করতে হবে; রাস্তাগুলোতে বাইসাইকেল চলাচলের লেন এবং পর্যাপ্ত বাইসাইকেল স্ট্যান্ড রাখতে হবে; ক্যাম্পাসে ভেতরের ফুটপাতকে নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে; শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে ক্যাম্পাসের ভেতর মিছিল ও মাইকিংয়ের সীমিত ব্যবহার কিংবা নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।

ক্লাস চলাকালীন মিছিল ও মাইকিং বন্ধ রাখতে হবে; রাত ১১টার পর টিএসসিতে মাইকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে, যেন পার্শ্ববর্তী হলগুলোর শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ও ঘুম বিঘ্নিত না হয়; ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে পাবলিক টয়লেটের সুব্যবস্থা করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয় চৌহদ্দিতে সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চক্রাকার বাস (২০ মিনিট অন্তর অন্তর) চালু করতে হবে, যেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাদের গন্তব্যে অনায়াসে চলাচল করতে পারেন।

শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারে যা চায় ‘শিক্ষক সমাজ’

উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য নিয়োগ বিষয়ে প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে— বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য নিয়োগে দলীয় আনুগত্য ও সংশ্লিষ্টতা নয়, বরং প্রধানত বিবেচনায় নিতে হবে তাদের জ্ঞানগত উৎকর্ষ, বিদ্যায়তনিক ব্যবস্থাপনা ও নেতৃত্বদানের যোগ্যতা, সর্বোপরি শিক্ষার্থী-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতার গুণাবলি। উপাচার্য ও উপ উপাচার্য নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ, প্রত্যাশা ও মতামতের পরিপূর্ণ প্রতিফলন ঘটাতে হবে।

উপাচার্যের পুঞ্জীভূত ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে; সিদ্ধান্ত ও নীতি প্রণয়নে ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহি ও গণতান্ত্রিকতা নিশ্চিত করতে হবে; উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সিনেট আট সদস্যের একটি সার্চ কমিটি গঠন করে অ্যাপ্লিকেশন আহ্বান করবে; প্রাপ্ত অ্যাপ্লিকেশন থেকে উপাচার্য হিসেবে তিনজন এবং উপ-উপাচার্য হিসেবে পাঁচজনের একটি প্যানেল প্রস্তাব করবে সার্চ কমিটি; বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য সেখানে থেকে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য নিয়োগ করবেন।

সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে বলা হয়েছে— বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষসহ সিন্ডিকেটে নির্বাচিত ছয়জন শিক্ষক প্রতিনিধি রেখে নিম্নোক্ত সংস্কার করতে হবে। আচার্য প্রতিনিধি তিনজনের পরিবর্তে একজন থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন এমিরেটাস অধ্যাপক বা একজন দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ, কলেজ প্রতিনিধি দুজনের পরিবর্তে একজন থাকবেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে কর্মরত একজন বিচারপতি, কর্মরত শিক্ষা সচিব, অর্থ সচিব এবং অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপাচার্য বা উপ-উপাচার্য।

সিনেট বিষয়ে বলা হয়েছে— সিনেট নির্বাচনের রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট পদপ্রার্থী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক অংশ নিতে পারবেন না। একজন শিক্ষক প্রতিনিধি এবং ২৫ জন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট রেখে আরও সংস্কার করতে হবে।

ডিন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে— ডিনের পাশাপাশি সহযোগী ডিনের (অ্যাসোসিয়েট ডিন) একটি পদ তৈরি করতে হবে; একবারের বেশি কেউ ডিন কিংবা সহযোগী ডিন থাকতে পারবেন না; নির্বাচিত ডিন ও সহযোগী ডিনের মেয়াদ তিন বছরের বেশি হবে না; অনুষদের প্রশাসনিক কাজের দায়িত্বে থাকবেন ডিন; জার্নাল এবং গবেষণামূলক কাজের দায়িত্বে থাকবেন সহযোগী ডিন।

প্রভোস্ট প্রসঙ্গে বলা হয়েছে— একবারের বেশি কেউ একটি হলের প্রভোস্ট হতে পারবেন না এবং প্রভোস্টশিপের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ তিন বছর। প্রক্টর নিয়োগ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে— উপাচার্য (প্রধান), উপ-উপাচার্য- প্রশাসন, একজন সিন্ডিকেট সদস্য, একজন প্রাক্তন প্রক্টর এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি (ডাকসুতে নির্বাচিত) সদস্যের ভিত্তিতে প্রক্টর নিয়োগ কমিটি গঠিত হবে।

এমিরেটাস অধ্যাপক নির্বাচন ক্ষেত্রে সংগঠনটির প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে— উপাচার্য (প্রধান), উপ-উপাচার্য (শিক্ষা), বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন খ্যাতিমান অধ্যাপক, একজন সাবেক জাতীয় অধ্যাপক বা দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ- এই চারজন আলোচনা সাপেক্ষে যে ফ্যাকাল্টি থেকে এমিরেটাস অধ্যাপক নেওয়ার পরিকল্পনা করবেন, সে ফ্যাকাল্টির দায়িত্বরত ডিনের সঙ্গে এ ব্যাপারে পরামর্শ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

এমএইচএ/এমকেআর/এমএস