ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ক্যাম্পাস

ইবিতে সৎ ও দক্ষ উপাচার্য চান শিক্ষার্থীরা, আলোচনায় যারা

মুনজুরুল ইসলাম | ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় | প্রকাশিত: ০৩:৫০ পিএম, ১৯ আগস্ট ২০২৪

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একসঙ্গে পদত্যাগ করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ। পরে পদত্যাগ করেন প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা। এছাড়া বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরাও গুটিয়ে নিয়েছেন নিজেদেরকে।

শীর্ষ পদগুলো শূন্য হয়ে পড়ায় অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে। সরকার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও শীর্ষ পদগুলোতে শূন্যতা থাকায় স্বাভাবিক হয়নি কার্যক্রম। শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে দ্রুত উপাচার্য নিয়োগের দাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন সৎ, যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষাবিদকে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হোক; যিনি হবেন শিক্ষার্থীবান্ধব। দলীয় ও রাজনৈতিক পরিচয় নয় বরং শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ও প্রশাসনিক দক্ষতা সম্পন্ন শিক্ষককে উপাচার্য হিসেবে প্রত্যাশা শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমান বলেন, ‘উপাচার্য হিসেবে এমন একজন শিক্ষককে চাই যিনি শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষাকে বুঝতে পারবেন এবং শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করবেন। বিগত সময়ে আমরা নিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপাচার্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ শুনেছি। এবার একজন সৎ ও নীতিসম্পন্ন মানুষকে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হোক।’

বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমারদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণায় অনেক পিছিয়ে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়কে এসব ক্ষেত্রে এগিয়ে নিতে একজন স্কলার শিক্ষককে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হোক।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক এস এম সুইট জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে দ্রুত শীর্ষপদে নিয়োগ প্রয়োজন। তবে আগে যেমন দলীয় বিবেচনায় লবিংয়ের মাধ্যমে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হতো, আমাদের চাওয়া এখন যেন সেভাবে নিয়োগ দেওয়া না হয়। উপাচার্য হোক শিক্ষার্থীদের জন্য, যেন কোনো দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী না হয়।’

উপাচার্য পদ পেতে আলোচনায় যারা

সরকার পতনের পর থেকেই উপাচার্যসহ শীর্ষ পদগুলোতে নিয়োগ পেতে তদবির শুরু করেছেন বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকরা। এরমধ্যে আলোচনায় থাকা শিক্ষকরা হলেন ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আলীনূর রহমান, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যপদ্ধতি বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক ড. মিজানূর রহমান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. নজিবুল হক, আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. তোজাম্মেল হোসেন, লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম মতিনুর রহমান এবং আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী। তারা সবাই বিএনপিপন্থি শিক্ষক সংগঠনের সদস্য। এছাড়া জামায়াতপন্থি কয়েকজন শিক্ষকও উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেতে গোপনে চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।

আলোচনায় থাকা শিক্ষকদের মধ্যে অধ্যাপক ড. মো. আলীনূর রহমান ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুরে থাকাবস্থায় ১৯৮৮ সালে ব্যবস্থাপনা বিভাগে যোগ দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে কর্মরত প্রায় ৪৫০ শিক্ষকের মধ্যে যোগদানের দিক থেকে তিনি সবচেয়ে সিনিয়র। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর, শহীদ জিয়াউর রহমান হলের প্রভোস্ট, ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব করেন। তিনি একাধিকবার শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের কোষাধ্যক্ষ ও ভাইস-চেয়ারম্যান ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া পরিষদের সভাপতিরও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। 

অধ্যাপক আলীনূর রহমান লিয়েন ছুটিতে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কুল অব এডুকেশন এবং ওপেন স্কুলের ডিনের দায়িত্বের পাশাপাশি বোর্ড অব গভর্নরসের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, শহীদ জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়ার স্মৃতি সংবলিত ম্যুরাল ভাঙার প্রতিবাদ করায় ২০০৯ সালে তাকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়।

অধ্যাপক মিজানূর রহমান চারবার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্বপালন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় জিয়া পরিষদের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন তিনি। তিনি দক্ষিণ কোরিয়া ও আর্মেনিয়ার দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।

অধ্যাপক এমতাজ হোসেন বর্তমানে কলা অনুষদের ডিন ও জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় মহাসচিব হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। এর আগে তিনি একবার শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

অধ্যাপক নজিবুল হক এর আগে একবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় জিয়া পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক অ্যাসোসিয়েশনের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অধ্যাপক তোজাম্মেল হোসেন। তিনি দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় জিয়া পরিষদের সভাপতি ও একবার শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

বর্তমানে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন অধ্যাপক মতিনুর রহমান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে জিয়া পরিষদ ভেঙে গঠিত সাদা দলের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ও ইউট্যাব বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কার্যনির্বাহী সদস্য পদে রয়েছেন। তিনি একবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

অধ্যাপক এয়াকুব আলী একবার শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও জিয়া পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। 

এসআর/এমএমএআর/এমএস