ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ক্যাম্পাস

ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সরব হচ্ছেন শিক্ষার্থী-আন্দোলনকারীরা

হাসান আলী | প্রকাশিত: ১২:৩৭ পিএম, ১১ আগস্ট ২০২৪

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট অবসান হয়েছে আওয়ামী লীগের ১৫ বছর ৬ মাস ৩০ দিনের শাসনামলের। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন জারি থাকা ছাত্রলীগের দখলদারত্বেরও অবসান হয়েছে। ১ যুগের বেশি সময় ধরে চলা ছাত্রলীগের গণরুম-গেস্টরুমের নির্যাতনের ভয়াবহতা এখনো শিক্ষার্থীদের মনে দাগ কেটে আছে। তাই নতুন সরকারের আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চাইছেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও হলগুলোতে কোনো ছাত্র রাজনীতি না থাকুক।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, অবিলম্বে হল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদগুলো চালু করে নির্বাচন দিতে হবে। সেখানে কোনো দলীয় রাজনীতি থাকবে না। নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করে যাবেন। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ও ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুল প্রচলিত একটি ফেসবুক পেজে আবাসিক হলে ছাত্র রাজনীতির পক্ষে-বিপক্ষে এবং ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির পক্ষে-বিপক্ষে দুটি হ্যাঁ-না ভোট হয়েছে। যেখানে আবাসিক হলে ছাত্র রাজনীতির পক্ষে-বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন মোট ৯২৩ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে আবাসিক হলে ছাত্র রাজনীতি চান না ৯১.১ শতাংশ এবং ছাত্র রাজনীতির পক্ষে ভোট দেন ৮.৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। একইভাবে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি চালু রাখার পক্ষে-বিপক্ষে মোট ভোট দিয়েছেন ৮৯৯ জন শিক্ষার্থী। যাদের মধ্যে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি চান না ৯৪ শতাংশ এবং চান মাত্র ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী।

আরও পড়ুন

আব্দুল্লাহ আল মামুন নামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেছেন, ছাত্রলীগ চলে গিয়েছে। ক্যাম্পাসে আবার কোনো ছাত্রদল, শিবির বা অন্য কোনো দলীয় লেজুড়বৃত্তিক সংগঠন না আসুক। ক্যাম্পাস হবে ছাত্ররাজনীতি মুক্ত। ছাত্র সংসদের মাধ্যমে ছাত্রদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ছাত্রদের অধিকারের কথা বলবে। কোনো গেস্টরুম, গণরুম থাকবে না। বাংলাদেশের কোনো শিক্ষাঙ্গনেই ছাত্র রাজনীতি না আসুক।

ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সরব হচ্ছেন শিক্ষার্থী-আন্দোলনকারীরা

তবে ছাত্র সংগঠনগুলো ভাবছে অন্য কথা। তারা ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে না। তারা চান রাজনীতির যৌক্তিক সংস্কার।

‘শিক্ষার্থীরা মুদ্রার এক পিঠ দেখছে’ দাবি করে গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক নিশান বলেন, শিক্ষার্থীরা এমনটা যে চাচ্ছে, এই চাওয়াটা গত ২০-৩০ বছর ধরে শাসকশ্রেণি যে অপরাজনীতির চর্চা করেছে, সেই রাজনীতির বাই প্রোডাক্ট হিসেবে আসছে। উল্টো পাশটা যদি আমরা দেখি, এখানে যারা গণতান্ত্রিক উপায়ে কাজ করছে তারা ছাত্রদেরই অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন লড়াই সংগ্রাম করেছে, রক্ত ঝরিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নানান অনিয়ম নিয়ে লড়াই করেছে। এই ছাত্ররা এক পিঠ দেখেছে। আর সেটা দিয়েই বিচার করছে।

তিনি বলেন, এখানকার কোনো বামপন্থি ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাসে কোনো গণরুম-গেস্টরুম করায়নি। ছাত্রদের ওপর নির্যাতন চালায়নি। শাসকশ্রেণি দীর্ঘদিন যে ন্যারেটিভ তৈরি করে দিয়েছে, তার বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে এই দাবি উঠছে। যদি এটা কার্যকর হয় তাহলে আগামীর বিশ্ববিদ্যালয় তথা বাংলাদেশের জন্য বুমেরাং হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খানও ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে নন। তিনি বলেন, স্বৈরশাসকের পতনের পর রাজনীতি থাকবে কী থাকবে না এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাজনীতি সমস্যা না, মাথাব্যথার জন্য মাথা কাটাটা কোনো সমাধান নয়। আজই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের সিটগুলো যদি নিশ্চিত করা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন যদি সত্যি সত্যি হলগুলোর প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে, তাহলে আসলে রাজনীতি আর কোনো সমস্যা না। এখানে রাজনীতির নামে এতদিন যেটা হয়েছে সেটা দস্যুবৃত্তি। হিটলারের কনসেনট্রেশন ক্যাম্প বানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: ঢাবির জিয়া হল রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করে শপথ পাঠ

তিনি আরও বলেন, এই কনসেনট্রেশন ক্যাম্প নিষিদ্ধ করতে হবে, রাজনীতি নয়। রাজনীতিটাকে আমরা রাজনীতির মতোই দেখতে চাই। যে আন্দোলনটা হলো, সেটা কিন্তু রাজনীতির বাইরে কিছু না। আমরা দেখেছি ছাত্রলীগের নেতাদের হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এগুলো রাজনীতির বাইরে নয়, এটাও রাজনীতির পাল্টা রাজনীতি। এই রাজনীতি আমরা নতুন করে নির্মাণ করতে চাচ্ছি। রাজনীতি নিষিদ্ধ করে আমি আমার গণতান্ত্রিক স্পেসটাকে নিশ্চিহ্ন করবো না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. সামিনা লুৎফা ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের উদ্দেশ্যে ফেসবুকে লেখেন, এত বড় রাজনৈতিক লড়াই যারা করলেন, তারা শিক্ষার্থীদের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি করলে হবে? আপাতত, শিক্ষকগণ আপনারা দলীয় লেজুড়ের রাজনীতি করা বন্ধ করেছেন? ছাত্রদের এসব নির্দেশনা দেন কোন নৈতিকতায়?

তবে শিক্ষার্থীদের সুরেই কথা বলেছেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম।

আজ (রোববার) সকালে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাস দিয়ে আন্দোলনের এই অন্যতম সমন্বয়ক বলেছেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নয়, নিয়মিত ‘ছাত্র সংসদ’ নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্র প্রতিনিধি চাই৷’

এর আগে ৯ আগস্ট আরেক পোস্টে এই সমন্বয়ক বলেন, ‘২০১৯ সালে ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল ৷ এরপর আর হয়নি ৷ আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা উচিৎ ৷ সেখানে নিয়মিত নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্র সংসদ পরিচালিত হওয়া উচিৎ ৷ ফলে তোষামদির রাজনীতি বন্ধ হবে, জনপ্রতিনিধি তৈরির ভিত গড়ে উঠবে, ভবিষ্যৎ নেতৃত্বও গড়ে উঠবে৷’ তিনি বলেছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নয়। নিয়মিত ‘ছাত্র সংসদ’ নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্র প্রতিনিধি চাই ৷

এদিকে শুক্রবার (৯ আগস্ট) বিকেল পৌনে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়াউর রহমান হলের সামনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে হলকে সমস্ত লেজুড়বৃত্তিক রাজনৈতিক দলের ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করে শপথ পাঠ করেন শিক্ষার্থীরা।

দেশের আরও বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এরই মধ্যে নিষিদ্ধ হয়েছে ছাত্ররাজনীতি। যার মধ্যে রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক), রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি), বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেফমুবিপ্রবি)।

এমএইচএ/এমএইচআর/এমএস