ঢাবির সিনেট অধিবেশনে ‘একনায়কতন্ত্র’ নিয়ে বিতর্ক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে একটা একদলীয় প্রশাসন বিরাজ করছে, একনায়কতন্ত্র চলছে।
বুধবার (২৬ জুন) রাত ৮টার দিকে সিনেটের বার্ষিক অধিবেশনে বক্তৃতাকালে ড. ওবায়দুল ইসলামের এমন বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তর্কবিতর্ক হয়। যদিও তার এই বক্তব্য থেকে ‘একনায়কতন্ত্র’ শব্দটি সিনেট সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল এক্সপাঞ্জ করে দেন।
বক্তব্যে ড. ওবায়দুল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে একচ্ছত্র আধিপত্য চলছে একটা দলের। হলের প্রশাসনগুলোতে একজন মাত্র প্রভোস্ট আছে বিরোধীমতের। এটা উপাচার্যের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে দেওয়া হয়েছে, তা না হলে হয়তো আরও আগেই তাকেও বাদ দেওয়া হতো। কিন্তু এর বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রশাসন, রিসার্চ সেন্টার, হাউস টিউটরসহ প্রত্যকটা জায়গায় কিন্তু ভিন্নমতের কোনো শিক্ষক নেই। ঠিক যেভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গনে ভিন্নমতের ছাত্র সংগঠনগুলোর পদচারণা হলে বিভিন্নভাবে তাদের টর্চার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ভিন্নমতের ছাত্র সংগঠনের কোনো অবস্থান নেই। এমনকি তাদের কাউকে ক্যাম্পাসে দেখলে নির্যাতন করে পুলিশে দেওয়া হয়। আমরা যখন তাদের ছাড়ানোর জন্য প্রক্টরকে অনুরোধ করি তখন প্রক্টর তার অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। আমরা চাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সবাইকে আপনি প্রটেকশন দেবেন। এ জায়গায় উপাচার্যের নিরপেক্ষতা আমরা আশা করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ছাত্র সংগঠনের একচ্ছত্র আধিপত্য থাকবে, সেটি হতে পারে না।
ড. ওবায়দুল ইসলামের বক্তব্য শেষ হওয়ার পর পরই পয়েন্ট অব অর্ডারে কথা বলেন সিনেটের রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি বাহলুল মজনুন চুন্নু। তিনি ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ করে তা এক্সপাঞ্জ করার জন্য উপাচার্যের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আমি সব সময় ড. ওবায়েদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনি। তিনি অন্যান্য সময় তেজোদীপ্ত বক্তব্য রাখেন। সেই তুলনায় আজ তার বক্তৃতা একটু কম তেজোদীপ্ত ছিল। তবে তিনি বক্তব্যের শুরুতেই বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘একনায়কতন্ত্র’ চলছে। আমি তার এই শব্দটির প্রতিবাদ করছি। তার এই বক্তব্যটুকু আমি এক্সপাঞ্জ করার জন্যে অনুরোধ জানাচ্ছি।
এছাড়াও পয়েন্ট অব অর্ডারে কথা বলেন শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, উনার বক্তব্য, প্রেজেন্টেশনটা (ড. ওবায়েদ) অনেক সুন্দর ছিল। তবে এর মধ্য দিয়ে তিনি কিছু ভুল তথ্যের অবতারণা করেছেন। উনি বলেছেন, কোনো ছাত্র সংগঠন নাকি এখানে আসতে পারে না। এটা খুবই ভুল একটা তথ্য। আমি তার এই বক্তব্য প্রত্যাহার করার জন্যে অনুরোধ করবো অথবা আপনি এক্সপাঞ্জ করবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে সব শিক্ষার্থীরা আসে এবং রাজনৈতিক সংগঠনগুলোও তাদের কর্মসূচি পালন করে থাকে।
একই সময়ে আরও একজন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট দাঁড়িয়ে ড. ওবায়েদের বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার জন্য সিনেটের সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের কাছে অনুরোধ জানান। এরপর উপাচার্য ও সিনেটের সভাপতি ড. মাকসুদ কামাল ড. ওবায়েদের বক্তব্যটি এক্সপাঞ্জ করে দেন।
তিনি ড. ওবায়েদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি যেভাবে ‘একনায়কতন্ত্র’ কথাটি উল্লেখ করেছেন, অতীতকে ধরলে আমরাও অনেক কথা বলতে পারি। এ ধরনের শব্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। সুতরাং আমি এই শব্দটি একপাঞ্জ করলাম।
উপাচার্যের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানিয়ে সাদা দলের আহ্বায়ক ড. লুৎফর রহমান বলেন, প্রফেসর রহিম বলেছেন উনার হলে উঠতে পারে না এমন কোনো ছাত্র নেই। কিছু ছাত্র আছে হলে ওঠা তো দূরের কথা, ফার্মগেটের এদিকেও আসতে পারে না। সুতরাং তারা হলে উঠবে কী করে? এগুলো তো সত্য কথা। আপনি তার বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করতে পারেন, কিন্তু আমার মনে হয় এক্সপাঞ্জ করার মতো কোনো কথা তিনি বলেননি।
এমএইচএ/এমএইচআর