ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ক্যাম্পাস

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়

এপিএসের পদোন্নতিতে ভিসির তোড়জোড়, নতুন পদ সৃজন

আহমেদ জামিল | সিলেট | প্রকাশিত: ০৮:০৮ পিএম, ২০ মে ২০২৪

‘আস্থাভাজন’ সহকারী ব্যক্তিগত সচিবকে (এপিএস) পদোন্নতি দিতে নিজ দপ্তরে সহকারী রেজিস্ট্রারের নতুন পদ সৃজন করে তোড়জোড় শুরুর অভিযোগ উঠেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে। এরইমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে পদ অনুমোদন করে নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নিয়োগ কার্যক্রমও শুরু করেছে রেজিস্ট্রার দপ্তর। গত ৫ মে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দপ্তরের একজন সহকারী রেজিস্ট্রার নিয়োগের জন্য যোগ্য প্রার্থীদের কাছ থেকে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়েছে।

তবে এ পদে আবেদন সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হলেও উপাচার্যের এপিএস ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইদুর রহমান ভূঁইয়াকে নিয়োগের পাঁয়তারা চলছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে বিষয়টি সবাই অস্বীকার করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের ‘আস্থাভাজন’ হিসেবে পরিচিত কর্মকর্তা সাইদুর রহমানের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন যোগদানের পরই বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব দপ্তর থেকে সাইদুর রহমানকে নিয়ে আসা হয় তার কার্যালয়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে গেছে, বর্তমানে উপাচার্যের দপ্তরে একজন ডেপুটি রেজিস্ট্রার, একজন সহকারী রেজিস্ট্রার ও একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা রয়েছেন। এ তিনজনের মধ্যে ডেপুটি রেজিস্ট্রার উপাচার্যের পিএস, সহকারী রেজিস্ট্রার পিএ এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা এপিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ দপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও এপিএস হলেন সাইদুর রহমান ভূঁইয়া।

জানা গেছে, ২০১৪ সালে সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন সাইদুর রহমান। পরবর্তী সময়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি। অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন যোগদানের পর উপাচার্য কার্যালয় থেকে উজায়ের আহমদকে পাঠানো হয় হিসাব দপ্তরে। আর কুমিল্লায় বাড়ি হওয়ার সুবাদে হিসাব দপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে থাকা সাইদুর রহমানকে নিয়ে আসা হয় উপাচার্য দপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে। পরবর্তী সময়ে উপাচার্য কার্যালয়ে এপিএস পদ সৃষ্টি করে সেই পদে সাইদুর রহমানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এপিএস পদের জন্য প্রতিমাসে চার হাজার টাকা ভাতা নেন সাইদুর।

সূত্র বলছে, সাইদুর রহমান প্রশাসনিক কর্মকর্তা থেকে সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে পদোন্নতির সময় হওয়ায় তোড়জোড় শুরু করেন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ। নিজ এলাকার ছেলে হিসেবে তার কার্যালয়ে পদোন্নতি দিয়ে রাখতে সহকারী রেজিস্ট্রারের নতুন আরেকটি পদ সৃজন করেন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে পদটি অনুমোদন করে নিয়ে আসেন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন। গত ৫ মে উপাচার্য দপ্তরের জন্য একজন সহকারী রেজিস্ট্রার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ফজলুর রহমান।

উপাচার্যের কার্যালয়ে সহকারী রেজিস্ট্রারের নতুন পদটি গতমাসে ইউজিসি থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়েছে বলে জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার ইউনুস আলী।

তিনি বলেন, উপাচার্য কার্যালয়ে নতুন সৃজন করা সহকারী রেজিস্ট্রার পদের অনুমোদন গতমাসে পাওয়া গেছে। ওই পদে নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন। কতজন আবেদন করেছেন তা এখন বলা যাচ্ছে না।

সূত্র বলছে, প্রশাসনিক কর্মকর্তা থেকে সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে পদোন্নতির জন্য আবেদন করেছেন সাইদুর রহমান। তার পদোন্নতির সময়ের সঙ্গে মিল রেখেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।

অবশ্য, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিনই পদোন্নতির জন্য আবেদন করেছেন বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, যেদিন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে সেদিন তিনিসহ ছয়জন কর্মকর্তা পদোন্নতির জন্য আবেদন করেছেন। তবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে পদোন্নতির আবেদনের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানান তিনি।

সাইদুর রহমান ভূঁইয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘৫ মে আমাদের ছয়জন কর্মকর্তার একসঙ্গে প্রমোশন ডিউ (পদোন্নতির সময়) হয়েছে। এজন্য আমরা ছয়জনই আবেদন করেছি। প্রমোশন ডিউ হলে ওপরের পদগুলো খালি থাকলে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এটা আমাদের এখানে নিয়ম।’

তিনি বলেন, ‘আমি পদোন্নতির জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু সহকারী রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগের জন্য এখনো আবেদন করিনি। আমার পদোন্নতির জন্য কেউ কিছু করে থাকলে তা আমার জানা নেই।’

উপাচার্যের এলাকায় বাড়ি কি না জানতে চাইলে সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমার মূল বাড়ি ঢাকায়। পড়াশোনা করেছি কুমিল্লায়। আমার বাড়ি কুমিল্লায় না, আমার দাদার বাপের বাড়ি। আমি কখনো যাইনি। আমাদের সবকিছু ঢাকায়।’

নিয়োগের বিষয়ে রেজিস্ট্রার ফজলুর রহমান বলেন, কোনো দপ্তরে পদ না থাকলে নতুন পদ সৃষ্টি করে ইউজিসি থেকে অনুমোদন নিতে হয়। তারপরে ওই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। উপাচার্যের দপ্তরে সহকারী রেজিস্ট্রার নিয়োগের জন্য ইউজিসির অনুমোদন নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলে অভ্যন্তরীণ প্রার্থীরাও আবেদন করতে পারেন। যাদের যোগ্যতা অর্জন হয় তাদের আবেদনের সুযোগ থাকে। তবে এই পদে কে নিয়োগ পাবেন সেটা নিয়োগ বোর্ডের বিষয়। এ ব্যাপারে কিছু বলা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এ দপ্তরে আমরা নতুন একটা পদ সৃজন করেছি। এখানে ভেতর থেকেই একজনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। সে দীর্ঘদিন ধরে এখানে কাজ করছে।’

ভেতর থেকে কে নিয়োগ পাবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, এটা নিয়ে কথা বলতে চাই না। আমাদেরকে আমাদের মতো কাজ করতে দেন। কোথায় কাকে দেওয়া যায় সেটা আমরা ভালো জানি।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিয়োগের জন্য আলাদা বোর্ড আছে। বোর্ড যদি মনে করে সে যোগ্য তাহলে তার নিয়োগ হবে। এটা নিয়ে এত কিছু বলার নেই।’

আহমেদ জামিল/এসআর/এমএস