ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ক্যাম্পাস

একসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ পেলেন তিন বন্ধু

মুনজুরুল ইসলাম | ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় | প্রকাশিত: ১২:৫৩ পিএম, ১৩ মে ২০২৪

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের তিন বন্ধু। পড়তেন একই বিভাগে। জীবন ও স্বপ্ন নিয়েও তাদের ভাবনা ছিল একইরকম। তাই স্বপ্ন জয়ে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন একসঙ্গেই। অবশেষে সেই স্বপ্ন ধরা দিয়েছে। একইসঙ্গে জয়ী হয়েছেন তিন বন্ধুই।

তারা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পৃথক তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণায় ফুল ফান্ডেট স্কলারশিপ পেয়েছেন তারা। স্কলারশিপ পাওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন- নাঈম হোসেন, মামুনুর রশিদ এবং সুমন আলী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রমে তাদের দেখা যেত একসঙ্গে। বিবিএতে ৩.৮৪ ও এমবিএতে ৩.৯৩ সিজিপিএ পেয়েছেন তিনজনই। সবাই একসঙ্গে অনার্স তৃতীয় বর্ষ থেকে গবেষণা শুরু করেন এবং এমবিএ শেষ করার আগেই বিভিন্ন জার্নালে সবারই বেশ কয়েকটি গবেষণাপত্র প্রকাশ হয়। তিনজনই আইইএলটিএসে ৬.৫ এর ওপর ও জিআই এ ৩০০ এর ওপর স্কোর পেয়েছেন। পরে বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য আবেদন করেন তারা। সুযোগ মেলে যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে।

সুমন আলী University of Texas at El Paso (পিএইচডি ইন ফাইন্যান্স) বিশ্ববিদ্যালয়ে, মামুনুর রশিদ University of Texas San Antonio (পিএইচডি ইন ফাইন্যান্স) বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং নাঈম হোসেন University of Nwe Orleans (পিএইচডি ইন ফাইন্যান্সিয়াল ইকোনোমিকস) বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছেন।

নাঈম হোসেন বলেন, আমরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলেই থেকেছিলাম। আমি লালন শাহ হলের ২১৯নং রুমে, মামুনুর রশিদ লালন শাহ হলের ৩১৮নং রুমে এবং সুমন আলী জিয়াউর রহমান হলের ৪৩২নং রুমে থাকতো। তবে আমরা রিসার্চের প্রথম দিকে লালন শাহ হলের কমন রুমে, কখনো আবার আমার নিজ রুমে এসে কাজ করতাম। করোনাকালীন সময়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটা রুম ভাড়া নিয়ে কাজ করেছিলাম। যখন ৩ জনই রিসার্চের বেসিক শিখে গেলাম, তখন থেকে আর একসঙ্গে থাকা লাগেনি।

কবে থেকে রিসার্চ শুরু করছেন প্রশ্নে বলেন, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমরা গবেষণার কাজ শুরু করেছিলাম। তখন আমরা বিবিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। আমার সাতটি, মামুনের ১০টি ও সুমনের ৬টি প্রকাশনা রয়েছে। এছাড়া আমাদের প্রত্যেকেরই কিছু পেপারস প্রসেসিংয়ে আছে।

বিসিএস বা সরকারি চাকরির পেছনে না ছুটে উচ্চ শিক্ষাকে বেছে নেওয়া বিষয়ে নাঈম বলেন, মানুষের ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য থাকে। বিসিএস অবশ্যই ভালো জব বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে। তবে আমি কখনো সাধারণ জ্ঞান বা অনেক মুখস্থ পড়ায় আগ্রহ পেতাম না। অন্যদের মতো আমার পরিবার থেকেও বিসিএসকে গুরুত্ব দিত। এমনকি যখন আমি গবেষণার জন্য লক্ষ্য সেট করি, আমার পরিবার প্রথমে নারাজ থাকলেও এখন তারা অনেক খুশি। যখন ক্রিয়েটিভ কিছু করতাম, অন্যরকম মজা পেতাম। যেটা মুখস্থ পড়া আর খাতায় লিখে আসার মধ্যে পেতাম না। এরপর বাংলাদেশের বর্তমান জব সেক্টর দেখলে খুবই হতাশ লাগে। এরপর যখন বিদেশে উচ্চ শিক্ষার ব্যাপারে জানলাম, পুরা ডেডিকেটেড হয়ে কাজ করেছি বিদেশে যাওয়ার জন্য।

পরবর্তী জীবনের লক্ষ্য নিয়ে তিনি বলেন, পিএইচডি শেষে দেশে ফিরে কোনো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত হতে চাই। যেখানে আমি আমার গবেষণা চর্চা করতে পারবো। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবো। যারা গবেষণায় আগ্রহী হবে তাদেরকে বিনামূল্যে গবেষণা শেখাবো ইনশাআল্লাহ।

বন্ধুদের অবদান নিয়ে তিনি বলেন, আমরা ৩ বন্ধু একসঙ্গে কাজ করলেও মামুনের অবদান অনেক বেশি। সে সর্বদা সিরিয়াসলি বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতো, বলতে গেলে আমিই বেশি ফাঁকিবাজ ছিলাম। তবে আমরা প্রত্যেকে কোনো না কোনো বিষয়ে বিশেষভাবে অভিজ্ঞ ছিলাম। সেটা আমরা অন্যকে অতি সহজেই করে দিতাম, শিখিয়ে দিতাম। তাই প্রয়োজনীয় কোনো বিষয়ে আমরা হতাশ হতাম না। আমরা একে অন্যের ব্যর্থতায় অনুপ্রেরণা হয়ে অবতীর্ন হতাম। তাই বলবো, আমাদের ৩ জনেরই সফলতার পিছনে তিনজনেরই প্রায় সমান অবদান আছে।

সাফল্যের অনুভূতি প্রকাশ করে তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, আমি এবং আমার বন্ধুরা অনেক বেশি খুশি। কারণ আমাদের অনার্স থেকে এই পর্যন্ত সবকিছু কেমন যেন আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন। অনেকেই আমাদের অনেক বিষয়ে ঈর্ষা করলেও আমরা তিন বন্ধু কখনো তা করিনি বরং এগিয়ে এসেছি একে অন্যের সহযোগিতায় নিঃস্বার্থভাবে।

এফএ/জেআইএম