ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ক্যাম্পাস

‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বৈষম্য তৈরি করবে’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় | প্রকাশিত: ১২:৩০ পিএম, ০৬ মে ২০২৪

‘সর্বজনীন পেনশন স্কিমে’ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অন্তর্ভূক্ত করার যে সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)। একইসঙ্গে আগামী জুলাই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গগুলোতে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সবাইকে সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিমে অন্তর্ভূক্ত করার বাধ্যবাধকতা থেকে সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

সোমবার (৬ মে) সকালে এক বিবৃতিতে ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান এ আহ্বান জানান।

নেতৃদ্বয় বলেন, গত বছর নিম্ন-আয় ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত পেনশনের বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীকে পেনশনের আওতায় আনার উদ্দেশ্যে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৩ (২০২৩ সনের ৪নং আইন)’ প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে (এস.আর.ও. নং ৪৮-আইন/২০২৪) আগামী ১ জুলাই ২০২৪ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সবাইকে সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিমে অন্তর্ভূক্ত করা হয়।

তারা বলেন, আগামী ১ জুলাই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা নতুন স্কিমে অন্তর্ভূক্ত হলে পুরোনোদের সঙ্গে তাদের বৈষম্য তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চাকরি করার পর পদোন্নতির পরিবর্তে বিজ্ঞাপিত শূন্য পদে সরাসরি নিয়োগ লাভ করলে পেনশন ব্যবস্থাপনার কী হবে তা নতুন প্রজ্ঞাপনে সুস্পষ্ট করা হয়নি! এমনকি সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অবসরের পর শিক্ষকরা বর্তমান ব্যবস্থার মতো এককালীন অর্থ পাবেন না।

অন্যদিকে সরকারি কর্মচারীরা এককালীন অর্থ প্রাপ্তির সুবিধার পাশাপাশি মাসিক ভাতা পাবেন। যা বৈষম্যমূলক এবং অন্যায়। কেননা, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং ক্ষেত্র বিশেষে চতুর্থ স্থান অর্জনকারী মেধাবী শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হন। কিন্তু এ ধরনের পেনশন স্কিমের ফলে মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে আগ্রহ হারিয়ে বিলাসী জীবন যাপন করা যায় এমন পেশার দিকে ঝুঁকবে। ফলে এই বৈষম্যমূলক পেনশন স্কিমের কারণে শিক্ষকদের সামাজিক অবস্থানের আরেক দফা অবনমন হবে বলে আমরা মনে করি।

ইউট্যাবের শীর্ষ দুই নেতা বলেন, সরকারের ‘সর্বজনীন’ স্কিমে প্রশাসন, পুলিশ, প্রতিরক্ষা, বিচার-বিভাগসহ রাজস্ব খাতের অন্যান্য কর্মচারীদের অন্তর্ভুক্ত না করে একতরফাভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অন্তর্ভূক্ত করায় পুরো দেশজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটি সন্তোষজনক পেনশন স্কিম কার্যকর থাকা সত্ত্বেও নতুন ‘প্রত্যয় স্কিম’ চাপিয়ে দেওয়া দীর্ঘদিন ক্ষমতা জবরদখল করে থাকা আওয়ামী সরকারের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার আরেকটি নজির মাত্র!

তারা বলেন, বর্তমানে একজন সিলেকশন গ্রেডের অধ্যাপক গ্রেড বিবেচনায় সরকারের অনেক জুনিয়র কর্মকর্তার তুলনায় পেশাগত নানান সুবিধাদিতে (দাপ্তরিক গাড়ি, ব্যক্তিগত গাড়ি ক্রয়ের জন্য প্রায় বিনা সুদে লোন এবং গাড়ি ব্যবহারের জন্য মাসিক ৫০ হাজার টাকা ব্যয়) অনেক পিছিয়ে আছেন। তাই সুযোগ-সুবিধার চরম বৈষম্যের কারণে মেধাবীরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় আসতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। এটা গোটা জাতির জন্য একটি অশনিসঙ্কেত।

জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষাকে ধ্বংস করার জন্য একটি প্রভাবশালী চক্রের বৈরী মনোভাব নতুন নয়। অথচ দক্ষ ও যুগোপযোগী জনশক্তি গড়ে তুলতে নিবেদিতপ্রাণ মেধাবী শিক্ষকের বিকল্প নেই! তবে এটি স্পষ্ট যে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব বেতন কাঠামো, নিজস্ব পেনশন ব্যবস্থাসহ সবক্ষেত্রেই স্বায়ত্তশাসন আজ হুমকির মুখে। তাই দল-মত নির্বিশেষে সহকর্মীদের এই শিক্ষা বিধ্বংসী তৎপরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

হাসান আলী/এমআরএম/এএসএম