এভারেস্ট বেইজ ক্যাম্প থেকে আফ্রিকা মিশনে ইশরাত
অ্যাডভেঞ্চারে পাহাড় ট্রেকিং অনেকের কাছে নেশার মত। পাহাড়ি গিরিপথ আর ঝরণার সৌন্দর্য্যের টানে লোকালয়ের কোলাহল থেকে ছুটি নিয়ে ভ্রমণপ্রিয় মানুষ ছুটে যান ট্রেকিংয়ে। ট্রেকিং মানে কোনো ঝরণার সন্ধানে দুর্গম পথ বেয়ে ওঠা, বন-জঙ্গল কখনো বা কাদা মাখা ঢালু রাস্তা ধরে এগিয়ে এ নেশাকে জয় করা।
বাস্তবে নিজের এ নেশাকে পরিপূর্ণ মাত্রায় রুপ দিতে পাহাড় অভিযানে নেমেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান। পিএইচডি এর পাশাপাশি সম্প্রতি স্বামীর সাথে এভারেস্ট বেইজ ক্যাম্পসহ তিনটি পাহাড়ে সফলভাবে আরোহন করেছেন তিনি।
জানা যায়, ইশরাত জাহান ক্যাম্পাসে সকলের কাছে "ঈশু" নামে পরিচিত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে অনার্স শেষ করেছিলেন তিনি। বর্তমানে থাইল্যান্ডের মাহিদোল ইউনিভার্সিটিতে স্কলারশিপ নিয়ে মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনলজি বিভাগে পিএইচডি করছেন।
তার বাসা সিরাজগঞ্জ জেলার সদর উপজেলায়। তিনি ইকবাল হোসেন ও শামীমা সুলতান দম্পতির মেয়ে।
ইশরাত জানান, ছোট বেলা থেকেই বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন ছিলো ইশরাতের। তবে পাহাড় ট্রেকিং এর উপর ছিলো তার আলাদা আগ্রহ জন্ম নেয়। বিয়ের পর পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সুযোগ পেলেই স্বামী তৌহিদুল আলমের সঙ্গে পাহাড় অভিযানে বেরিয়ে পড়েন। হানিমুনেও তারা নাফাখুম-আমিয়াখুম ট্রেকিংয়ে গিয়েছিলেন বলে জানান।
তিনি বলেন, ছোটবেলায় কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করত আমি বড় হয়ে কি হতে চাই, অকপটে বলতাম আমি বিজ্ঞানী হতে চাই! যদিও আমাদের দেশে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের একটা পারিবারিক চাপ থাকে, যে ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। তাই আমার ক্ষেত্রেও এটার ব্যতিক্রম ছিলোনা।
তিনি আরও জানান, পাহাড় ট্রেকিং এর রোমাঞ্চকর মুহুর্তগুলোর ভিডিও ধারণ করেন। আর এসব ভিডিওগুলো কন্টেন্ট আকারে সামাজিক মাধ্যমসহ ইউটিউবে শেয়ার করে থাকেন। দর্শক মহলে ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়তে শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত তার পাহাড় ট্রেকিং অভিযানের ভিডিওসমূহ ইউটিউবেই প্রায় এক লাখ ঘণ্টা দেখা হয়েছে।
পাহাড় ট্রেকিং পছন্দের কারণ জানতে চাইলে জাগো নিউজকে ইশরাত বলেন, আমি ব্যক্তিগত জীবনে অনেক সংগ্রাম করেছি । যতবার আমি পারবো না ভেবেছি, ততবারই পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে অনুপ্রেরণা নিয়েছি। নিজেকে পাহাড়ের নতুন নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে পাহাড়ের মত অটল থেকে নিজেকে অন্য মাত্রার নিয়ে যাবার চেষ্টা করে যাচ্ছি। বাঁধা বিপত্তিগুলো দূর করে নিজেকে যেভাবে পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে যাই, ঠিক সেভাবেই বাস্তব জীবনের সমস্যাগুলো কাটিয়ে নিজেকে অনন্য মাত্রায় নিয়ে যেতে চাই।
পরবর্তী পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা এভারেস্ট বেইজ ক্যাম্প ভীয়া গোকিও ট্রেকসহ, থাইল্যান্ডের বড় বড় কয়েকটি মাউন্টেইনে আমাদের সফল অভিযান করেছি। আফ্রিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বত 'মাউন্ট কিলিমানজারো' সামিটের মাধ্যমে আমরা সেভেন সামিট (সাতটি মহাদেশের সাতটি সর্বোচ্চ পর্বত) মিশনের চ্যাপ্টার শুরু করতে যাচ্ছি।
মনির হোসেন মাহিন/এনআইবি/এমএস