৬ দাবিতে ছাত্র সমাবেশের ঘোষণা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের
আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বর্তমান সরকারের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবিতে দেশব্যাপী ছাত্র সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বামপন্থি সাতটি সংগঠন নিয়ে গঠিত ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট’।
রোববার (১ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
আগামী ১৩ অক্টোবর চট্টগ্রামে ছাত্র সমাবেশ, ১৫ অক্টোবর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে, ৪ নভেম্বর রংপুরে, ৫ নভেম্বর বগুড়ায়, ৬ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, ১১ নভেম্বর বরিশালে, ১৭ নভেম্বর সিলেটে, ১৮ নভেম্বর ময়মনসিংহে এবং ২৪ নভেম্বর ঢাকায় কেন্দ্রীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ও গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক সাদেকুল ইসলাম সোহেল।
লিখিত বক্তব্যে ৬ দফা দাবিতে দেশব্যাপী ছাত্র সমাবেশের ঘোষণা দেন সাদেকুল ইসলাম। দাবিগুলো হলো- ১. ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পদত্যাগ এবং জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে; ২. সর্বজনীন, বৈষম্যহীন, বিজ্ঞানভিত্তিক, গণতান্ত্রিক এবং একই ধারার শিক্ষা নীতি প্রণয়ন কর। জাতীয় শিক্ষাক্রম- ২০২১ বাতিল করতে হবে; ৩. কাগজ-কলমসহ শিক্ষা উপকরণ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমাতে হবে; ৪. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস দখলদারত্ব বন্ধ করতে হবে। অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে; ৫. সাইবার নিরাপত্তা আইন ও অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিল- ২০২৩ বাতিল করতে হবে। শ্রমিকদের অবাধ ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার দিতে হবে; ৬. রাষ্ট্রীয়ভাবে গুম-খুন-নির্যাতন ও বিনা বিচারে মানুষ হত্যা বন্ধ করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন বন্ধ ও স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সাদেকুল ইসলাম সোহেল বলেন, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দেশের জনগণ হিসেবে আমরা দুঃসহ সময় পার করছি। রাতের অন্ধকারে ভোট ডাকাতির মধ্য দিয়ে জোরপূর্বক ক্ষমতায় আসা একটি ভয়ঙ্কর সরকার দীর্ঘদিন ধরে জনগণের কাঁধে চেপে আছে। আবারও তারা একই পথ অবলম্বন করে দেশি-বিদেশি মদতে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করছে। ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সাম্রাজ্যবাদী, আধিপত্যবাদী শক্তিগুলোর হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
ছাত্র জোট সমন্বয়ক আরও বলেন, সীমাহীন লুটপাট, ঘুস-দুর্নীতি, সিন্ডিকেট ব্যবসা, অর্থপাচার করে একটি শ্রেণি রাতারাতি শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে, অন্যদিকে সাধারণ জনগণ মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জাঁতাকলে পিষ্ট হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, আমলা এবং ব্যবসায়ীরা মিলে গত ১৫ বছরে ১১ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। উন্নয়নের নামে একদিকে বৈদেশিক ঋণ যেমন বাড়ছে, অন্যদিকে সেই অর্থের একটা বড় অংশ আবার লুটপাট হয়ে যাচ্ছে।
এসবের প্রতিবাদ করলে বিরোধী শক্তিগুলোর ওপর নেমে আসছে ভয়ংকর বিভীষিকা। গুম, খুন, হামলা, মামলায় জনজীবন অতিষ্ঠ। গণমাধ্যমের স্বাধীনত ও মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের নামে সাইবার নিরাপত্ত নামক কালো আইন বলবত রেখেছে। অসংখ্য মানুষ আজ গণবিরোধী আইনের ভুক্তভোগী। শ্রমজীবী মানুষের ন্যূনতম মৌলিক অধিকারটুকু হরণের জন্য সংসদে অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিল ২০২৩ উত্থাপন করে।
দেশের শিক্ষাঙ্গনের পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন ছাত্র জোটের নেতারা। তারা বলেন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা আজ বহুভাগে বিভক্ত। মানসম্মত সর্বজনীন, বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারছে না। ক্রমাগত বাড়ানো হচ্ছে শিক্ষা ব্যয়। শিক্ষার বেসরকারীকরণ, বাণিজ্যিকীকরণ ও শিক্ষা সংকোচন নীতি বেপরোয়া গতিতে এগিয়ে নিচ্ছে সরকার। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দলদাসে পরিণত হয়েছে। ফ্যাসিবাদী শাসন অব্যাহত রাখতেই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সন্ত্রাস-দখলদারত্ব কায়েম করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
এরকম পরিস্থিতিতে ছাত্র সমাজসহ সর্বস্তরের জনগণ ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন থেকে মুক্তি চাচ্ছে। বর্তমান ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের ভয়াবহতাকে রুখতে সর্বস্তরের মানুষের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম প্রয়োজন। আমরা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট ছাত্র-শিক্ষক-শ্রমিক-কৃষকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সংগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বান জানাই।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক নিশান, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের দপ্তর সম্পাদক এহতেশাম ইমন, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা ও বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের সভাপতি তাওফিকা পিয়া।
আল সাদী ভূঁইয়া/এমআরএম/জিকেএস