সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষা
প্রথমবার প্রিলিতেই অকৃতকার্য, দ্বিতীয়বার দেশসেরা নুসরাত
সহকারী জজ পদে ১৫তম বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষায় প্রিলিমিনারিতে অকৃতকার্য হয়েছিলেন নুসরাত জেরিন জেনি। এজন্য অনেকের কাছ থেকে শুনতে হয়েছিল কটু কথা। তারপরও দমে যাননি নুসরাত। ১৬তম বিজেএস পরীক্ষায় বাজিমাত করেছেন তিনি। মেধাতালিকায় প্রথম হয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগের এ ছাত্রী।
নুসরাত রাবির আইন বিভাগের ৪০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তার মাস্টার্স এখনো শেষ হয়নি। একই ব্যাচ থেকে আরও ৯ শিক্ষার্থী সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। এছাড়া ৩৯তম ব্যাচ থেকে পাঁচজন এবং অন্যান্য ব্যাচ থেকে ছয়জন ছয়জন উত্তীর্ণ হয়েছেন।
নুসরাত জেরিনের বাসা গাইবান্ধায়। বাবা এ কে এম আব্দুর নুর বাসুদেবপুর চন্দ্র কিশোর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ। মা শিরীন তাজ বেগম একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার এক বোন ও এক ভাই আছে। জেনির বাবা-মাও রাবির সাবেক শিক্ষার্থী।
আরও পড়ুন: রাবির এক ব্যাচ থেকেই ১০ শিক্ষার্থীর বাজিমাত, মোট উত্তীর্ণ ২১
নুসরাত ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন বগুড়ার বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে। তারপর সরকারি আজিজুল হক কলেজে ভর্তি হন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে চান্স পান। তিনি অনার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে উত্তীর্ণ হোন।
দেশসেরা হওয়ার অনুভূতি সম্পর্কে নুসরাত জেরিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘অবশ্যই অনেক বেশি ভালো লাগছে। পড়ালেখা চলাকালীন আমি সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি, এটা আমার জন্য অনেক বেশি গর্বের। এজন্য অনেক বেশি কৃতজ্ঞ সৃষ্টিকর্তার প্রতি। এ সফলতার পেছনে আমার মা-বাবা, শিক্ষকদের অবদান আছেন। তাদের প্রতিও আমি চিরকৃতজ্ঞ।’
তিনি বলেন, ‘আমি প্রথমবার ১৫তম বিজেএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারিনি। ফলে অনেকের কাছ থেকে অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছে আমাকে। এগুলোই ছিল আমার ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি।’
প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে রাবির এ শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমার যখন যেমন পড়ালেখার প্রয়োজন হতো, আমি তখন সেভাবেই পড়তাম। তবে নির্দিষ্ট সময় নিয়ে ধারাবাহিকভাবে পড়েছি এমনটা না। এমনও হয়েছে যে, সারাদিনে একদমই পড়ালেখা করা হইনি। আবার এমনও হয়েছে, সারাদিন পড়াশোনা করেছি। বিজেএস পরীক্ষায় আইনের ওপর ৬০০ নম্বর ছিল। সেখানে আমি খুব ভালো করেছি। আগে থেকেই ডিপার্টমেন্টের পড়া আয়ত্তে থাকায় সেখানে বেশি জোর দিতে হয়নি। সাধারণ জ্ঞানে সময় একটু বেশি দিতে হয়েছে।’
আরও পড়ুন: সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হলেন নুসরাত
বিজেএস পরীক্ষায় ভালো করতে হলে কীভাবে পড়তে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পড়াশোনা কতটুকু করবেন সেদিকে লক্ষ্য না দিয়ে আসলে কী পড়তে চাচ্ছেন সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। যে বিষয়টি পড়বেন সেটি মনোযোগ সহকারে বুঝেশুনে পড়তে হবে।’
নুসরাত জেরিন বলেন, ‘বিজেএস পরীক্ষায় আইন সম্পর্কিত বিষয় একটা শক্তিশালী জোন। ফলে আইনের বিষয়গুলোর ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কেউ চাইলে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান এবং বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিভাগগুলোতে একটু সন্তোষজনক নম্বর তুলেও আইনের বিষয়গুলোতে বেশি নম্বর তুলে বিজেএস পরীক্ষায় ভালো করতে পারেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কারণ বিজেএস পরীক্ষায় ‘রিটেন’ অনেক বড় একটা ফ্যাক্ট।’
বিচারক হিসেব আপনার কর্তব্য কী, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বিচারক অনেক মর্যাদার একটা আসন। এটির সঙ্গে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, বিশ্বাস জড়িত। সর্বোচ্চ সৎ থেকে যেন ভালো কিছু করে যেতে পারি। সেজন্য আমার যা কিছু করা দরকার আমি ততটুকুই করে যাবো। আল্লাহ আমাকে যে সম্মান দিয়েছেন সেই সম্মান রেখে যেন আমি চলতে পারে সেজন্য আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. হাসিবুল আলম প্রধান জাগো নিউজকে বলেন, ‘টানা চতুর্থবারের মতো এবারও বিজেএস পরীক্ষায় আমার শিক্ষার্থী প্রথম স্থান অর্জন করায় বিভাগের শিক্ষক হিসেবে আমি গর্বিত। এক ব্যাচ থেকেই ১০ জনের এমন সাফল্যে আমরা আনন্দিত। আমরা বিশ্বাস করি, যারা উত্তীর্ণ হয়েছে তারা তাদের সর্বোচ্চ মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে নিষ্পেষিত মানুষকে সঠিক বিচার পেতে সর্বাত্মক ভূমিকা পালন করবে।’
এসআর/এএসএম