বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
চার বছর ধরে উদ্বোধনেই আটকে আছে ক্যাম্পাস রেডিওর কার্যক্রম
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের প্রায় চার বছর পেরিয়ে গেলেও থমকে আছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ২৪ লাখ টাকার ক্যাম্পাস রেডিওর কার্যক্রম। যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারা অনভিজ্ঞ। ফলে আলোর মুখ দেখেনি ক্যাম্পাস রেডিওর কার্যক্রম।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এটি চালুর কোনো আগ্রহ প্রকাশ করেনি। এভাবে দীর্ঘদিন পড়ে থাকার কারণে বিকল হচ্ছে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। আর ক্যাম্পাস রেডিওর কোনো কার্যক্রম না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২০ আগস্ট প্রায় সাড়ে ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থাপিত হয় এই রেডিও স্টেশন। এরপর সম্পূর্ণ সচল অবস্থায় হস্তান্তর করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ প্রচারের মধ্য দিয়ে পরীক্ষামূলক সম্প্রচারের উদ্বোধন ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত রেডিওর কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে ধুলাবালি আর ময়লা জমে কার্যক্ষমতা হারিয়েছে কিছু যন্ত্রাংশ।
সরেজমিনে দেখা যায়, ক্যাম্পাস রেডিওর কার্যক্রম না থাকলেও প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় তিনটি রুম দখল করে বসে আছে এটি। যাদের ক্যাম্পাস রেডিওর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে তারা কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। যার দরুন তা শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
এদিকে, প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের ভাষ্যমতে, পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় ক্যাম্পাস রেডিওর কার্যক্রম চালাতে তারা সক্ষম হননি। এছাড়া রেডিও চালানোর জন্য যে টেকনিশিয়ান দরকার, তা তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, বেরোবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদ ক্যাম্পাসে যোগদানের পর বারবার একটি কথা বলে থাকেন, যেখানেই শিক্ষার্থীদের স্বার্থ জড়িতে থাকবে সেখানেই তিনি গুরুত্ব সহকারে দেখবেন। কিন্ত উপাচার্যের দুই বছর পেরিয়ে গেলেও ক্যাম্পাস রেডিওর কার্যক্রম কেন উদ্বোধনের মধ্যই সীমাবদ্ধ আছে যেখানে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ নিহিত। পর্যাপ্ত জনশক্তি নেই নাকি এটা তাদের অদক্ষতা?
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বন্ধ থাকা এই রেডিও চালু হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ক্যাম্পাস রেডিও উপাচার্য ড. কলিম উল্লাহর আমলে কোনো পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা ছাড়াই স্থাপন করা হয়েছে। যে বিষয়ে যারা অভিজ্ঞ তাদের সে বিষয় সম্পর্কিত দায়িত্ব দিলে স্টেশনটি চালু হওয়ার সম্ভাবনা থাকতো। এই ক্যাম্পাস রেডিও সাংবাদিকতা বিভাগের অধীনে পরিচালিত হলে শিক্ষার্থীদের সাংবাদিকতার দক্ষতার উন্নয়ন ঘটানো যেতো। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে ইতিবাচক ভাবমূর্তিও অর্জন করা সম্ভব হতো।
ক্যাম্পাস রেডিওর নির্বাহী পরিচালক বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নিতাই কুমার ঘোষ জাগো নিউজকে বলেন, কোভিডের সময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়। ফলে পুরোপুরিভাবে এটার কার্যক্রম বন্ধ থাকে। দীর্ঘদিন চালু না করার ফলে অনেক যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়েছিল। আমি নিজের টাকায় সেগুলো ঠিক করি। এছাড়া পর্যাপ্ত লোকবল নেই, ফলে আমি ক্লাস নেবো না ক্যাম্পাস রেডিও নিয়ে পড়ে থাকবো? চেষ্টা করছি যাতে খুব শিগগির এটি শিক্ষার্থীদের কাছে সমর্পণ করতে পারি।
এমআরআর/জেআইএম