ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ক্যাম্পাস

শেকৃবিতে সেমিনারে বক্তারা

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন ঘটাতে পারে ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক | শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় | প্রকাশিত: ০৪:৪০ পিএম, ২২ জুলাই ২০২৩

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন ঘটাতে পারে ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই চাষ। ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই একটি পরিবেশবান্ধব মাছি। এ মাছি আমাদের চারপাশের জৈব আবর্জনা খেয়ে বড় হয়ে থাকে। ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই থেকে তৈরি হওয়া প্যারোট পোকায় একদিকে যেমন মাছ-মুরগির খাবারের জোগান আসবে, অন্যদিকে অল্প খরচে প্রাকৃতিকভাবে এ পোকা উৎপাদন করে আর্থিকভাবেও লাভবান হওয়া যাবে। একই সঙ্গে শহরাঞ্চলের বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশের সুরক্ষাও হবে।

শনিবার (২২ জুলাই) শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) এএসভিএম অনুষদের সেমিনার রুমে ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাইয়ের লার্ভা উৎপাদন এবং প্রোটিনের উৎস হিসেবে মাছ-মুরগির খাবার হিসেবে লার্ভার ব্যবহার’ প্রকল্প নিয়ে সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

এ প্রকল্পটি নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং ওয়াগেনিয়েন ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড রিসার্চের কারিগরি সহায়তায় বাস্তবায়ন করেছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে রয়েছেন প্রধান সমন্বয়ক ও প্রাণী পুষ্টিবিদ অধ্যাপক ড. মো. মোফাজ্জল হোসাইন, কন্ট্রাক্ট ম্যানেজার ও পাবলিক হেলথ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. কে বি এম সাইফুল ইসলাম এবং কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. মো. শাখাওয়াত হোসাইন।

সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন- শেকৃবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. অলোক কুমার পাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিনিধি পেড্রো এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ফিড মিলের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ ব্যাক্তিরা।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, রাজধানীতে কাঁচাবাজারে প্রতিদিন যে বর্জ্য তৈরি হয় তার প্রায় ৭০ ভাগই খাদ্য সম্পর্কিত ও কৃষিপণ্যজাত। এছাড়া শহর এলাকায় বাসা-বাড়ি ও হোটেল থেকেও জৈব বর্জ্য তৈরি হয়। এসব বর্জ্যের একটি অংশ রাস্তার ওপর বা রাস্তার পাশে অননুমোদিতভাবে গড়ে ওঠা ডাস্টবিনে পড়ে থাকে। শুধু ঢাকা শহরেই প্রতিদিন প্রায় ৬-৭ হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে। আবার বিভিন্ন তথ্যমতে তা প্রায় ১১ হাজার টন। এসব বর্জ্যের ৭০ ভাগেরও বেশি জৈব বর্জ্য।

তারা বলেন, ঢাকার এসব বর্জ্যের প্রায় অর্ধেকই ফেলা হচ্ছে ল্যান্ডফিলে, বাকিটা থাকছে ব্যবস্থাপনার বাইরে। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটিতে কোনো ল্যান্ডফিল না থাকায় সেসব এলাকার বর্জ্য যাচ্ছে সড়কের দুপাশে, নদী ও খালে। এসব জৈব বর্জ্যের প্রায় ৮০ ভাগই পুনঃচক্রায়নযোগ্য। এসব বর্জ্য থেকে জ্বালানি, বায়োগ্যাস, বিদ্যুৎ, জৈব সার ও মাছ-মুরগির খাবার তৈরি করা সম্ভব। অথচ কাঁচাবাজারে এসব বর্জ্যের তেমন কোনো ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে না।

top.jpg

বক্তারা বলেন, বর্তমানে মাছ-মুরগির খাদ্যের দাম অত্যাধিক বেড়েছে। ফলে বাজারে মাছ-মুরগির দামও বাড়ছে। এ অবস্থায় জৈব বর্জ্য ব্যবহার করে প্রাকৃতিকভাবে মাছ-মুরগির খাবার তৈরি করা যেতে পারে। বর্তমানে মাছ-মুরগির খাদ্যের চাহিদা মেটাতে আমদানি পণ্যে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। জৈব বর্জ্য থেকে লার্ভা উৎপন্ন করে এবং এ লার্ভা দিয়ে মুরগির খাদ্য তৈরি করে সয়াবিন মিলের ওপর নির্ভরতা কমানো সম্ভব। এতে খাদ্য নিরাপত্তা শক্তিশালী হবে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সহজতর হবে, মানুষের আয় বাড়বে এবং মাছ-মুরগির খাদ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাইয়ের লার্ভা একটি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য, যা মাছ-মুরগির রেশনে ব্যবহার করা যেতে পারে। এদেশে এখনো পর্যন্ত মাছির লার্ভা উৎপাদন করে তা দিয়ে মুরগির রেশন তৈরির জন্য বাণিজ্যিক পর্যায়ে কোনো ফিড মিল চালু হয়নি। এ বিষয়ে উদ্যোক্তাসহ সবারই এগিয়ে আসা উচিত বলে মত দেন বক্তারা।

সেমিনারে শেকৃবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, পৃথিবীতে কার্বনের দূষণ যেভাবে বাড়ছে তাতে টিকে থাকা কঠিন। কার্বন দূষণের কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রাও বাড়ছে, যা আমরা গত কয়েক বছর ধরে উপলব্ধি করছি। এ প্রকল্পের মাধ্যমে জৈব বর্জ্য ব্যবহার করে দূষণ কমিয়ে আনা সম্ভব, যা পৃথিবীকে আরও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতেও ভূমিকা রাখবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে যত কম দামে নিরাপদ মাছ-মাংসের খাবার উৎপাদন করা যায় তা বের করে আনতে হবে।

এএসভিএম অনুষদের ডিন অধ্যাপক কেবিএম সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে বেশ কিছুদিন ধরেই ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই কেনাবেচা হচ্ছে এবং উৎপাদিত লার্ভা মাছ-মুরগির খাবার হিসেবেও ব্যবহার হচ্ছে। আমরা পাইলট প্রজেক্টের মাধ্যমে বর্জ্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাইয়ের লার্ভা উৎপাদন এবং মাছ-মুরগির খাবার হিসেবে এর ব্যবহার বিজ্ঞানসম্মতভাবে যাচাই করেছি। এখন মুরগির লিটার রিসাইকেল করে ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই চাষ করা যাবে কি না তা নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা প্রয়োজন।

তাসনিম আহমেদ তানিম/এমকেআর/এমএস/এমআইএইচএস